E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়া হাসপাতালে ডাক্তার সংকট 

চারজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে দুই লক্ষাধিক জনগণের সেবা

২০১৮ নভেম্বর ০২ ১৫:২৭:৩৮
চারজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে দুই লক্ষাধিক জনগণের সেবা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়া ৫০শয্যার উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, চিকিৎসকদের দলাদলি আর সার্টিফিকেট বানিজ্যর কারণে ভেঙ্গে পরেছে পাঁচ লক্ষাধিক জনগনের স্বাস্থ্য সেবা। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকটের কারণে দুই লাখের বেশী জনসংখ্যা অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার পশ্চিমাংশ, উজিরপুরের উপজেলার উত্তরাংশ ও কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্বাংশের অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক জনগন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এলাকার জনসাধারনের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা এলাকায় ৩১শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিা করা হয়। ২০০৪ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সেটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়।

সূত্র মতে, উপজেলার ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের আওতায় ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (সাব সেন্টার)সহ চিকিৎসকদের ২১টি পদ রয়েছে। এসকল পদের মধ্যে ১৯ জন চিকিৎসকের পদ এক যুগেরও বেশী সময় যাবত শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪জন।

২০১১ সালে ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. আবু বক্কর সিদ্দিক ও ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জুনিয়ার কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. সোমা হালদার যোগদান করে এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বাসার ঠিকানায় একাধিকবার কর্মস্থলে আসার জন্য পত্র দেয়া হলেও ওই পত্র বাসার কেউ গ্রহণ করেনি বলে জানান ইউএইচএএফপিও ডা. মো. আলতাফ হোসেন।

একাধিক সূত্র মতে, হাসপাতালে কর্মরত স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলির কারনেও কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। একজন চিকিৎসকের অধীনে ইমারজেন্সিতে ভর্তিকৃত রোগী হাসপাতালের বেডে বিনা চিকিৎসায় পরে থাকলেও অন্য চিকিৎসক ওই রোগীকে দেখেন না। তাদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ আর কোন্দলের কারণে চিকিৎসাযোগ্য রোগীদেরও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি না করে জেলা বা ঢাকায় রেফার করছেন চিকিৎসকেরা। ফলে অসহায় ও দরিদ্র রোগিদের অর্থ সংকটে পড়তে হয় মহা বিপদে। এছাড়াও রয়েছে অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদানের অভিযোগ।

থানার নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, অনেকেই মারামারির ঘটনায় গুরুতর জখমের চিহ্ন না থাকলেও তাৎক্ষনিক রোগী নিয়ে থানায় মামলা করতে এলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে তাকে চিকিৎসা নিতে পরমর্শ প্রদানের পর আইনী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে ওই রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরবর্তিতে ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬ এর মত গুরুতর জখমী ধারার সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় বা আদালতে মামলা করছেন।

অপরদিকে চিকিৎসকদের ম্যানেজ করতে না পারলে গুরুতর জখমী রোগীদেরও “নরমাল” সার্টিফিকেটে বানিজ্য চলে আসছে হাসপাতালে। ফলে এলাকায় মিথ্যা মামলায় পরে হয়রানীর সংখ্যা বাড়ছে। থানায় রেকর্ড করা মামলার মধ্যে প্রায় অর্ধেক সার্টিফিকেটের কারণে মামলা নিতে হয় তাদের। উদাহরণ হিসেবে ওই সূত্র জানায়, সম্প্রতি দা দিয়ে কোপানোর ঘটনায় ১৪টি সেলাই দিয়ে করা রোগীর চিকিৎসা শেষে ওই রোগী টাকা না দেয়ায় তাকে “সাধারণ” সার্টিফিকেট প্রদানের পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাতে আপত্তি জানালে সেটি পুনরায় আবার ইস্যু করবেন বলে থানাকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল প্রধান ডা. আলতাফ হোসেন।

হাসপাতালে ডাক্তারদের শূণ্য পদের মধ্যে রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (আর্থপেডিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক; শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম/যৌণ)। ডাক্তার সংকটের কারনে হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপাতালের ইউএইচএএফপিও ডা. মো. আলতাফ হোসেন চিকিৎসক শুণ্যতা প্রকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় এমপি ও ডাইরেক্টরকে জানানো হয়েছে। ডাইরেক্টর একাধিকবার এখানে চিকিৎসক নিয়োগের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোন নিয়োগ দেন নি। অন্যদিকে উর্ধতন কর্তপক্ষে নির্দেশে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জ্যোতি রানী ও টেন্টাল চিকিৎসক মনন কুমার কর্মস্থলে না আসায় তাদের শোকজ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেতন বন্ধের জন্য হিসাব রক্ষণ অফিসে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।

চিকিৎসকদের মধ্যে কোন দলাদলি নেই জানিয়ে সার্টিফিকেট বানিজ্যর অভিযোগ অস্বিকার করে তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক রোগী দেখলে সার্টিফিকেট দেয়ার সময় ওই চিকিৎসক বোর্ডে অনুপস্থিত থাকলে সেখানে রোগী ভর্তির রিপোর্ট দেখে সার্টিফিকেট প্রদান করায় অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test