E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অা.লীগ নেতা 'লাঙ্গল' প্রতীকে ভোট চাওয়ায় সীতাকুন্ডে তুমুল বিতর্ক

২০১৮ নভেম্বর ০৪ ২২:২৬:২৫
অা.লীগ নেতা 'লাঙ্গল' প্রতীকে ভোট চাওয়ায় সীতাকুন্ডে তুমুল বিতর্ক

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : অাওয়ামীলীগ নেতা নিজ দলের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাবু করতে এবার ভোট চাইলেন জাতীয় পার্টির 'লাঙ্গল' প্রতীকের পক্ষে। অার তা নিয়ে সেই নেতার বিপক্ষে তীব্র অালোচনা- সমালোচনা চলছে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম - ৪ ( সীতাকুন্ড, পাহাড়তলী ও খুলশী একাংশ) অাসনে। সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়া এ বিতর্কের জন্ম দিলেন। গত ২ অক্টোবর রাতে এই নেতা সীতাকুন্ডস্থ গোলাবাড়ীয়ায় তার নিজ বাস ভবনে এক বক্তৃতায় প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির নেতার জন্য ভোট চান। তার বক্তৃতার অংশের ভিডিও ক্লিপটি এখন সর্বত্র হাস্যরস ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, সম্প্রতি সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়া তার নিজ বাড়ীতে 'মহাজোটের নেতৃবৃন্দের সাথে উপজেলা অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়া মহোদয়ের মতবিনিময় শীর্ষক' এক সভা অায়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব দিদারুল কবীর দিদার।

জাতীয় পার্টির নেতাকে প্রধান অতিথি করে সভার অায়োজন করায় স্থানীয় ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায়। সেই সমালোচনা প্রকট অাকার ধারণ করে তখন যখন এই সভা থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া ও তার পক্ষে ভোট চাওয়া হয়। প্রকাশ্যে কেউ এ ব্যাপারে মুখ না খুললেও অনেককে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ভিডিওক্লিপে দেখা গেছে, মতবিনিময় সভায় বাকের ভুঁইয়া বলেন, 'প্রয়োজনে অামরা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাইব'। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেশ করেন, 'অাপনারা লাঙ্গলে ভোট দিতে রাজী অাছেন কিনা'। অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়া এসময় নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করলেও জাতীয় পার্টির নেতার প্রশংসা করেন।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক ছাত্রলীগ নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বাকের সাহেবের এ বক্তৃতা শুনে মনে হল তার কান্ডজ্ঞান লুপ্ত হয়েছে। দলকে ভালবাসলে কেউ এমন বক্তব্য রাখতে পারেনা। স্থানীয় এক পৌর কাউন্সিলর বলেন, বাকের সাহেব নিজে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি চান তিনি মনোনয়ন না পেলে মনোনয়ন দলের বাইরে চলে যাক। তাহলে দলে তার নেতৃত্ব ধরে রাখতে সুবিধা হবে।

রাজনৈতিক ভাবে বাকের ভুইয়ার প্রতিপক্ষ এমন নেতাদের মধ্যেও সমালোচনা চলছে। মহিলা অাওয়ামীলীগের এক নেত্রী বলেন, বাকের ভুঁইয়া এক সময় এমপি গ্রুপ করত। পরে অাখের গোছানোর জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপে যোগ দেন। তবে সে গ্রুপেও তিনি বেশীদিন ভাল সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। তার প্রমাণ তিনি প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির নেতার জন্য ভোট চাইলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীন নেতা বাকের ভুঁইয়াকে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করে বলেন, বাকের ভুঁইয়া বুঝে গেছেন তিনি নৌকার মাঝি হয়ে সাগর পাড়ি দিতে ব্যর্থ। তাই লাঙ্গল দিয়ে জমিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বাকের ভুঁইয়া সাহেব জাতীয় পার্টির নেতার জন্য ভোট চাইলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি এখন মহাজোটে নাই। নির্বাচনকালীন সময়ে তারা মহাজোটে অাসবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। তাছাড়া মহাজোটে অাসলেও মনোনয়ন কী অাওয়ামীলীগ পাবে নাকি জাতীয় পার্টির প্রার্থী পাবে তা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। বাকের ভুইয়া জাতীয় পার্টির জন্য ভোট চেয়ে দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছেন। দলীয় গঠণতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হেসে হেসে এ প্রতিবেদককে বলেন, বাকের ভুঁইয়া নিজে মনোনয়নের দাবিদার। যিনি পঁচিশ বছর সাধারন সম্পাদক থাকার পরও সাধারন সম্পাদক থেকে সভাপতি হতে পারল না তিনি কীভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী হন? স্থানীয় উপজেলা অাওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতাও তার নেই। এমপি হওয়াতো অনেক দূরের কথা।

অন্য অারেক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বাকের ভুঁইয়া পঁচিশ বছর নানা কৌশলে সাধারন সম্পাদকের পদ অাঁকড়ে অাছেন সত্য। তবে দলের জন্য তিনি কখনো দায়িত্ব পালনে ত্যাগের মনোভাব দেখান নি। তার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালীন প্রথম সভাপতি ছিলেন মোস্তফা কামাল চৌধুরী। তখন দলীয় সকল ব্যায় মোস্তফা কামাল চৌধুরী বহন করতেন। মোস্তফা কামাল চৌধুরী সভাপতি থাকাকালীন সীতাকুন্ড কলেজ রোডে দলীয় কার্যালয় ছিল। যার ব্যায়ভার বহন করতেন মোস্তফা কামাল চৌধুরী। কিন্তু মোস্তফা কামাল চৌধুরী দলীয় গঠণতন্ত্র মেনে তিন বছরের মাথায় পদত্যাগ করলে বাকের ভুঁইয়া সেই কার্যালয়ের ব্যায়ভার বহন করতে ব্যর্থ হন। বর্তমানে টানা দশ বছর অাওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগের কোন কার্যালয় নেই। পরবর্তীতে প্রয়াত সাংসদ এবিএম অাবুল কাশেম সভাপতির দায়িত্ব নিলে সকল অার্থিক দায়িত্ব তিনি বহন করেন।

তিনি অারো বলেন, বাকের ভুঁইয়া দীর্ঘ দিন দায়িত্বে অাছেন সত্যি, কিন্তু কখনো দলীয় কোন নেতা কর্মীর কোন উপকারে লেগেছেন এমন কোন নজির নেই। গত পঁচিশ বছরে তিনি দলের নেতা কর্মীদের বেকারত্ব দূর করতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি। দল টানা দশ বছর ক্ষমতায়। কোন নেতা কর্মীকে কোথাও নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, দলীয় কমিটি করতে গিয়ে, বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি করতে গিয়ে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেম্বার মনোনয়ন দিতে গিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অনেক অভিযোগ অাছে তার বিরুদ্ধে। অার এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার ঘনিষ্ট নেতা কর্মীরা তাকে ছেড়ে অন্যদের বলয়ে গেছে।

একসময় বাকের ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক ভাবে তার প্রতিপক্ষ এমন এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় অাওয়ামীলীগে অন্তর্কোন্দলের জন্য বাকের ভুঁইয়া দায়ী। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি মোস্তফা কামাল চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ এবিএম অাবুল কাশেমের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে নিজ স্বার্থ হাতিয়ে নিতে তৎপর হন। বর্তমান সাংসদ দিদারুল অালম ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমঅাল মামুন- এর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তার জন্যও বাকের ভুঁইয়া কম দায়ী নয়।

এই নেতা অারো বলেন, বাকের ভুঁইয়া নিজ স্বার্থ ঠিক রাখতে গিয়ে দলীয় রাজনীতিকে নোংরা করেছেন। যার ফলে বর্তমানে সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগের অালাদা অালাদা কর্মসূচীতে অামরা অালাদা অালাদা সভাপতি দেখি। এক কমিটিতে তিনজন সভাপতি হয় কী করে এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বাকের ভুঁইয়াকে নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। কিছুদিন পূর্বে সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহীনূর অাক্তার বিউটির গায়ে প্রকাশ্যে হাত তুলেও তিনি স্থানীয় জনগণের কাছে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।

তবে যাকে নিয়ে এতো সমালোচনা সেই অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়াকে মতামতের জন্য ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত সীতাকুন্ড উপজেলা অাওয়ামীলীগে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কয়েকটি গ্রুপ অালাদা অালাদা রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এদেরমধ্যে বর্তমান সাংসদ অালহাজ্ব দিদারুল অালম, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম অাল মামুন, অাবদুল্লাহ অাল বাকের ভুঁইয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া অন্তর্কোন্দলের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা মোস্তফা কামাল চৌধুরী মনোনয়ন লড়াইয়ে এগিয়ে অাছেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test