E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাট- ১

শেখ হেলাল এগিয়ে, আ. লীগের শক্ত ঘাঁটি দখল নিতে চায় বিএনপি

২০১৮ নভেম্বর ০৫ ১৪:৫২:২১
শেখ হেলাল এগিয়ে, আ. লীগের শক্ত ঘাঁটি দখল নিতে চায় বিএনপি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলার উত্তরের জনপদ ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট- ১ সংসদীয় আসন। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়কে মধুমতি নদী বাগেরহাটের চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলাকে পৃথক করলেও যুগ যুগ ধরে গোপালগঞ্জের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাগেরহাটের উত্তরের এই তিন উপজেলায় বহমান। স্বাধীনতার পূর্ব-পরে অধিকাংশ জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনেই এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে। তবে, ৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক এমপি শেখ মুজিবুর রহমান  তিব্র প্রতিদন্ধিতার পর হেরে যান। এবার তিনি বিজয়ী হতে আগেভাগে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি এই চায় আসনটিতে জয়ী হতে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি বিরোধীদের জন্য দুর্ভেদ্য হয়ে থাকবে। বিগত ৯৬ সালের নির্বাচনে অন্য দুটি আসনের সাথে এই আসন থেকেও বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের পর তিঁনি এই আসনটি ছেড়ে দিলে সপ্তম থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা চারটি মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এলাকার সাধারণ মানুষ এই আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরই দেখতে চান সব সময়, এমনটা মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অধিকাংশ ভোটারা। তবে জাতীয় রাজনীতির পেক্ষাপটে বিএনপি এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখল মুক্ত করতে মরিয়া। স্থানীয় বিএনপি নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের ভালো পরিবেশ থাকলে আসনটি তাদের দখলে আসবে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট -১ আসন থেকে আওয়াম লীগের প্রার্থী এম.এ খায়ের নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের এম.এ খায়ের দ্বিতীয় বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা, মোজাম্মেল হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। একই বছরের ১২ জুন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে তার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন উপ-নির্বাচনে বাগেরহাট -১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে বাগেরহাটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট - ১ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এমপি নির্বাচিত হন। পরে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে শেখ হেলাল উদ্দিন দেশে ফিরে উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর আলোচিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দীন এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।

বাগেরহাট- ১ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটে মূল বিভাজন এনে দেয় চিতলমারী উপজেলার সংখ্যালঘু ভোট। তাই স্থানীয়রা চিতলমারী উপজেলাকে বলে থাকেন ‘আওয়ামী লীগের ভোটব্যাঙ্ক’। এই আসনের বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় এই দুই দলের ভোটের ব্যবধান থাকে প্রায় সমান-সমান। ফলে বরাবরই জয়ের নিয়ামক হয়ে ওঠেন চিতলমারীর ভোটাররা। আর এখানকার সিংহভাগ ভোটই যায় আওয়ামী লীগের নৌকায়। তাই বিরোধীদের এবারের বিশেষ মনোযোগ যে চিতলমারী উপজেলার ভোটারদের দিকেই থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন এই আসনে একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বর্তমান এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন দলে ও দলের বাইরে এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতা। এলাকার সার্বিক উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থেই শুধু নয়, বাগেরহাট জেলা জুড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হেলাল উদ্দিন এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক এমপি শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও প্রধান প্রকৌশলী নৌ মাসুদ রানা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, রাজধানীর ধানমি- থানা বিএনপির সভাপতি শেখ রবিউল ইসলাম, কেন্দ্রীয় জাসাস নেতা মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপন ও মহিলা দল নেত্রী রুনা গাজী। বর্তমান প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেও বিএনপি নেতা মাসুদ রানা একাধিক বার শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েও এই সংসদীয় এলাকায় দলীয় কর্মসূচী ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন ও জয়ের ব্যাপাবে আশাবাদী। বড় এই দুই দলের বাইরে এই আসনে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বা বাম জোটের কোন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারনা নেই।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test