E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবন পিকনিকে যেতে হবে, অন্যথায় এসএসসি পরিক্ষার ফরম পুরণ হবে না!

২০১৮ নভেম্বর ০৭ ২২:৪৪:৩২
সুন্দরবন পিকনিকে যেতে হবে, অন্যথায় এসএসসি পরিক্ষার ফরম পুরণ হবে না!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সুন্দরবন পিকনিকে যেতে হবে, অন্যথায় এসএসসি পরিক্ষার ফরম পুরণ হবে না ! ঘটনা সাংবাদিকদের জানালে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এমন বিস্ময়কর শর্ত জুড়ে ফরম পুরণের নির্দেশ দিয়েছে বরিশাল বোর্ডের অধীনে উপজেলা সদরের একমাত্র গার্লস স্কুল শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ে। 

ধার্যকৃত বোর্ড ফি’র অতিরিক্তি অর্থ আদায়, কোচিং এর নামে বাধ্যতামুলক নির্ধারিত ফি আদায়ের ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষের হুমকির কারণে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ।
ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছাত্রী, তাদের অভিবাক ও সভায় উপস্থিত একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, গত ৪ নভেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও এডহক কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশের এক অনুষ্ঠানে টেষ্ট পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফলাফল ঘোষণার ওই অনুষ্ঠানে ছাত্রী প্রতি ৫শ টাকা ফি নির্ধারণ করে সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামুলক ২৭ নভেম্বর সুন্দরবন গিয়ে পিকনিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। পিকনিকে যারা যাবে না, তাদের ফরম পুরণ করা হবে না জানিয়ে; এই কথা কোন সাংবাদিককে জানালে ওই ছাত্রীকে এসএসসি’র পরীক্ষার হলে দেখে নেয়া হবে বলেও সাশিয়ে দেয়া হয় ছাত্রীদের। ঘটনার পর বিষয়টি জানাজানি হলে টাউন অফ দ্যা টকে পরিণত হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই বিস্ময়কর শর্ত।

নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাধ্যতামুলক শর্তের কথা শুনে তারা হতবাক হয়েছেন। এক অভিভাবক বলেন, তার দুই মেয়ে উল্লেখিত স্কুলের পৃথক শ্রেণিতে লেখা পড়া করছে। ২৭ তারিখ পিকনিকের তারিখ, পরদিন ২৮ তারিখ অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার কথা জানানো হয়েছে। দুই মেয়ের পরীক্ষা, কোচিং ফি, পিকনিক ফি’র জন্য এত টাকা তার জন্য জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।

অভিভাবকরা জানান, গত বছর এই স্কুলের পিকনিকে গিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বিভিন্ন ছাত্রীদের সাথে আপত্তি জনক আচরণ করে তার সাথে ছবি তুলতে বাধ্য করেন। তাই তার সাথে তাদের মেয়েরা পিকনিকে যেতে অনিহা প্রকাশ করে আসছে। পিকনিকে গেলে এক শংকা আর না গেলে এসএসি’র পরীক্ষার হলে তাদের মেয়েদের সাথে না জানি কি অঘটন ঘটবে তা ভেবে চরম আশংকা আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ এর ফোনে একাধিকার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করে পরে ফোন বন্ধ করে রাখেন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু বাড়ৈ জানান, ৭ নভেম্বর থেকে তাদের ফরম ফিরাপ শুরু হয়েছে, চলবে ১২তারিখ পর্যন্ত। ফি ধার্যর ব্যাপারে তিনি বলেন বোর্ড নির্ধারিত বিজ্ঞান বিভাগে ১৭৪৫ টাকা ও মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে ১৬৫৫টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রথম দিন বুধবার জন শিক্ষার্থী ফরম পুরণ করেছে। বাধ্যতামুলক পিকনিক ফি ও কোচিং ফি’র ব্যাপারে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন তিনি নিজে এর ঘোর বিরোধী থাকা সত্বেও তার কিছু করার নেই। শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের ব্যাপারে গত বছর পিকনিকে ঘটে যাওয়া আপত্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তার ব্যাপারে মন্তব্য করা যুক্তিসংগত নয়। প্রতি মাসে ১৫০টাকা করে ছয় বিষয়ে দুই মাস কোচিং এর জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ১৮০০টাকা নির্ধারন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ফোনে জানান, ফলাফল বিতরণে সময় তার উপস্থিতির মধ্যে বাধ্যতামুলক পিকনিকে যাওয়ার কথা কেউ বলেনি। পরে বলেছে কিনা তা তার জানা নেই। বোর্ড নির্ধারিত ফি’র সাথে সরকারী নিয়ম অনুযায়ি প্রতি বিষয়ে কোচিং এর জন্য ১শ ৫০টাকা ও কেন্দ্র ফি বাবাদ ১শ টাকা নিতে পারবে স্কুল। এর বেশী নয়। গত বছরে পিকনিকে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আপত্তি জনক আচরণ ও তার সাথে ছবি তুলতে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এরকম যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে যেন তার সাথে তিনি যোগাযোগ করেন।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এমন কোন সিদ্ধান্তর ব্যাপারে তার সাথে কেউ আলোচনাও করেনি। বোর্ড ফি নিয়ে ফরম পুরণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এক টাকাও বেশী নেয়া হবে না।

সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্যেশ্যে ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস আরও বলেন, অন্তত ৫বছর একজন শিক্ষার্থী একটি স্কুলে পড়লে তার ভাল রেজাল্ট করতে সকল শিক্ষকদের এমনিতেই ওই শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা করা উচিত। এখানে বানিজ্যিক মনোভাব পরিহার করা উচিত। ওই শিক্ষার্থীর ভাল ফলাফলে স্কুলেরও সুনাম হয়। তাছাড়া এমনতো নয়, যে সরকার ওই দুই-তিন মাসের জন্য শিক্ষকদের-কোন বেতন দেয় না। সকল অভিযোগের ব্যাপারে তনি পদক্ষেপ নেবেন জানিয়ে বলেন, কোন পিকনিকে যাওয়া হবে না।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test