E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

স্কুলছাত্র হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

২০১৮ নভেম্বর ১২ ১৫:৩৩:০৮
স্কুলছাত্র হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দ্বিতীয় শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী এক জানকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম অশোক বিশ্বাস ওরফে টুপাল (৩৯) । তিনি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন রাড়িপাড়া গ্রামের মহাদেব বিশ্বাসের ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ সকাল ৮টার দিকে বাবার সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয় রাড়িপাড়া গ্রামের হরেন বিশ্বাসের ছেলে ও রাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র তাপস বিশ্বাস(১১) । সন্ধানের একপর্যায়ে অশোক বিশ্বাস তার বাবাকে দেখিয়ে দেওয়ার নাম করে তারই পুকুর পাড়ের পূর্ব পাশে জালের প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে গলায় জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে তাপসকে হত্যা করে। পরে লাশ মাটি ও গাছপালা দিয়ে চাপা দিয়ে ঢোল কলমি গাছের নীচে চাপা দিয়ে চলে যায়।

গলিত মরদেহের দুর্গন্ধ হওয়ায় বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তাপসের কাকা রাজকুমার বিশ্বাসের একটি খাসি ছাগল জবাই করে ওই পুকুরে ফেলে দেয় অশোক বিশ্বাস। পরে ওই ছাগল জবাই করার কাজে ব্যবহৃত দা অশোকের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়ার সূত্র ধরে ২৬ মার্চ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ তাপসের গলিত লাশ উদ্ধার করে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করায় পাটকেলঘাটা থানার উপপরিদর্শক কাজী শহীদুজ্জামান বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অশোক বিশ্বাস, তার ভাই গোপাল বিশ্ব্সা ও প্রতিবেশি গুরুপদ বিশ্বাসের ছেলে ভারতীয় নাগরিক অরুন বিশ্বাস হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ অশোক বিশ্বাস ও গোপাল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পাটকেলঘাটা থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ২০০৭ সালের ১৭ মে অশোক বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিভযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী অশোক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দোহতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ৩০২ ধারায় উপরোক্ত কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দেন। একই সাথে লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে ২০১ ধারায় দু’ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। হত্যাকাজে ব্যবহৃত আলামত যথাযথভাবে জব্দতালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা ও গ্রেফতারকৃত আসামী অশোক বিশ্বাসের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না করিয়ে দায়রসারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপরিদর্শক হুমায়ুন কবীরকে ভৎসনা করেন আদালত। এ সময় আসামী কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

রায় শুনে আসামী অশোক বিশ্বাস ও তার বোন সুমিত্রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশোক নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। আদালতে উপস্থিত নিহত তাপস বিশ্বাসের বাবা হরেন বিশ্বাস, বোন বন্ধনা সাহা, ছোট ভাই বাধন বিশ্বাস ও মাসিমা রীতা বিশ্বাস বলেন, এ রায়ে তারা খুশী। উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে বলে তারা আশাবাদি। আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২)। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test