E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাগেরহাট- ২

জয় ধরে রাখতে মরিয়া আ.লীগ, পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

২০১৮ নভেম্বর ১২ ১৭:১০:০৭
জয় ধরে রাখতে মরিয়া আ.লীগ, পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলা সদর ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট- ২ সংসদীয় আসন। কথিত রয়েছে বাগেরহাটে হযরত খানজাহান (র:) ও সিলেটে হযরত শাহজালাল (র:) পূণ্যভূমি থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে থাকে। ইতিপূর্বে এমনটি ঘটে আসছে। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট সদর আসনে বড় দুই দল থেকে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে ভোটার, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলছে। 

বাগেরহাট - ২ তথা বাগেরহাট সদর আসনে স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে এমপি নির্বাচতি হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর সাখাওয়াত আলী দারু। এরপর ১৯৭৯ সালে বিজয়ী হন বিএনপি’র প্রার্থী আ.স.ম মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান জাতীয় পার্টির শেখ আব্দুর রহমান। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আ.স.ম মস্তাফিজুর রহমান আবারও এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.স.ম মোস্তাফিজুর রহমান আবারও নির্বাচিত হন। একই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর সাখাওয়াত আলী দারু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এম.এ.এইচ সেলিম এমপি নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন মীর শওকাত আলী বাদশা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর আলোচিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মীর শওকাত আলী বাদশা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। এই আসনে প্রতিবারই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে তিব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। আসন্ন নির্বাচনেও এই দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে তিব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে বলে বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট -১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন, এমপি হেলালের ছেলে সারহান নাসের তন্ময়, সাবেক এমপি মীর সাখাওয়াত আলী দারু’র স্ত্রী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মিয় ফরিদা আক্তার বানু লুচি।

অন্যদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরর হলেন, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম.এ সালাম, জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দূর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাথে সাজাপ্রাপ্ত মনিরুল ইসলাম খান। এছাড়া জাতীয় পার্টির হাজরা জাহিদুল ইসলাম বাবলু, বিকল্প ধারার বেগ মাহাতাব উদ্দিন ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের শেখ আতিয়ার রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে প্রচারনা রয়েছে।

বিগত বাগেরহাট পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান হাবিবুর রহমান সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে তিনি দলীয় এমপি মীর শওকাত আলী বাদশাসহ কতিপয় স্থানীয় নেতার চরম বিরোধিতার শিকার হন বলে দাবি করে আসছেন মেয়র খান হাবিবুর রহমান। এরই জের ধরে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠণগুলোর অধিকাংশ নেতারা তাদের অনুসারীরা এমপি বাদশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মেয়রের এসব অভিযোগ বরাবই অস্বিকার করে আসছেন এমপি বাদশা।

তবে সময়ের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ এই কোন্দল আরও ধারালো হয়েছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শহীদ শেখ আবু নাসেরের দৌহিত্র ও এমপি শেখ হেলালের ছেলে সারহান নাসের তন্ময়কে নিয়ে নৌকার পক্ষে সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। এসব কর্মসূচিতে তারা শেখ তন্ময়কে দলীয় প্রার্থী করার দাবি তুলছেন। তবে এসব অনুষ্ঠানে শেখ সারহান নাসের তন্ময় বলে আসছেন, দলীয় সভানেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন তার জন্যই দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে।

জেলা যুবলীগের আহবায়ক সরদার নাসির উদ্দিন ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে হলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দিলে জয় সহজতর হবে। এই আসনটি ধরে রাখতে হলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের কোন বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে বর্তমান এমপি বাদশা নিজ দলে কিছুটা কোনঠাসা হয়ে আছেন। বর্তমান পেক্ষাপটে তিনি এই মতানৈক্য নিরসনে কতটা সফল হবেন তা নিয়ে সংশয়ে আছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে আসনটি দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যদি শেখ হেলাল উদ্দিন এমপিকে বাগেরহাট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয় তবে অবাক হবার কিছু থাকবে না। ২০০১ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে আওয়ামী লীগ তাদের ঘোষিত প্রার্থী মীর শওকাত আলী বাদশার নাম পরিবর্তন করে শেখ হেলাল উদ্দিনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছিলো। শেখ হেলাল তখন বাগেরহাট-১ ও বাগেরহাট-২ আসন থেকে একই সাথে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি মীর সাখাওয়াত আলী দারু’র স্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয় ফরিদা আক্তার বানু লুচিও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এলাকায় তিনি গণসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনে বিএনপি প্রার্থীই বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান।

বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এম.এ সালাম বলেন, বাগেরহাট সদর আসন বিএনপি’র শক্ত ঘাঁটি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এখানে বিএনপির প্রার্থীই জয়লাভ করবে।

জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন এই আসনে প্রধান দুই দলের ভোট সমানে সমান। তিনি আশা করছেন, তিনিই বাগেরহাট-২ আসনে দলীয় মনোনয় লাভ করবেন এবং বিজয়ী হবেন।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test