E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিডরে নিখোঁজ শহিদুল ১১ বছর পর বাড়িতে ফিরেছে 

২০১৮ নভেম্বর ১৮ ১৭:২৬:০২
সিডরে নিখোঁজ শহিদুল ১১ বছর পর বাড়িতে ফিরেছে 

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুপার সাইক্লোন সিডরে নিখোঁজ হওয়ার ১১ বছর পর ফিরে এসেছে শহিদুল মোল্লা (৪৮) নামে বাগেরহাটের শরণখোলার জেলে। গত ১১ বছরে পরিবারের সদস্যরা তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়েই দিয়েছিন। হঠাৎ দুদিন আগে বাগেরহাটের শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বাজারে পাগলবেশে ঘুরতে দেখে তাকে সনাক্ত করে পরিবারের লোকেরা। সরকারী ভাবে সিডরে নিখোঁজ তালিকায় থাকা শহিদুল ১১ বছর পর ফিরে পেয়ে স্বজনকে পেয়ে ওই পরিবারে এখন বইছে আনন্দের বন্যা।

শহিদুলের বড় বোন মঞ্জু বেগম জানান, তিনি দুদিন আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে খবর পান আমড়াগাছিয়া বাজারে শহিদুলের মতো দেখতে এক পাগল ঘোরাফেরা করছে। তখন তিনি ছুঁটে যান সেখানে। গিয়ে দেখেন বাসস্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনিতে ঘুমিয়ে আছে শহিদুল। তার কপালের বামপাশে কাটা দাগ, হাতের আঙ্গুলে বড়সি ঢুকে ক্ষত হয়েছিল, এসবের মিল দেখেই সনাক্ত করেন ভাইকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে তার পাগলবেশে থাকা লম্বা চুল, দাঁড়ি কেটে সিডরে হারিয়ে যাওয়া শহিদুলকে আবিষ্কার করেন তিনি। বর্তমানে শহিদুল মানষিক ভারসাম্যহীন। তাকে সেবাসুশ্রসা করা হচ্ছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। তিনি তার ভাইয়ের চিকিৎসায় সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।

শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্লার ছেলে শহিদুল তার ছোট ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর নৌকা নিয়ে সিডরের তিন দিন আগে পুর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়েছিল। ওই নৌকায় ছিল মাসুম, ছিদ্দিক, সেলিমসহ আরো তিন জেলে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে তারা সবাই বঙ্গোপসাগরে ভেসে যায়। তার বাবা ফুলমিয়া ছিলেন অন্য মৎস্য ব্যবসায়ী ইউনুচ শিকদারের নৌকায়। আজও তারও কোনো খোঁজ মেলেনি।

রবিবার দুপুরে কথা হয় রায়েন্দা বাজারে ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর বাড়িতে থাকা মানষিক ভারসাম্যহীন শহিদুলের সঙ্গে। সিডর কি তা তার স্মরণে নেই। এখন যা বলছে, একটু পর সেকথা আর মনে করতে পারছেনা। সিডরে কোথায় ছিল, কি ঘটেছিল তাও বলতে পারছেনা। তবুও তার অসংলগ্ন কথায় যা জানা গেল, ভারতের পাটগ্রাম নামক এলাকায় রশিদ খানের বাড়িতে থাকত। সেখানে গরু রাখা আর বাড়ির কাজ করত। এর পর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসে সে। সীমান্তে তাকে কেউ আটকায়নি। এসবও তার ভারসাম্যহীন মনের কথা। সঠিক করে বলতে পারছে শুধু নিজের নামটাই।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েন স্ত্রী মাসুমা বেগম। তিনি চার সন্তানের কথা ভেবে চার বছর আগে কাজের সন্ধানে চলে যান ভারতের বেঙ্গালোরে। অভাবের সংসারে অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে মেয়ে পুতুল (২০) ও মুকুলের (১৮)। মাসুম (১৭) হাফেজি পড়ছে। স্কুলে পড়া ছোট ছেলে ১১ বছর বয়সী মাসুদ সিডরের সময় ছিলো মায়ের গর্ভে। স্বামী ফিরে আসার খবর মোবাইলে শুনে খুশিতে আত্মহারা স্ত্রী মাসুমা বেগম দু-একদিনের মধ্যেই বেঙ্গালোর থেকে বাড়ীতে ফিরে আসবেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test