E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোগীর টিপসই ও এক্স-রে জালিয়াতি

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা

২০১৮ নভেম্বর ১৯ ১৭:০৪:৪৭
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : রোগীর টিপসহি ও এক্স-রে জালিয়াতির মাধ্যমে ডাক্তারি সনদপত্র প্রদানের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে সদ্য অবসরে যাওয়া সিভিল সার্জনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন এনায়েতপুর শানপুকুর গ্রামের মারুফা খাতুন বাদি হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামলার আদেশ জানা যায়নি।

মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সদ্য অবসরে যাওয়া সিভিল সার্জন ডাঃ তওহীদুর রহমান, সদর হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তারুজ্জামান, সেবিকা সানজিদা পারভিন, সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল, ডাঃ মাহাবুবর রহমান, অবসরে যাওয়া ডাঃ পরিমল কুমার বিশ্বাস।

পাটকেলঘাটা থানাধীন এনায়েতপুর শানতলা গ্রামের মৃত শাহাবাজ ফকিরের মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা মারুফা খাতুনের দায়েরকৃত মামলা থেকে জানা যায় চলতি বছরের ২৮ মে তিনি ও তার চোট বোন বেবী নাজমিন প্রতিপক্ষের দা ও লাঠির আঘাতে জখম হয়ে ওই দিন বিকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির আগে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তারুজ্জামানের। পরদিন তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বললে তারা বিষয়টি আক্তারুজ্জামানকে অবহিত করেন।

ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০ মে সকালে একজন সেবিকার দেওয়া এক্স-রে স্লিপ নিয়ে তিনি আক্তারুজ্জামানের কাছে যান। আক্তারুজ্জামান সেবিকা সানজিদাকে ডেকে তাদেরকে এক্স-রে করিয়ে আনার জন্য বলে দিয়ে ৭০০ টাকা দিতে বলেন। টাকা নিয়ে সানজিদা তাদের দু’বোনকে ১২৫ নং কক্ষে নিয়ে এক্স-রে করিয়ে ছেড়ে দেন। সন্ধ্যায় সানজিদা দু’টি এক্স-রে প্লেট তাদের দেন। ৩১ মে সকাল ১০টার দিকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপরপরই ছাড়পত্র, এক্স-রে প্লেট ও এক্স-রে স্লিপ নিয়ে আক্তারুজ্জামানের কাছে গেলে তিনি অন্যসব রেখে দিয়ে ছাড়পত্র দু’টিতে ২৯ মে এর স্থলে কাটাকাটি করে ৩০ মে নিজ হাতে লিখে তার কাছে দিয়ে দেন।

মারপিটের ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে পাটকেলঘাটা থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীদের বাচাতে আক্তারুজ্জামান ও সানজিদার পরামর্শ অনুযায়ি ডাঃ ফরহাদ জামিল, ডাঃ পরিমল কুমার বিশ্বাস ও ডাঃ মাহাবুবর রহমানের স্বাক্ষরিত সদর হাসপাতালের ডাক্তারি সনদে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে ১৭ জুলাই প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন বরাবর এক অভিযোগ করেন। প্রতিকার না পাওয়ায় সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়। প

ত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়অ সিভিল সার্জনের নির্দেশে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যদের কাছে তারা দু’ বোনসহ কয়েকজন সাক্ষী দেন। এ সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সিভিল সার্জন তাদেরকে একটি কাগজে তিনটি টিপ সহি দেখিয়ে বলেন, যে মাসহ তারা দু’ বোন এক্স-রে না করার জন্য ওই টিপ সহি দিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ করায় হস্তরেখাবীদের কাছে পাঠানোর জন্য তাদের কাছ থেকে একটি নতুন কাগজে তিনটি টিপ সহি নেওয়া হয়।

তদন্তকারী টিমের সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা আক্তারুজ্জামান ও সানজিদাকে সনাক্ত করেন। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কোন তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া বা দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ১১ অক্টোবর সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তাকে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়ে চলে যেতে বলা হয়।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ও তদন্ত কমিটির সদস্য ডাঃ জয়ন্ত সরকার জানান, তদন্তে দূর্ণীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আক্তারুজ্জামানকে বদলীর জন্য সুপিারিশ করেন তারা।

সদ্য অবসরে যাওয়া সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ তওহীদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার খেয়াল নেই।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মোসলেমউদ্দিন জানান, সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামলার আদেশ জানা যায়নি।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test