কুমিল্লায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

কুমিল্লা প্রতিনিধি : আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। নগরীর সবক’টি মার্কেটগুলোতে বইছে ঈদের হাওয়া। ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইন আর মডেলের পোশাক শোভা পাচ্ছে বিপণি বিতানগুলোতে। ফুটপাত এবং হকার্স মার্কেট থেকে শুরু করে কুমিল্লার অভিজাত শপিংমলগুলোতে নেমেছে ক্রেতার ঢল।

কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়স্থ সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, হোসনেয়ার ম্যানসন, রিয়াজ ম্যানসন, হাজী প্লাজা, সুফিয়া ম্যানসন, গণি ভূঁইয়া ম্যানসন, সমবায় মার্কেট, চৌরঙ্গী শপিং সেন্টার, বিবি সমতট, কুমিল্লা টাওয়ার শপিং সেন্টার, টাউন হল সুপার মার্কেট, ইস্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজাসহ নগরীর বিভিন্ন খাদি দোকানগুলোকে চলছে জমজমাট কেনাকাটা।

পোশাক বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, ২০ রোজায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ২২ রোজা পার হলে ভিড় আরো বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, এবারে দেশি পোশাকের পাশাপাশি বিদেশি পোশাকও মিলছে। তবে দাম একটু বেশি।

এবারে কুমিল্লার তরুণীদের পছন্দের তালিকায় আছে পাখি, ফ্লোরটার্চ, মাসাক্কালি, আশিকী, আনারকলি ও লং কামিজ। এছাড়া হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার বিভিন্ন নায়িকাদের নামানুসারে থ্রিপিস এর চাহিদাও ব্যাপক বলে জানান বিক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তিরও চাহিদা রয়েছে। এদিকে পোশাকের ভিন্নতার সাথে এবারে ঈদ বাজারে পোষাকের দামও অনেক চড়া। তরুণীদের এসব পোশাক ২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

এবারে ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। এবারে কুমিল্লায় মেয়ে শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং ফ্রক ও পার্টি ফ্রক। এছাড়া মার্কেটগুলোতে উঠেছে লেহেঙ্গা ও লং কামিজ। গরমকে সামনে রেখে ছেলে শিশুদের এবারের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সুতি টি-শার্ট ও বাবা স্যুট। সাথে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন ও কাপড়ের প্যান্ট। তবে এবারে যেসব পোশাক শিশুদের মন কেড়েছে সেগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। এ ব্যাপারে ক্রেতা সাজ্জাদ বলেন, এবারে পোশাকের দাম অনেক বেশি যার সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করা কঠিন। বড়দের পোশাকের তুলনায় ছোটদের পোশাকের দাম বেশি।

এ ব্যাপারে বিক্রেতা আমিনুর রহমান বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার জন্যই আমাদেরকে বিদেশি পোশাক আমদানি করতে হয়। পাশাপাশি দেশীয় পোশাকের চাহিদাও একেবারে খুব একটা কম নয়। এবারের জমজমাট ঈদ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস দেখা যাচ্ছে। এবারে ভারত ও চীনের তৈরি পোশাকের একচেটিয়া প্রাধান্য রয়েছে।

এবারে ঈদে তরুণদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে প্রতিবারের মতন এবারেও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবীর সমাহার দেখা গেছে মার্কেটগুলোতে। তবে পাঞ্জাবী কেনার ক্ষেত্রে মার্কেটের চাইতে কুমিল্লার খাদি দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে অনেক বেশি। কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডস্থ খাদি কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে খাদি পাঞ্জাবির যোগান ও চাহিদা উভয়ই বাড়ছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল মিলিয়ে খাদি পাঞ্জাবির সমাহার রয়েছে নগরীর রাজগঞ্জ মনোহরপুর, কান্দিরপাড়ের দোকানগুলোতে।

গত কয়েকদিন খাদি কাপড়ের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারাও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছেন। সূলভ মূল্য পাঞ্জাবি কিনে খুশি মনেই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।
কয়েকজন খাদি কাপড় বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ৬’শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে খাদি পাঞ্জাবি বিক্রয় করছেন তারা। সিল্কের ব্যবহার করে খাদি পাঞ্জাবির আকর্ষণীয়তা বাড়ানো হচ্ছে।
খাদি ব্যবসায়িরা জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রি বাট্টাও বেড়ে চলছে। আশা করি সামনে আরও বিক্রি করবো। খাদি কাপড়ের কয়েকটি কারখানা রয়েছে চান্দিনা উপজেলায় ঈদ উপলক্ষে দিনরাত কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

ঐতিহ্য আধুনিকতা ও সূলভমূল্যের কারণে এবারের ঈদে অন্যান্য পোশাকের মত খাদি কাপড়ের আবেদন শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়িরা। এছাড়া পোশাক ছাড়াও জুতা ও প্রসাধনীর দোকানে এর মধ্যেই ভিড় বাড়ছে। অনেকে আবার পোশাক কেনার পর সাথে সাথে পোশাকের সাথে ম্যাচিং জুয়েলারিও কিনে নিচ্ছেন।

এদিকে কুমিল্লার নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটারস্থল ফুটপাথের দোকান। এছাড়ার কুমিল্লার কান্দিরপাড় টাউনহল মাঠের হর্কাস ঈদ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের তাদের সাধ্যের মধ্যে পছন্দসই পোশাক কিনে নিচ্ছেন এসকল দোকানগুলো থেকে। ফুটপাতে পোশাক কিনতে আসা শ্রমিক সফিক মিয়া বলেন, ‘আমরার কামাই কম, আমরা কি ওই সব বড় বড় মার্কেটে যেতে পারি! ওসব তো বড় লোকগোর জন্য। আমাদের জন্য এই ফুটপাথ আর হর্কাস মার্কেটই ভরসা।

(এইচকে/জেএ/জুলাই ১৯, ২০১৪)