E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরের ‘ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি’ প্রায় ধ্বংসের মুখে

২০১৮ ডিসেম্বর ০১ ১৭:০৭:৩৪
দিনাজপুরের ‘ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি’ প্রায় ধ্বংসের মুখে

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহায়তা দানের স্থল ‘ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি’। যুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত দিনাজপুরের ঐতিহাসিক মুসলিম জমিদারির শেষ চিহ্ন ‘ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি’ এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে পূর্ণভবা নদীর কোল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের ২০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন ওই বাড়ির ভবনগুলো এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে রয়েছে।

কালের সাক্ষী এ জমিদারবাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। এমনকি, জমিদার বংশের উত্তরাধিকারীরাও এ বিষয়ে উদ্যোগী না হওয়ায় কালের গর্ভেই হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য এ জমিদারবাড়িটি।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখা গেলো এর জরাজীর্ণ অবস্থা। জমিদারবাড়ির প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল প্রবেশদ্বার। সুদৃশ্য এ প্রবেশদ্বারে পোড়ামাটির কারুকাজ। তবে লতা-গুল্মে ছেয়ে ও আগাছা জন্মে নষ্ট হতে বসেছে মনোরম এ প্রবেশদ্বারটি। ভেতরে ধ্বংসপ্রাাপ্ত একটি দোতলা পাকা ভবনসহ কিছু ভবন।

জমিদারবাড়ির ভেতরে কোনো স্থাপনাই আর ব্যবহারযোগ্য নেই। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে। তবে ভেতরের আঙিনায় ঘর তুলে বসবাস করছেন স্থানীয় দু’একটি পরিবার।

ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারির শুরু সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন তথ্যমতে, ব্রিটিশ শাসকালের ১৭৭১ হতে ১৭৮৯ সালের মধ্যে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারি সূচনা হয়। তা ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারি টিকে ছিল।

জমিদার পরিবারের বর্তমান সদস্য ও ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বংশের আদি পুরুষ নবীর মোহাম্মদ। তিনি তৎকালীন জলপাইগুড়ি থেকে নদীপথে ব্যবসা উপলক্ষে ঘুঘুডাঙ্গার কিছুদূরে পাথর ঘাটায় আসেন। সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে ৫০০টি ধানভাঙ্গা ঢেঁকি স্থাপন করে নদীপথে কলকাতার চিৎপুরে ধান-চালের ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার ছেলে ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী বহু জমিদারি কিনে ঘুঘুডাঙ্গার প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

ফুল মোহাম্মদ চৌধুরীর তৎকালীন ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারির এস্টেট ছিলো ১১টি থানা নিয়ে। এর মধ্যে দিনাজপুর, গঙ্গারামপুর, কুশুমুন্ডি, রায়গঞ্জ, কালিগঞ্জ, ইটাহার,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, বিরল,বোচাগঞ্জ ও মালদা থানা। সেসময় বৃটিশ সরকার জমিদারদের মধ্যে ঘুঘুডাঙ্গার জমিদারের থেকে সর্বোচ্চ খাজনা ১ লাখ টাকা পেত।১৮টি কাঁচারি ও ৪১টি তহসিল অফিস দিয়ে পরিচালিত হতো এ জমিদারের স্টেট। ১৯৪৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর ওই প্রাসাদেই বসবাস করতে থাকেন জমিদারের বংশধররা।

বাড়িটিতে জমিদার এস্টেটের কিছু দুর্লভ সামগ্রী ছিল। এর মধ্যে স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি চেয়ার, বর্তমানে যেটি জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।এছাড়া ১০১ ভরি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম কই মাছ, রুপার বাটযুক্ত ছাতা ও পাখা, রূপার লাঠি, তামার হাড়িসহ দুর্লভ সামগ্রী স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে লুণ্ঠিত হয়।দিনাজপুর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মো. সজির উদ্দিন আহমেদ জানান, আগে আশপাশের এলাকায় কোনো ডেকোরেটরের ব্যবস্থা ছিল না। প্রয়োজনে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে জমিদারবাড়ি থেকে সামিয়ানা, হাড়ি, গ্যাস-প্লেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যেতেন।তিনি জানান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় জমিদারবাড়িটি মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেন বাড়ির বাসিন্দারা।

এ খবর পেয়ে হানাদার বাহিনী ওই বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করলে সংবাদ পেয়ে সে সময়কার জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারীরা পরিবারসহ ভারতে পালিয়ে যায়। পরে হানাদারবাহিনী জমিদারবাড়িতে হামলা করে ধ্বংস করে দেয়। পরে বাড়ির বাসিন্দারা ফিরে এলেও ব্যবহার উপযোগী না থাকায় দিনাজপুর শহরে বসবাস করতে শুরু করেন।এভাবেই দিনে দিনে ধ্বংসের পথে এগুলেও তা রক্ষায় উদ্যোগী হয়নি কোনো পক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এ অঞ্চলের অন্যতম এই পুরাকীর্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।

(এসএএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test