E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় খুরা রোগে ৫০টি গরু-ছাগলের মৃত্যু, আক্রান্ত দুই শতাধিক

২০১৮ ডিসেম্বর ০১ ১৭:৩৯:৪৬
সাতক্ষীরায় খুরা রোগে ৫০টি গরু-ছাগলের মৃত্যু, আক্রান্ত দুই শতাধিক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় গরু ও ছাগলের খুরা রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই তালা ও সাতক্ষীরা সদরে এ রোগে মারা গেছে ৫০টির বেশি গরু ও ছাগল। আক্রান্ত হয়েছে দু’ই শতাধিক। অভিযোগ,সরকারিভাবে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না থাকা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা না রাখায় এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে তালা উপজেলার গোপালপুর গ্রামে গেলে কালিপদ বিশ্বাসের স্ত্রী বৃদ্ধা আরতী রানী বিশ্বাস জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার খরচ যোগাড় করে আসছিলেন তিনি। তার জার্সি গাভী থেকে তিনি প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ কেজি করে দুধ পেতেন তিনি। ১০ দিন আগে হঠাৎ করে গাভীটির জিহবায় ঘা দেখা দেওয়ায় খাওয়া কমিয়ে দেয়। একপর্যায়ে গাভীটির জ্বর হয়। দু’ পায়ের খুরে দগদগে ঘা দেখা দিলে গাভীটির চলনশক্তি কমে যায়।

উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার অফিসে যেয়ে বার বার তাগিদ দিয়েও কোন ঔষধ পায়নি। উপরন্তু ৫০০ টাকা না দিলে সরকারি ডাক্তার আসে না। এ ছাড়া ওই ডাক্তারের সঙ্গে থাকা কর্মচারিরা টাকা ছাড়া কিছ্ইু চেনেন না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ডাক্তারের শরনাপন্ন হলেও শুক্রবার গরুটি মারা যায়। গাভীটির যে বাছুরটি রয়েছে ও তার ছেলে মনিশঙ্কর বিশ্বাসের একটি জার্সি গাভী আক্রান্ত হওয়ায় তাদেরকেও বাচানো কঠিণ হয়ে পড়েছে।

একই গ্রামের লক্ষী রানী দত্ত জানান, এক সময় তাদের গোয়ালে অনেক গরু ছিল। গরুর উপরই ছিলো তাদের জীবনযাত্রা। কালের বিবর্তনে রোগ ব্যাধিতে গরু মারা যাওয়ায় দু’টি দুগ্ধবতী গাভী ও একটি বাছুর ছিল তাদের গোয়ালে। খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহষ্পতিবার একটি গাভী মারা গেছে। অন্য গাভী ও বাছুরটির পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। একইভাবে কলেজ ছাত্র প্রসেনজিৎ দত্ত জানালেন খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের দু’টি গাভী ও একটি বাছুর মারা যাওয়ার কথা। আগে ভাগে রোগ সম্পর্কে অবহিত না হওয়ায় গরু মারা গেছে বলে জানান তিনি।

সাংবাদিক এসেছে খবর পেয়ে ছুটে আসা একই গ্রামের ইউপি সদস্য সঞ্জয় দে জানালেন খুরা রোগে তার একটি গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে তিনটি। বাসুদেব দত্তের তিনটি গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে দু’টি, মোহন দত্তের একটি গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে দু’টি, প্রভাষ দত্তের একটি গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে তিনটি, অমল পালে একটি গাভী মারা গেছে আক্রন্ত হয়েছে দু’টি, কার্তিক নন্দীর একটি গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে দু’টি।

মনোরঞ্জন রায়ের তিনটি গরু ও চারটি ছাগল আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে একটি ছাগল। জয়দেব দে এর একটি গাভী ও গণেশ শীলের একটি গাভী মারা গেছে। তাদের আক্রান্ত হয়েছে ছয়টি গরু। এ ছাড়াও ইছহাক আলীর একটি ও নীলু নন্দীর একটি করে গাভী মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে সাতটি। দেবাশীষ বিশ্বাসের পাঁচটি ছাগল ও মলিনা বিশ্বাসের আটটি ছাগল আক্রান্ত হয়েছে।

খানপুর ঋষিপাড়ার সুবোল দাস ও মহর্ষি দাসের দু’টি করে গাভী মারা গেছে আক্রান্ত হয়েছে তাদের তিনটি গরু।

জিয়ালা গ্রামের প্রশান্ত ঘোষ জানান খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে তার খামারে ছয়টি গাভী ও দু’টি বাছুর মারা গেছে। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে সাতটি গরু। একইভাবে তিনটি বাছুর গত এক সপ্তাহে মারা যাওয়ার কথা জানালেন দিবস ঘোষ। তাদের পাড়ায় এ নিয়ে কয়েক দিনে কমপক্ষে আরো ১০টি গরু মারা যাওয়া ও ৩০টির বেশি গরু আক্রান্ত হওয়ার কথা জানালেন দিবস ঘোষ।

সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি কাপালীপাড়ার দীনবন্ধু বাছাড় জানান, গত এক সপ্তাহে খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার তিনটি গাভী, সাধন চন্দ্র মণ্ডল ও ইউপি সদস্য সুকুমার সরদারের তিনটি করে গাভী মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে তাদের কমপক্ষে ১১টি ছোট ও বড় গাভী। এ ছাড়া মানস সরদার ও নির্মল মণ্ডলের একটি করে গাভী মারা গেছে। পার্শ্ববর্তী বালিথা, শিমুলবাড়িয়া, ফয়জুল্লাহপুর, গেবিন্দপুর , মীর্জাপুর, সুলতানপুর, গাভা, জোড়দিয়া, কুলতিয়া ও হাবাসপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে খুরা রাগে গরু আক্রান্ত হয়েছে আবার এদের কোন বাড়িতে গাভী মারাও গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারীরা জানান, এ রোগে আক্রান্ত গরু খেতে না পেয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যায়। আর যেগুলো বেচে থাকে সেগুলোর অবস্থা দেখার মত নয়।

তালা সদর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ডাঃ শাহীনুর ইসলাম জানান, খুরা রোগে আক্রান্ত হওয়া কোন গবাদি পশুর মৃত্যুর সম্ভবনাই বেশি। এ রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এফএমডি সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় খামারীরা বাধ্য হয়ে তাদের শরনাপন্ন হয়ে থাকেন । সে অনুযায়ি তারা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে আক্রান্ত হলে খামারীদের পারচর্যার উপর নির্ভর করে পশুটির বাচা ও মরা। আক্রান্ত পশুর জন্য ওজন ভেদে পেনিসিলিন ৪০ লাখ ইনজেকশান, ভিটামিন কিটোভেট ও এন্টিহিসটামিন দেওয়া হয়ে থাকে। খামারীদের পরিচর্যার তারতম্যের কারণে আনন্ত গরু সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তালা উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে তালায় সবচেয়ে বেশি গাভী পালন হয়। সে কারণে প্রয়োজনের তুলনায় ভ্যাকসিন কম থাকায় খামারীদের কিছুই করার থাকে না। তবে তৌহিদুল ইসলাম পশু চিকিৎসক হিসেবে সম্প্রতি তাদের অফিসে যোগদান করার পর থেকে এলাকায় খুরা রোগের আক্রমণ কমেছে। বর্তমানে এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে কম।
সাতক্ষীরা জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ কুমার দাশ জানান, তালা ও সাতক্ষীরা সদরে প্রথম দিকে খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও বর্তমানে অবস্থা ভালোর দিকে। তালায় একটি ব্যক্তি খামারে খুরা রোগে আক্রান্ত গরু আনার পর থেকে বায়ু বাহিত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় খামারীরা বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে প্রতি বছরই এ রোগ কোন না কোন খামারে দেখা দিলেও তা সরকারি সহায়তায় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে ।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test