E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে কাপড়ের হাটে হাজারও মানুষের সমাগম

২০১৪ জুলাই ১৯ ১৫:২৯:৪৮
শাহজাদপুরে কাপড়ের হাটে হাজারও মানুষের সমাগম

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : ভোরের পূর্ব আকাশে তখনও সুর্য উঠেনি। কাক ডাকা ভোরে ছুটে চলছে গামছা ঘাড়ে নিয়ে শতশত তাঁত শ্রমিক। শাহজাদপুরের তাঁতীপাড়া থেকে তাঁতের খটখট মাকুর শব্দ ভেসে আসছে। এ চিত্রটি এখন শাহজাদপুরেই নয় বৃহত্তর পাবনা জেলার সকল তাঁতী পাড়ায় ।

শাহজাদপুরে তাঁতীরা প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে তাঁতের কাপড়ে নিয়ে আসছে নানা বৈচিত্র। নকশার ধরন রংয়ের বৈচিত্র বাঙালী ললনাদের শাহজাদপুরের শাড়ী সবসময় আকৃষ্ট করে থাকে। সেই বৃটিশ যুগ থেকেই শাহজাদপুরের সুতি কাপড়ের শাড়ী ‘পাবনা শাড়ী’ নামে অধিক পরিচিত। ঈদকে সামনে রেখে তাঁতীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটে।

শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে ঈদকে সামনে রেখে হাজারও মানুষের সমাগম, কোটি কোটি টাকা লেনদেন। ব্যবসায়িরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে শাহজাদপুরের সাপ্তাহিক কেনা-বেচা ১’শ কোটি টাকা হলেও ঈদকে ঘিরে ব্যবসা ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। ভারতীয় সিল্ক আর পাকিস্তানী জরজেট শাড়ীকে পিছনে ফেলে শাহজাদপুরের তাঁতের শাড়ী বাঙালী নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

শাহজাদপুরের মুকুল কটেজ ইন্ড্রাসট্রিজের মালিক হাজী আব্দুর রউফ বুলবুল জানান, সপ্তাহে তিনি ২'শ পিছ শাড়ী উৎপাদন করছেন। একটি শাড়ী তৈরী করতে একজন দক্ষ শ্রমিককের ৪ দিন সময় লাগে। তিনি আরও জানান, নতুন নতুন ডিজাইনের এ শাড়ীর নাম রাখা হয়েছে ফুলকলী, রোজভেলি, রেডরোজ, রানীমা, রজনী, রাজবধু, পিউরি, উপমা, ঝলক, শিবনি, মৌনতা, পূর্নতা, কোহেলী, উলফা, ঝিলিক, পাখি সহ আরো অনেক নাম। এ সকল উৎপাদিত শাড়ী সারা বছর ধরেই মজুদ রাখা হয় ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে। হাজী আব্দুর রউফ বুলবুল আরো জানান, তার মত অনেক তাঁত মালিক সারা বছর শাড়ী তৈরি করে ঈদের বাজার ধরতে বসে থাকতে হয়।

শাহজাদপুরের অপর তাঁত ব্যবসায়ি আলতাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম ও আব্দুল করিমের সাথে কথা হলে তারা জানান সাম্প্রতিক সময়ে উপকরনের মুল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর পাবনা জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কামাড়খন্দ, উল্লাপাড়া,বেড়া, সাথিয়া, পাবনা সদর দোগাছি সহ বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক হ্যান্ডলুম, পাওয়ারলুম, স্ক্রীনপ্রিন্ট, ডাইং, এম্ব্রোডারিসহ বিভিন্ন সহায়ক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পকারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় কয়েক লক্ষ শ্রমিক জড়িত রয়েছে।

তাঁতের শাড়ী নিয়ে গবেষণায় জড়িত রয়েছেন মোবারক হোসেন। তিনি জানান, ভারতীয় শাড়ীর দাপটের কারণে শাহজাদপুর সহ বৃহত্তর পাবনা জেলার তাঁতের কাপড়ের বাজার মন্দা থাকায় এদেশের তাঁত শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তাঁতের শাড়ীর যে মন্দাভাব চলছিল এবার ঈদে স্থানীয় তাঁতীদের উৎপাদিত শাড়ী বিক্রি করতে পারলে এ শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তিনি আরো জানান, শাহজাদপুর সহ বৃহত্তর পাবনার তাঁতের শাড়ীকে ঘিরে এ শিল্পের যে বিকাশ ঘটেছে তা টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু ঈদ উৎসব নয়, শাড়ীতে বাঙালী ললনা এই বাস্তবতায় ফিরে আসতে হবে।

তিনি আরো জানান, থ্রি পিচ, টুপিচ দিয়ে সালোয়ার কামিজ বানিয়ে বাঙালী নারীরা তাদের বসন তৈরী করলেও আর যাই হোক তাঁতীদের সুদিন ফিরে আসবে না। তবে তিনি আশা করছেন এবার ঈদকে সামনে রেখে যে পরিমান তাঁতের শাড়ী তৈরী হয়েছে সেগুলো যদি শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটে তাঁতীরা বিক্রি করতে পারে তবে এ হাটে কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে। শাহজাদপুরে রবি ও বুধবার দু’দিন কাপড়ের হাট বসলেও ঈদ উপলক্ষে একদিন আগেই গতকাল শনিবার শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট বসেছে।

এ হাটে এসেছেন বগুড়া থেকে সুলতানা বেগম। তিনি হাট থেকে তাঁতের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা কিনে নিয়ে যাবেন বগুড়ায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেকেই সুলতানা বেগমের মত শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে শাড়ী, লুঙ্গি ও অন্যান্য বস্ত্র কিনে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবেন। তাই শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে। শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটকে কেন্দ্র করে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

(এআর/জেএ/জুলাই ১৯, ২০১৪)



পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test