E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভালুকা মুক্ত দিবস পালিত

২০১৮ ডিসেম্বর ০৮ ১৮:২১:১০
ভালুকা মুক্ত দিবস পালিত

ভালুকা প্রতিনিধি : ভালুকায় ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। 

ভালুকা মুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ভালুকার মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী মরহুম মেজর আফসারের কবর জিয়ারত, র‌্যালি ও আলোচনা সভা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুক্তি যোদ্ধের চেতনা অক্ষুন্ন রাখার অঙ্গীকার নিয়ে ৪৮ তম ভালুকা মুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপনে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন,মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ছিল,স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র‌্যালী ও মুক্তিযোদ্ধে গঠিত অনিয়মিত আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদের কবর জিয়ারত।

র‌্যালিতে অংশ গ্রহন করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল,ভালুকা পৌর মেয়র ডাঃ এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনিত প্রার্থী আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমন্ডার মফিজুর রহমান, যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার খোরশেদ আলম (জজ মিয়া), উপজেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত আহ্বয়ক মুক্তিযোদ্ধা এস এম নাজমুল আহসান, ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার পিপিএম (বার), মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান খান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাদিকুর রহমান তালুকদার, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হক সজিবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য ছাড়াও সর্বস্তরের মুক্তিকামী জনতা ।উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে র‌্যালীটি বের হয়ে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে উপজেলা পরিষদ চত্বর মুক্ত মঞ্চে উদযাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বক্তব্য রাখেন,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ,যুদ্ধাকালীন কোম্পানি কমান্ডারবৃন্দ সহ সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ গ্রহন করেন।

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফসার বাহিনীর কাছে ১৯৭১’র এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনার আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। সেদিনের কুয়াশাভরা ভোরে মুক্তিসেনাদের আক্রমনের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে। রাজাকার ও পাক সেনারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গফরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলে মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক দিয়ে তাদের ঘিরে রাখে।

এ সময় অনেক রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা গফরগাঁও রেলষ্টেশনে পৌছে সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশীরভাগ রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পরে। তাদেরকে ভালুকায় ফিরিয়ে আনা হয়। কাক ডাকা ভোরে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালুকা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। আর তখনই জয় বাংলা জয় বাংলা ধ্বনিতে চারিদিক হতে মিছিলে মিছিলে লোক ছুটতে থাকে ৯ মাসের অবরুদ্ধ ভালুকা হানাদার ক্যাম্পের দিকে। সেই মিছিলে যোগ দিয়ে গ্রামের বাড়ী ভরাডোবা হতে ৫ কিলোমিটার পথ দৌড়ে ভালুকায় যাওয়া আর শত্রুমুক্ত স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্যের দিনটি আজও স্মৃতিতে সারা জাগায়। মুক্ত ভালুকায় এল এম জি, এস এল আর, এস এম জি’র ব্রাশ ফায়ারে উল্লাসে মেতে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এক মুক্তিযোদ্ধা জানান আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে বুকে কোমড়ে বেল্টে গুলির ছড়া, কাদে রাইফেল, লুঙ্গি উল্টানো গেঞ্জি গায়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ জয়ের বীরাগমন দৃশ্য।

১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফসার উদ্দীন আহম্মেদ ৭১ এর ১৭ এপ্রিল ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে ভালুকার মল্লিকবাড়ী বাজারের খেলু ফকিরের বাড়ীতে মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি সহ প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাওরাইদ হতে খীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে গেরিলা দলটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। আফসার উদ্দীনের ৮ সদস্যের দলটি পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনীতে রুপ নেয়। এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে।

যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলী তরফদারের তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে আফসার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে একটি ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটি কিছুদিন রেডক্রস সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়।৭১ এর ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। দিবা রাত্র দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা একটানা যুদ্ধ স্থায়ী হয়। শুক্রবার শুরু হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে পাক বাহিনী চারিদিকে পানি বেষ্টিত নদীর পূর্বপারে গোয়ারী যোগীপাড়া নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন সারারাত তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে অনেক পাকসেনা নিহত হয়।

(এম/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test