E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অসময়ে ইলিশ উৎসবে মুখর উপকূল!

২০১৮ ডিসেম্বর ১২ ১৪:৫২:৩৫
অসময়ে ইলিশ উৎসবে মুখর উপকূল!

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা : ইলিশের মৌসুম শেষ হলেও বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বলেশ্বর বিষখালী,পায়রা নদী ও গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। অসময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় হঠাৎ মাছের বাজার জমে উঠেছে। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।

উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা, তালতলী, আমতলী এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া,পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাটে-বাজারে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি। জেলেরা নদ-নদীতে মাছ ধরে তিরে ফিরলেই সন্তান-সন্ততির মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠছে। নেই ঝড়-ঝঞ্জাড় কিংবা দূর্যোগ-দূর্বিপাকের ভয়।সাধারনত ইলিশ আহরণকারী জেলেরা প্রতিকূল আবহাওয়াতেই অর্থাৎ চরম দূর্যোগ মাথায় নিয়েই গভীর সমুদ্রে যায়।

স্বজন-পরিজনদের নিকটথেকে বিদায় নিয়ে জেলেরা জীবনের ঝুকিঁ নেন দু’মুঠো অন্নের আশায়। ফিশিং ট্রলার গভীর সমুদ্রে ছুটেচলে ফটাফট্! একসঙ্গে অনেক ট্রলারের সেই ফটাফট্ শব্দ আবার শোনা যাচ্ছে এখন পাথরঘাটা মৎস্য উপকেন্দ্র(বিএফডিসি)এলাকায়।

ইলিশ শিকার করে ফেরা পাথরঘাটার রূহিতা গ্রামের ফারুক মাঝি বলেন, এই সময়ে মাছ পওয়ার কথা আমরা একটিবারও ভাবিনি। বলেশ্বর বিষখালিসহ উপকূলীয় নদ-নদীর ইলিশকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় লোকাল ইলিশ। যা আকারে বড় হয়, তৈলাক্ত ও সুস্বাদু হয়। আর গভীর সমুদ্রের ইলিশকে বলা হয় ফিশিং ইলিশ, যা আকারে খুব বেশি বড় হয় না।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) পাথরঘাটায় আসছে। অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে ফিরে আসা ইলিশভর্তি ট্রলার গুলো ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে। চলতি বছরে মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটে উঠেছে জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্যজীবিদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায় এখন জেলে,আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। সব মিলিয়ে যেন শেষ সময়ও আনন্দের জোয়ার বইছে। এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় স্বস্তি ফিরেছে উপূূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে। মাছ ভর্তি যান্ত্রিক নৌযান কিংবা মাছধরার (ফিশিং) ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে হাসি মুখে ফিরছেন। আবার অনেকে মাছ ধরার জন্য ছুটছেন সাগর পানে।

জেলেরা জানান, চলতি বছরে ইলিশ মৌসুমের প্রথম দিকে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মেলেনি। তাই ট্রলার মালিকসহ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই হতাশ হয়ে পড়ে ছিলেন। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেপল্লিতে আনন্দের বাতাস বইছে।

ইলিশ আড়তদার শেখর চন্দ্র বাবু বলেন, সাগর থেকে যে কিছু ট্রলার ঘাটে আসছে, তাদের প্রতেকেই কম-বেশি মাছ পাচ্ছে। বিক্রি করেও ভালোই লাভ করছে তারা। ইলিশের দাম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

চলতি সপ্তাহে গ্রেড অনুযায়ী মণ প্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে, ফিশিং ১ম গ্রেট ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা, ২য় গ্রেট ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। লোকাল ১ম গ্রেট ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকায়। ২য় গ্রেট ১৪ থেকে ১৬ হাজার ও কেজির ওপরে ইলিশ ৩০ থেকে ৩৮ হাজার টাকা ধরে কেনাবেচা চলছে। যা কদিন আগের চেয়ে প্রায় মণে ৮-১০ হাজার টাকা কম।

স্থানীয় এক পাইকার জানান, ঢাকা, যশোর, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ মাছ পাঠান তিনি। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা মাছ অনেক ভালো এবং এখান থেকে নানান জায়গায় মাছ পাঠানো সহজ। এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় সব এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ চালান করতে পারছেন তিনি।

পাথরঘাটা মৎস কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞায় সরকারি আইন বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বিষয়ক সভা-সভাবেশ করা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়দের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি সফল।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বলেন, মা ইলিশ রক্ষা মৌসুমে জেলেরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার ফলেই এই অনাকাঙ্খি (!)ইলিশ মিলছে জেলেদের জালে।

(এটি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test