E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাশরাফি খেলার মাঠে, নেতা-কর্মী সমর্থকরা ভোটের মাঠে

২০১৮ ডিসেম্বর ১৪ ১৮:০৬:৪৬
মাশরাফি খেলার মাঠে, নেতা-কর্মী সমর্থকরা ভোটের মাঠে

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : বাংলাদেশের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে  সিরিজ খেলতে খেলার মাঠে লড়ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। 

এদিকে, নড়াইল-২ আসনে মাশরাফিকে নির্বাচনে জয়ী করতে ভোটের মাঠে নেমেছে আলীগ নেতাকর্মীসহ নৌকা মার্কার সমর্থকেরা। তবে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামানও (ধানের শীষ) বসে নেই। যদিও নির্বাচনী প্রচার কাজের প্রথম দিনেই লোহাগড়ায় তার নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করা হয়েছে। জোটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনিও নেমে পড়েছেন ভোটের মাঠে। সব কিছু মিলে, নড়াইল-২ আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠতে শুরু করেছে।

নড়াইল-২ আসনে আওয়ামীলীগ এবং ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়াও আরও ৫ জন প্রার্থী বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ লাঙ্গল প্রতীকে, এনপিপির (ছালু) জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম আম প্রতিকে, ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাসির উদ্দীন হাতপাখা প্রতিকে, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান মিনার প্রতিকে এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফকির শওকত আলী তারা প্রতিকে নির্বাচন করছেন। আ’লীগ ও বিএনপি জোটের প্রচার-প্রচারনা ছাড়াও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার কাজ শুরু করেছেন।

১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর পরই নড়াইল-২ আসনে আলীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা মুরু হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামানের সমর্থকরা ভোটের মাঠে নেমে ভোটারদের নিজ নিজ দলের পক্ষে ভোট চাইছেন। কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি করছেন উঠান বৈঠক।

মাশরাফি আপাতত খেলায় ব্যস্ত থাকলেও নেতা-কর্মীসহ তার ভক্ত-অনুরাগীরা আছেন ভোটের মাঠে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মন্তব্য- ‘মাশরাফি লড়ছেন বাংলাদেশের জন্য আর হাজারও নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে লড়ছেন মাশরাফির জন্য’। মাশরাফি ভক্তরা জানান, ‘মাশরাফি খেলার মাঠে থাকলেও সর্বদা তিনি আছেন ‘নড়াইলবাসীর হৃদয়ে’।

এদিকে, এ আসনের ভোটাররা আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আপাতত ভোটের মাঠে না পেয়েও তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাশরাফিকে বিজয়ী করতে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষনেতারা।

বিএনপি প্রার্থী এনপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, তার নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ১১ তারিখে তার নির্বাচনী একটি কার্যালয় ভাংচুর করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তিনি আরও বলেন, ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাশরাফির বন্ধু সুমন দাস বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মাশরাফির জন্য নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৯ সালের এসএসসি পর্যায়ের বন্ধুরা। পাশাপাশি ১৯৯৮ সালের এসএসসির বন্ধুরাও মাশরাফির জন্য বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। এ লক্ষে প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত অবধি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মাশরাফির পক্ষে মতবিনিময়, গনসংযোগ, লিফলেট বিতরন করেছে তার বন্ধুরা। মাশরাফি খেলার মাঠে থাকলেও প্রচার প্রচারনা থেমে নেই বলে জানান তিনি’।

নড়াইল পৌরসভা, সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া পৌরসভা ও লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত। লোহাগড়া উপজেলার ভোটার সংখ্য ১লক্ষ ৭৯ হাজার ৩শ ৪৭জন, নড়াইল সদর উপজেলার ভোটার সংখ্য ১লক্ষ ৩৮ হাজার ৪শ ৩৫জন।

জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী নওশের আলী জানান, এ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৮২জন। পুরুষ ভোটার ১লক্ষ ৫৭ হাজার ১শ ৫জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৬শ ৭৭ জন। পুরুষ ভোটার থেকে নারী ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৫শ ৭২ জন বেশি।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ বরাবরই ভালো ফলাফল করেছে। ৭৩, ৯১, ৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক জয়লাভ করে। তবে ১৪ সালে অ’লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেন ওয়ার্কাস পার্টির নেতা বর্তমান সংসদ শেখ হাফিজুর রহমান। আসনটিতে ৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ১৯৭৯ এবং ২০০১ উপ-নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে।

এদিকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষ মাশরাফির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, মাশরাফি নির্বাচন করলে এমপি এবং মন্ত্রী হবেন বলে মনে করেন তারা। ফলে অবহেলিত নড়াইলের সার্বিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী ।

নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নড়াইলের মানুষ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ধানের শীষ প্রতীক বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তার অভিযোগ, প্রতিটা নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মামলা থাকায় তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় ঠিক মত অংশ নিতে পারছে না। পুলিশের ভয়ে তাদের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে’।

মাশরাফির বাবা গোলাম মর্তুজা স্বপন জানান, খেলা শেষ করে চলতি মাসের ১৬-১৭ তারিখে নড়াইলে আসতে পারে মাশরাফি। নড়াইলে এসে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার কথা রয়েছে মাশরাফির। এবার নড়াইলে এসে বেশ কয়েকদিন থাকার কথা তার।

নড়াইল জেলা আলীগের সভাপতি এ্যডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, মাশরাফি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলছে। আর নড়াইল জেলা আলীগ বিভিন্ন অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মাশরাফিকে (নৌকা প্রতীকে) জয়ী করার জন্য বিরামহীন কাজ করছে। মাশরাফি ভোটের মাঠে না থাকলেও নির্বাচনে তার কোন প্রভাব পড়বে না। এ আসনে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীক জয়ী হবে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১১ নভেম্বর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমস্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের হাত থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করার মাধ্যমে এই বরেণ্য ক্রিকেট দলপতির রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে।

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test