E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঠাকুরগাঁওয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন 

২০১৮ ডিসেম্বর ২২ ১৭:৫৭:৪০
ঠাকুরগাঁওয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : নির্বাচন যেন এক আতঙ্কের নাম ! তাই নির্বাচন আসলেই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কয়েকটি সংখ্যালঘু গ্রামের মানুষদের। দিনের আলোতে এসব গ্রামের মানুষদের সাহস যোগাতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পাশে থাকলেও রাতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। 

নির্বাচনকে ঘিরে প্রায়ই রাতের আধাঁরে ভয়ভীতি দেখিয়ে, আতঙ্ক সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া ও ভোট না দেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে একটি বিশেষ মহল। তেমনি এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অগ্নিসংযোগ করা হয় জগন্নাথপুর ইউনিয়নের সিংগিয়া সাহাপাড়া এলাকায় কৃষ্ণ ঘোষ নামে এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে। অগ্নিকান্ডে ৮টি ঘর, প্রায় ৬০ মণ ধান, একটি ভ্যান, একটি সাইকেল ও টেলিভিশনসহ ছয়টি পোষ্য জীবন্ত ছাগল পুড়ে ছাই হয়েছে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টায় এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকান্ডের এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত ও নির্বাচন পূর্ববর্তী অতঙ্ক সৃষ্টি করতে এমন ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানিয় সংখ্যালঘু হিন্দুরা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।তবে এ ঘটনাকে বিদ্যুতের সর্টসার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত বলে কৌশলে চালিয়ে চেষ্টা করছে একটি বিশেষ মহল। তারা তদন্ত ছাড়াই এটিকে নিছক ঘটনা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি বার বার বলছে রাতের আঁধারে তাদের বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ভাষ্য, যদি সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত হতো তাহলে তাদের এতো ক্ষতি হতো না।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষ্ণ ঘোষ জানান, ভোর রাতে তার বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানিয়দের সহায়তায় আগুন নিভাতে সক্ষম হলেও বাড়ির কোন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে এই শীতে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে তাদের।

সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিলাবতী ঘোষ জানান, আমরা হিন্দু বলে আমাদের কোন স্বাধীনতা নাই। ভোট আসলেই আমাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। সংসারের ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়।
একই এলাকার রুমা ঘোষ জানায়, বেশ কয়েকমাস ধরে এই গ্রামে চুরি, ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে। রাতে কে বা কারা বাড়িতে বড় বড় ঢিল ছোঁড়ে ভয়ভীতি দেখায়।

মঙ্গুলু ঘোষ জানান, ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারি নির্বাচনের সময় থেকে আমাদের হিন্দুদের উপর এমন অত্যাচার করা শুরু হয়েছে। রাতের আধারে মুখ ঢেকে বাড়ির ভিতর এসে বলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেবে, মারধর করবে এমন বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যায় কে বা কারা।

এ বিষয়ে জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, ২০১৪ সালের বছর ৫ জানুয়ারী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ইউনিয়নসহ আরো কিছু ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে হিন্দুরা যাতে ভোট দিতে না যায় সেজন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়। ভোটের দিন ছেপড়িকুড়া, বাসুদেবপুর, গড়েয়া গোপালপুর, গৌরিপুর, আকচা, পশ্চিম শুখানপুখুরী, সন্নাসীপাড়া, চন্ডিপুর, গড়েয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরাজী ঝাড়গাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ককটেল, প্রেট্রোল বোমা ফুটিয়ে সহিংসতা চালানো হয়। এতে বাসুদেবপুর ও গড়েয়ায় গোপালপুরে নির্বাচনি সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয় ।

ভোটগ্রহণ শেষ হবার পর পরই বিকেল থেকে পরদিন গভির রাত পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় চোরাগুপ্তা হামলা, বাড়িঘর-দোকান পাট ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে কষ্টের অর্জিত সম্পদ নিমিষে গুড়িয়ে দেয় বিএনপি ও জামাত । এতে ওইসব এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। জীবন ও সম্ভ্রম হারানো ভয়ে আশে পাশের ৫টি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনুমানিক ৩ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ-শিশু থেকে অবালবৃদ্ধবনিতা সকলে বাড়ীর প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে পাশের ধর্মশালায় আশ্রয় নেয় । সেখানে তারা গাদাগাদি হয়ে ৩-৪ দিন অবস্থান করে।

সামনে নির্বাচন আসছে, তাই আবারো একই পরিস্থিতি তৈরি করতে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা হিন্দুদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা যেন ভোট দিতে না যায় সেজন্য এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের সাহস জোগাতে কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতি আরো বাড়তে পারে, এজন্য আইনশৃঙখলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আরো সজাগ থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

তবে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, ওই এলাকার লোকজনের ভোটে এক সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচনের সময় তারা আমার জন্য অনেক কাজ করেছে। আমিও তাদের পাশে ছিলাম, এখনও আছি। রাজনৈতিক কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এমনও তো হতে পারে তারা নিজেরাই এ কাজ করে বিএনপি নেতাদের এলাকা ছাড়ার পাঁয়তারা করছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, এটি রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ অগ্নিকান্ডটি ঘটানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশের বিভিন্ন শাখার সদস্যরা সতর্ক রয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই দোষিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

(এফআইআর/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test