E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরগুনা-২ : শক্ত অবস্থানে আ.লীগ, প্রতিপক্ষ নড়বড়ে!

২০১৮ ডিসেম্বর ২৫ ১৫:৩৫:১৯
বরগুনা-২ : শক্ত অবস্থানে আ.লীগ, প্রতিপক্ষ নড়বড়ে!

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : চারদিকে পোষ্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে চলছে বিরামহীন প্রচার- প্রচারণা। আ. লীগের শক্তভীত্ এবারে যে আর ভাঙ্গার সাধ্য নাই তা বুঝা- ই যাচ্ছে।

তবুও নির্বাচন বলে কথা! ছাড় দিতে রাজি নন কেউ কাউকে। তাইতো বিএনপি আর ইসলামী আন্দোলন কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। উদ্দেশ্য একটাই জয় ছিনিয়ে নেয়া।

গত ৫ টি ববছর পাথরঘাটা- বামনা- বেতাগী, এই ৩ উপজেলার গণমানুষের পাশে ছিলেন শওকত হাচানুর রহমান রিমন। তাঁর এই সময়কালে মানুষ কতটা শান্তিতে ঘুমুতে পেরেছে আর কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে এলাকার? জাতীয় নির্বাচনের এই মহায়োজনে বড় প্রশ্ন এখন এই একটি। এখানে বিএনপির হয়ে লড়ছেন সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের বার বার নির্বাচিত সভাপতি বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এড খন্দকার মাহবুব হোসেন। আর চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম সরওয়ার হিরু। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের টেবিল টকিংয়ে এই ৩ প্রার্থীর নাম স্থান পেলেও আচম্ কা উড়ে এসে জুড়ে বসা মিজানুর রহমান ওরফে টাওয়ার মিজান তাঁর লাঙ্গল নিয়ে যেনো ভাঙ্গলেই পরেছেন(!)

তাঁকে নিয়ে আলোচনার শুরুটাই ছিলো দূর্নীতি মিশ্রিত। মনোনয়ন ক্রয় কালেই এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পরে মিজান টাওয়ার ১০ কোটি টাকা দিয়েছে এরশাদ সাহেবকে! পরে শোনা গেলো দশ নয় সংখ্যাটি দুই। দুই- দশ যা- ই হোক মানুষ বুঝেগেছে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন নিয়ে এই উড়ে আসা হেলিকপ্টার নেতা আর যা- ই হোক জনদরদী হতে পারে না। আর সেকারনেই বাংলা সিনেমার বিজ্ঞাপনের মত গরম গরম বিনোদন সপ্তাহ পার হতেই যেনো ফুঁস(!)

দেশ স্বাধীনের পরে তিয়াত্তরে মাত্র একবার বেতাগীর ঐতিয্যবাহী খান পরিবার থেকে শাহজাদা আব্দুল মালেক খান এই আসনে প্রথম বারের মত আ. লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এরপরে আ. লীগের তরী আর তিরে ভিরেনি এই আসনে।৭৫ পরবর্তী ষড়যন্ত্রে আ. লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে সাম্প্রদায়িক সরকারগুলো ভিন্নধারার রাজনীতির সূচনা করে এই এলাকাটিতেও। বদলে যায় সাম্প্রদায়িক- সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। এরশাদ সরকারের আমলে এখানে প্রথমে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাথরঘাটার নূরুল ইসলাম মণি।

পরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এই মেধাবী সাংসদ তাঁর মেধাকে অন্ধকার রাস্তা ধরে হাঁটান। অর্থাৎ হিন্দু- মুসলমানের মাঝে ফাঁটল ধরাতে ছড়িয়ে দেন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প।নূরুল ইসলাম মণির সেই সাম্প্রদায়িক নোংরা রাজনীতির অনলে পুড়তে থাকে মানবতা- মনুষ্যত্ব।যার একটি উদাহরন নাচনাপাড়ার নরেশ ডাক্তার ট্র্যাজিডি। সেই থেকে এই এলাকাটির মানুষ প্রগতির ধারায় আর ফিরতে পারেনি। ফিরতে চাইলেও পেছন থেকে টেনে ধরছে প্রক্রিয়াশীল চক্র।বঙ্গকন্যা জেনেবুঝেই তাই এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মনপুত একজন কান্ডারী বেঁছে নিয়েছেন এই সংসদিয় এলাকায়।

এবারেও বিএনপি মণিকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু দলের ত্যাগী নেতা খন্দকারের পেষ্টিজের প্রশ্নে শেষপর্যন্ত তিনি আর টিকে থাকতে পারেননি। দল যেটি- ই করুন না কেনো, মিঃ খন্দকার একজন দেশবরেন্য আইনজীবী।কেন্দ্রে তিনি বড়মাপের লিডার হলেও তৃণমুলে মণির জনপ্রিয়তার কাছে ততটা চ্যালেঞ্জিং নন।

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেকারনেই মানুষ মনে করছে আ. লীগের নৌকার সাথে ধানের শীষ নয় প্রতিদন্ধিতা হবে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার সাথে! হাতপাখা নিয়ে লড়ছেন পাথরঘাটার একসময়ের জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক সাংসদ গোলাম সরওয়ার হিরু। হিরু কালমেঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ এ তাঁর এই দলথেকে বাংলাদেশে একমাত্র তিনি-ই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। এছাড়াও তিনি সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে ধানেরশীষে সাংসদ নির্বাচিত হন একবার।

শওকত হাচানুর রহমান রিমন পাথরঘাটার রায়হানপুর ইউনিয়নে দুবার চেয়ারম্যান একবার পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৭৩ এর পরে বরগুনা২ আসনটি শেখ হাসিনাকে দ্বিতীয়বারের মত উপহার দেন হিরুর- ই আপন চাচাত ভাই গোলাম সবুর টুলু। সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যওয়ার পরে রিমন উপনির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মানুষের মনে জায়গা করে নেন রিমন। ২০১৪ তেও তিনি এই এলাকাটির সংসদ সদস্য হন। আবারও এই আসনে বঙ্গবন্ধুর নৌকার বৈঠা তাঁর- ই হাতে। পারবেন কি তিনি তরী তিরে ভেড়াতে?

২০১৯ এর মুজিব বর্ষে ৩ টি উপজেলার গনমানুষের তরনীর কান্ডারী ভিরুক আবারও তিরে,এমনটিই চাইছেন মুজিমপ্রেমীরা।অপরদিকে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির একটি অংশ প্রকাশ্যেই আ. লীগের রিমনের নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।ইতিমধ্যে যারা আ. লীগে আনুষ্ঠানিক যোগ দিয়েছেন তাদের রিমন বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। অপর অংশ হিরুর হাতপাখার শীতল বাতাসের আশায় ঝুঁকছেন ওই দলের আদর্শের দিকে। আর লাঙ্গলের টাওয়ার মিজান এখানে চরম উপেক্ষিত বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। সবকিছুর ফয়সালার অপেক্ষায় ৩০ ডিসেম্বরের দিকে মুখিয়ে আছেন এলাকাবাসী।

(এটি/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test