E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘নির্বাচনে আ. লীগ পরাজিত হলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র কয়েকগুণ বেড়ে যাবে’

২০১৮ ডিসেম্বর ২৫ ১৬:০৭:৫৪
‘নির্বাচনে আ. লীগ পরাজিত হলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র কয়েকগুণ বেড়ে যাবে’

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারো জয়ী করতে হবে। তা না হলে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন হয়েছিল এবার তার মাত্রা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আবারো দেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করবে।

মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অুনষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে শক্তিকে ভোট দেওয়া সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবির এসব কথা বলেন।

ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা -২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থী সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার, মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোশারফ হোসেন মশু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, বাংলাদেশ মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফেণ্ডার ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার, মানবাধিকার কর্মী পূর্ণিমা শীল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, কলেজ শিক্ষক স.ম তুহিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সম্পাদক জ্যোস্না দত্ত, জেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না আরা, অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি প্রমুখ।
প্রধান অতিথি

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৩ সালের ২০জুন কালিগঞ্জের বিশ্বানাথপুর গ্রামের সরকার পরিবারের জমি জবরদখল করার সময় জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরের নেতৃত্বে ওই পরিবারের এক গৃহবধুকে গণধর্ষণ, মন্দির ভাঙচুর,লুটপাটসহ নির্যাতনের করুন কাহিনী তুলে ধরেন।

শাহারিয়ার কবীর বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু, হুমায়ুন আজাদসহ ১৬ জন সাংবাদিক ও কলামিষ্টকে হত্যা করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত ও শিবির। তারা তো আর আওয়ামী লীগ করতেন না।

স্বাধীনতা পরবর্তী ২৪ বছর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে শোষন ও শাসন করাটা দুঃখের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। হত্যাকারিদের প্রধান ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে এসব ঘটনায় আত্মস্বীকৃত কয়েকজনের বিচার হলেও আইএসআই এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও সিআই এর গুপ্তচরদের শাস্তি হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ১০ হাজার ঘটনায় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। এসব ঘটনায় সনাতন ধর্মের অনুৃসারী ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়া ও নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে তাদের উপর নির্যাতন করা হয় বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়। সিরাজগঞ্জে পূর্ণিমাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল তা সংবাদ সস্মেলন করার সময়শুনতে পেরে বিবিসি’র নারী সাংবাদিক শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। নির্যাতিতদের অনেকেই মামলা করেত পারেনি। আবার মামলা করলেও তুলে নিতে হয়েছে জামায়াত নেতাদের হুমকিতে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সময়ে রামু, নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাঠ হয়েছিল। হামলাকারি জামায়াত শিবিরের লোকজন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করে এসব সহিংসতা করেছিল। জামায়াত ইসলামের সংবিধানে শুধু মাত্র মুসলমান ছাড়া কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি সদস্য হতে পারবে না। যেটা বাংলাদেশর সংবিধানের পরিপন্থী, যে কারণে তাদের সংবিধান বাতিল হয়ে নির্বাচন করতে পারছে না। আজ সেই জামায়াত বিএনপির ঐক্যে ডাঃ কামাল হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ডাঃ কামাল হোসেন ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি সংবিধানে রেখে সংবিধান রচনা করেছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গে্েরনড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা সম্পর্কিত কমিশনের সদস্য হিসেবে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন এ দায় বর্তমান সরকারের। অথচ সেই কামাল হোসেন বিএনপি জামায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্টর নেতৃত্ব দিয়ে নিজের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছেন।

১২ থেকে ৪৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট আছে এমন ৯৬টি কেন্দ্রে তারা ভোট পর্যবেক্ষন করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ৫৮টি কেন্দ্রে নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি বিশেষ কমিটি গঠণ করবে। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকার নয় এলাকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে এজন্য কাজ করতে হবে। ২০০১ সালে ও ২০১৪ সালে নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল।

আগামিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না গেলে ওই অত্যাচার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে সকলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, জামায়াত , মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ও হাইব্রীড আওয়ামী লীগারদের আগামী সংসদীয় নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান শাহারিয়ার কবির। সহিংসতা প্রতিরোধে পাড়ায় পাড়ায় ও মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test