সাতক্ষীরায় নির্বাচনী সহিংসতা : গাড়ি-বাড়ি ভাংচুর, আহত ৩০

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা ১ ও সাতক্ষীরা ৪ আসনে দুই প্রার্থীর ওপর সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। একই সময় এই দুই আসনে ছড়িয়ে পড়েছে  নির্বাচনী সহিংসতা । এসব ঘটনায় তালায় ১০ জন এবং শ্যামনগরে আরও ২০ জন মিলে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্ততঃ ৬ টি গািড় ভাংচুর , একটি নির্বাচনী অফিস ও একজন চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা সাতক্ষীরা  ১ আসনের জাপা দলীয় প্রার্থী প্রবীন রাজনীতিক সৈয়দ দীদার বখতকে হুমকি দিয়ে বলেছে ‘এখানে এলে নতুন খবর হবে। ভোট করার সাধ চিরদিনের মতো ভুলিয়ে দেবো’। 

মঙ্গলবার রাত আটটায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাতক্ষীরা ১ আসনের ( তালা কলারোয়া) জাতীয় পাটির প্রার্থী কেন্দ্রিয় জাপা নেতা বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ দীদার বখত এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন তিনি আজ কলারোয়ায় গনসংযোগ শেষ করে বিকালে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন নগরঘাটা ৩০ মাইল এলাকায় তার গাড়ি বহরে হামলা করেছে নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জজামান লিপু ও তার সহযোগীরা। তার বহরের পথরোধ করে তারা তার দুটি গাড়ি ভাংচুর করে।

তাদের হামলা থেকে তিনি নিজে রক্ষা পেলেও রক্ষা পাননি দলীয় নেতা কাজী আসাদ, আবদুস সোবহান, উপজেলা জাপা সেক্রেটারি এসএম মো. আলাউদ্দিন , শেখ মিরাজ, শেখ জাহাঙ্গির, বিশ্বনাথ, শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন প্রমূখ। তিনি অভিযোগ করে বলেন তার আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মহাজোট প্রার্থীর সমর্থকরা লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তালা ও কলারোয়া এলাকায় দিন রাত মহড়া দিচ্ছে। এর ফলে তিনি মুক্তমনে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না।

তার দলের কোনো কর্মীও কাজ করতে পারছেন না। তার নির্বাচনী প্রচার অফিস ভাংচুর করা হচ্ছে। তিনি বলেন হামলাকারীরা লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে বলেছে ভোটের সাধ মিটিয়ে দেবো। আর যেনো কোনোদিন এখানে দেখি না। মারমুখী লোকজন তাকে ও তার রাজনৈতিক সঙ্গীদের গালিগালাজ করেছে। তিনি জানান এসব বিষয় তিনি জেলা রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি শেখ আজহার হোসেন , সহসভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম,যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা কালু, তালা উপজেলা জাপা সেক্রেটারি এসএম আলাউদ্দিন, জেলা ছাত্র সমাজ সভাপতি কায়সারুজ্জামান হিমেল, সম্পাদক আকরামুল ইসলাম, যুব সংহতির সাবেক সভাপতি সাখায়াতুল করিম বিপুল প্রমূখ নেতা।

এর আগে শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালিতে বিকল্পধারা প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজার একটি পথসভায় হামলা করে মহাজোট প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত এসএম জগলুল হায়দারের সমর্থকরা। তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন বিকল্পধারার তিন কর্মী বিল্লাল, আহসান ও সফিকুল । গোলাম রেজা জানান হামলাকারীরা তাকে বহনকারী একটি গাড়িসহ কমপক্ষে তিনটি গাড়ি ভাংচুর করেছে ।

তিনি বলেন, পাতাখালি ছাড়াও তার বহরের ওপর বুড়িগোয়ালিনী লঞ্চঘাট ও নোয়াবেকিতে হামলা হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ডে বিকল্পধারা প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেছে। রাতে তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন তার প্রতিপক্ষের লোকজন ফের সংগঠিত হচ্ছে। রাতে তারা ফের হামলা করবে বলে হুমকি দিয়েছে। এদিকে পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান অভিযোগ করে বলেন বিকল্পধারা প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজার উপস্থিতিতে বিকালে তার বাড়িতে হামলা হয়েছে। তারা তার বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। লুটপাট করেছে। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হন সুজন, গফুর, কাসেম, সাজিদ ও রোকনুজ্জামানসহ পাঁচজন।

তিনি বলেন, অতর্কিতে এই হামলা হওয়ায় তার লোকজন মার খেয়েছে। তিনি বলেন গোলাম রেজা এ এলাকায় সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন জানান, সন্ধ্যায় বিকল্পধারা প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা তার লোকজন নিয়ে মুন্সিগঞ্জ মুনসুর সরদারের গ্যারেজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেছে। তাদের বেপরোয়া মারপিটে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন হামলার সময় তিনিসহ কয়েক নেতা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন । পরে তিনি ও অন্য নেতারা পুলিশের সহায়তায় শ্যামনসগরে ফিরে আসেন। রাতে সেখানে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা গেছে বলে জানান তিনি।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮)