E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুবর্ণচরে গণধর্ষণ : আরো ২ আসামি গ্রেফতার, আটক হয়নি মূল হোতা

২০১৯ জানুয়ারি ০২ ২৩:২১:০৮
সুবর্ণচরে গণধর্ষণ : আরো ২ আসামি গ্রেফতার, আটক হয়নি মূল হোতা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : স্বামী-সন্তানদের বেঁধে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের বাগ্যা গ্রামে এক গৃহবধূকে (৩২) গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী সোমবার রাতে বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। পুলিশ রাতেই মামলাটি নথিভুক্ত করে এবং অভিযান চালিয়ে বাদশাহ আলম ওরফে কুরাইল্যা বাদশাহ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। বাদশাহ মধ্য বাগ্যা গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে। তবে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মূলহোতা সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে আসামি করা হয়নি।

এদিকে ২ জানুয়ারী গণধর্ষণ মামলার আরো দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দুপুরে কুমিল্লা ও লক্ষীপুর অভিয়িান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এ দিকে বুধবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি কমিটি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আসে। তারা হাসপাতালে ওই নারীর স্বাক্ষ গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার মো: ইলিয়াছ শরীফ জানান, বুধবার দুপুরে কুমিল্লার বরুরা উপজেলার মহেষপুরের একটি ইটভাটা থেকে মামলার প্রধান আসামী সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে মদ্যম বাগ্যা গ্রামের মৃত ইসমাইলের ছেলে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা থেকে মামলার তিন নম্বর আসামী স্বপনকে(৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। সোমবার মামলার ছয় নম্বর আসামী বাসুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে গণধর্ষষের ঘটনা তদন্তে বুধবার দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি কমিটি নোয়াখালী আসে। তারা হাসপাতালে ওই নারীর স্বাক্ষ গ্রহণ করে। কমিটির প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচারক আল- মাহমুদ ফয়জুল কবীর জানান, ভুক্তভোগীর স্বাক্ষ ও ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন।

ওই গৃহবধূ জানান, রবিবার রাত ১২টার দিকে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসী সোহেল, চৌধুরী, সোহেল, বেচু, হেঞ্জু, সোহগসহ ১০ জন তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তার স্বামীকে মারধর ও ছেলেমেয়েদের বেঁধে রেখে তাকে উঠানে নিয়ে যায়। পরে তারা কাপড় দিয়ে গৃহবধূর মুখ বেঁধে সবাই পালাক্রমে ওই নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। সোমবার দুপুরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ধর্ষিতা নারী ।

মামলার বাদী ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, রবিবার দুপুরের দিকে তার স্ত্রী স্থানীয় ভোটকেন্দ্র চরজুবলীর ১৪ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। ধানের শীষে ভোট দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাকে অনুসরণ ও উত্ত্যক্ত করে। তার স্ত্রী এর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন। এ অবস্থায় রুহুল আমিন ও তার লোকজন স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রবিবার গভীর রাতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ১২-১৫ জনের একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চলে যায়। এতে তার স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসককে ডেকে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু গৃহবধূর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে রুহুল আমিনকে কেন মামলায় আসামি করা হয়নি- সে বিষয়ে বাদী বলেন, 'আমি অশিক্ষিত মানুষ; থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলেছি। পুলিশকে বলেছি সব লিখে নিতে। তারা কেন রুহুল আমিনের নাম লেখে নাই, বলতে পারি না।'

রুহুল আমিনকে আসামি না করার বিষয়ে চরজব্বার থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, 'বাদী যার যার নাম উল্লেখ করেছে, তাদেরই আসামি করা হয়েছে। এখানে পুলিশের কিছুই করার নেই।'

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের বিষয়ে বলেন, 'গণধর্ষণের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের সংশ্নিষ্টতার বিষয়টি আমরা শুনেছি। বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করব। তদন্তে রুহুল আমিনের সংশ্নিষ্টতার বিষয় প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেব।'

নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরিফ বিপিএম-পিপিএম (সেবা) বলেন, গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলমান। আসামিরা এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরতে দেরি হচ্ছে। খুব দ্রুতই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়বে বলে পুলিশ সুপারের দাবি।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test