E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

২৪ ঘন্টার মধ্যে বাধ অপসারণের নির্দেশ কৃষি বিভাগের

২০১৯ জানুয়ারি ০৫ ১৭:০৩:৩৯
২৪ ঘন্টার মধ্যে বাধ অপসারণের নির্দেশ কৃষি বিভাগের

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : কৃষি অফিসের উদাসীনতার কারণে আগৈলঝাড়ায় সড়ক ও জনপথের দেয়া বাঁধ এখন হাজার হাজার কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে।

৩ জানুয়ারি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর শনিবার দুপুরে কৃষকের গলার ফাঁস সওজের ওই বাঁধ পরিদর্শন করেছেন বরিশাল কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারী। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিলেন উপ-পরিচালক।

ভুক্তভোগী কৃষককেরা জানান, সমন্বয়হীনতার কারনে বরিশাল সওজ’র সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য উপজেলার প্রধান খালে বাঁদ দেয়ায় আগৈলঝাড়ার পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক পানির অভাবে ধান রোপন করতে পারছেন না। অন্যদিকে মন্থরগতির কারণে রাজিহার-ঘোষেরহাট সড়ক চষে ফেলে রাখায় সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন বিপাকে পরছেন কয়েক হাজার যাত্রী।

সূত্র মতে, উপজেলা সদরে রাজিহার ও গৈলা খালের মুখে দু’টি বাঁধ দেয়ায় ৩৫টি ব্লক পানি সংকট থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকেরা মৌসুম শুরু হলেও পানি সেচের অভাবে চাষাবাদ করতে পারছে না। ওই খালে সাথে স্থানীয় ছোট ছোট খালগুলো শুকিয়ে গেছে। দ্রুত বাঁধ কেটে দেয়া না হলে কোনভাবেই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানো সম্ভব হবে না।

আগাম বোরো ধান রোপনের সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা জানিয়েছেন, বরিশাল সড়ক বিভাগের আওতায় উপজেলা সদর থেকে ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজের গাইড ওয়াল নির্মানের লক্ষ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা অন্তত ১৫দিন আগে ওই দু’টি খালের মুখে বাঁধ দেয়। বাঁধ দেয়ার সময় উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের জন্য মরণ ফাঁদ বাঁধের ব্যাপারে কোন আপত্তিই তোলেনি তারা। কিন্তু ওই বাঁধ দেয়ার পর থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আর ধারে কাছে আসেননি। এমনকি কোন কাজও শুরু করেনি। সংবাদ প্রকাশের পর শনিবার দুপুরে খালে দেয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছেন বরিশাল কৃষি বিভাগের উপ- পরিচালক হরিদাস শিকারী।

এসময় তার সাথে ছিলেন জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা অদুদ খান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায়। তবে বাঁধের ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন দেখা গেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে। উপ পরিচালক শনিবার বাঁধ পরিদর্শনে আসলেও বাধ দেয়ার শুরু থেকে চাষিদের চাষাবাদের জন্য তার কোন ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।

এদিকে আগাম বোরো চাষের ভরা মৌসুমে এখন ধানের চারা রোপন করতে গিয়ে খেতে পানি পাচ্ছেনা কৃষকেরা। ওই দু’টি স্থানে বাঁধ দেয়ায় অন্তত ৩৫টি ব্লকের প^াচ সহস্্রাধিক চাষি পানি না পেয়ে চাষাবাদ শুরু করতে পারছে না। যারা আগাম চাষ করেছেন তাদের ক্ষেতের রোপিত ধানের চারাও পানির অভাবে মরে যাচ্ছে।

প্রধান খালে বাঁধের কারণে ওই খালসহ শাখা খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ইরি ব্লকের মেশিনগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সেচ কাজের জন্য পৌষ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কৃষকদের মেশিন চালানো দরকার। খালে দেয়া ওই দু’টি বাঁধ দ্রুত অপসারণ না করলে উপজেলা সদরের উরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে রাজিহার ও গৈলা ইউনিয়নের সমগ্র এলাকা এবং বাকাল ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় পানি সেচ বন্ধ থাকায় কৃষকদের কাঙ্খিত উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পরবে। আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পরবে কৃষকরা।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল জানান, চলতি বছর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৬শ ৬৩ হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৬ হাজার ৫শ ৪৭হেক্টর ও উফসী ৩হাজার ১শ ১৬হেক্টর জমি। কৃষি বিভাগ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪৩৩১৩ মে.টন চাল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৭শ‘হেক্টর জমিতে আগাম বোরো ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩শ ১৩ মেট্রিক টন চাল। তবে সময়মত এ ধান রোপন সম্ভব না হলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, বাঁধের কারণে চাষীদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বাঁধ অপসারনের জন্য তিনি বরিশাল জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৗশলী, সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারের সাথে কয়েক দফা কথা বলেছেন।

বরিশাল কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারী শনিবার বাঁধ পরিদর্শন শেষে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বাঁধ অপসারণ করতে বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারকে বাঁধ অপসারনের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test