E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে চলছে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির মহোৎসব 

২০১৯ জানুয়ারি ০৫ ১৭:২৪:১৮
সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে চলছে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির মহোৎসব 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধমে চলছে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে  নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির মহোৎসব। সরকারি নীতিমালাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিক্ষক- কর্মচারী নিয়োগ, অব্যহতি, পুনঃনিয়োগ ও এমপিওভুক্তি বাণিজ্যে গত চার বছরে কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি সাতক্ষীরা দিবা- নৈশ কলেজ থেকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে ওই কলেজের জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাদেরই পরামর্শ অনুযায়ি ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ১৭ জন শিক্ষক ও ১৫ জন কর্মচারীকে অব্যহতি দেন। পরে পাঁচজন শিক্ষক্ষকে পূর্ণবহাল, চারজন শিক্ষককে পুনঃনিয়োগ ও নয়জন পিওনকে পূণঃনিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা উৎকোচ নেন।

একইভাবে ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বছরেরে ৩ আগষ্ট এক বিতর্কিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনজন শিক্ষককে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর ৪৫ লাখ টাকার বিনিময়ে যোগদান করান। ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নেন। তবে ১৯১৮ সালের ১৮ এপ্রিল অপিস সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হারুণ অর রশিদের কাছ থেকে১০ লাখ টাকা নেন বলে অভিযোগ। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করলেও হারুন রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে।

অভিযোগ আছে, কৃষি ডিপ্লোমা শাখা, বিএম শাখা, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী, অনার্স ও মাষ্টার্সে ভর্তি ও ফর্ম ফিলাপ বাবদ বিগত চার বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা পকেটস্ত করেছেন আবু সাঈদ। নিবন্ধনের পূর্বে নিয়োগ, কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকা, নিয়োগ সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য দেখানো ও কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ও এমপিওভুক্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২০জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ, ৫জন শিক্ষক পুনঃনিয়োগ এবং জামায়াত নেতা দর্শন বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় একাধিকবার আটক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এ.কে .এম ফজলুল হক, একই বিভাগে সৈয়েদা সুলতানা শিলা, অর্থনীতি বিভাগে জামায়াত নেতা মোঃ কাদির উদ্দীন, মনোবিজ্ঞানে উত্তম কুমার সাহা, হিসাব বিজ্ঞানে ২০১০ সালে নিয়োগকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাশকে বঞ্চিত করে জামায়াত নেতা আব্দুল জলিলের স্ত্রী হিসাববিজ্ঞানের রুনা লায়লাকে নিয়োগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ২০১১ সালে নিয়োগকৃত সিনিয়র শিক্ষক চম্পা রানী হাজরাকে বঞ্চিত করে ২০১৭ সালের মে মাসে ইতিকা রানী মন্ডলকে নিয়োগ, কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকার পরও পরিসংখ্যানে মশিয়ার রহমানকে, উৎপাদন ও বিপণনে মমিনুল হককে, মাষ্টার্সে জাল সনদ থাকার পরও পদার্থ বিজ্ঞানে আজিম খান, খণ্ডকালিন শিক্ষক হয়েও রসায়নে নাজমুন নাহার, কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকার পরও তথ্য জালিয়াতি করে প্রাণি বিজ্ঞানে আশরাফুন্নাহার, নিয়োগের পরে নিবন্ধন হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মোস্তাফিজুর রহমান, প্যাটার্ন বর্হিভুক্ত শিক্ষক হয়েও ইতিহাস বিভাগে মোঃ জাকির হোসেন, একইভাবে প্যাটার্ণ বহির্ভুত প্রাণি বিজ্ঞানে সুরাইয়া জাহান (দিপা), ডিগ্রীর চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে প্যাটার্ণ বহির্ভুত শিক্ষক হয়েওে অর্থনীতি বিভাগে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে মফিজুর রহমান এমপিওভুক্ত করিয়েছেন ।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে এমপিও ভ’ক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় পদার্থ বিজ্ঞানে ২০০৪ সালে নিয়োগকৃত পরিদর্শক মোঃ আব্দুল জলিলকে, গনিতে ২০০৫ সালে নিয়োগকৃত কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক শামছুর রহমান স্বপনকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে বিএসসি শাখায় এবং ২০০৫ সালে নিয়োগকৃত কৃষি ডিপ্লোমা শাখার ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক আবু রায়হানকে নিয়োগ বোর্ড ছাড়াই ডিগ্রী স্তরের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন । এখানে আরোও উল্লেখ্য যে ডিগ্রী শাখায় ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই বছরের ৬ নভেম্বর বোর্ড গঠণ করে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি চুড়ান্ত অনুমোদন করেন।

উক্ত নিয়োগ বোর্ডে পদার্থ বিজ্ঞান, প্রাণি বিজ্ঞান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। রসায়ন এবং গণিতে কোরাম পূরণ না হওয়ায় কোন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়নি । এরপর ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের ২২ শে অক্টোবর পর্যন্ত তৎকালিন কলেজ প্রশাসন বিএসসিতে শিক্ষক নিয়োগের কোন বিজ্ঞাপন দেননি ।

এছাড়া ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করা হয় যে ২০১৫ সারে ২২ অক্টোবরের পর বেসরকারি স্কুল -কলেজে পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবেন না। অথচ সাতক্ষীরা সিটি কলেজর দূর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ ও তার সহযোগী দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং সদর উপজেলার দূর্ণীতিবাজ শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমানের যোগসাজসে প্রতি বিষয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে সরকারের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের অন্তরালে এসব জাল- জালিয়াতি করে যাচ্ছেন।

২০১৮ সালের ৩জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত ডিগ্রী কলেজ গুলোতে নন- এমপিওভুক্ত তৃতীয় শিক্ষকের নামের তালিকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো চিঠিটি পেয়েই অধ্যক্ষ আবু সাঈদ দর্শন বিভাগের শিক্ষক জামায়াত নেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষকদের সাথে দেন দরবার শেষ করে অধ্যক্ষের মনোপুত সৌভাগ্যবান ব্যাক্তিদের নামের তালিকাটিও ২০১৮ সালের ৬জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইডে পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপসচিব মোঃ কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির নির্দেশ দিলে দেখা যায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ওই তারিখের পূর্বে কোন শিক্ষকের নিয়োগ ও যোগদান নেই।

কলেজ গভর্ণিং বডির শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর গঠিত নিয়োগ বোর্ডে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের নিয়োগ ও যোগদান জালিয়াতি করে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পুর্বে নিয়োগ ও যোগদান দেখিয়ে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির মহোৎসব শুরু করে দিয়েছেন । আর এই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুন কুমার সরকারের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জালিয়াতি করে ওই তারিখের পূর্বে নিয়োগ ও যোগদান দেখিয়ে এমপিও ভ’ক্তির জন্য গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন।

স্বজনরা বলেন, অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে আবু সাঈদ গত চার বছরে নিজের স্ত্রীর নামে আশাশুনিতে আট বিঘা জমি, শহরের পলাশপোলস্ত মধুমোলÍারডাঙির একতলা বাড়ি মোজাইক টাইলস বসিয়ে তিন তলা করেছেন। শহরে দু’টি প্লট কিনেছেন। স্বনামে ও বেনামে ব্যাংকে টাকা রেখেছেন।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, তিনি এ কলেজের সমগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তার সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য একটি মহল চেষ্টার চালাচ্ছে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test