E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নড়াইলে হামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না ২০০ পরিবার

২০১৯ জানুয়ারি ০৯ ১৫:০৬:০১
নড়াইলে হামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না ২০০ পরিবার

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে লোহাগড়া উপজেলার পার-মল্লিকপুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার দীর্ঘ ৯ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া। তারা হামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ভয়, আতংক আর নিরাপত্তাহীনতার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি এবং শহর এলাকায় বাসা ভাড়া করে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। একটি হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামীপক্ষের দুই শতাধিক বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। লুটপাট করা হয়েছে এসব বাড়ির মুলবান জিনিসপত্র।

এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউপির পার-মল্লিকপুর গ্রামটি গ্রাম্য কোন্দলের উর্বর উপত্যকা। দীর্ঘদিন ধরে মল্লিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ইউপি সদস্য হেমায়েত হোসেন হিমু সমর্থিত লোকজনদের সাথে একই গ্রামের ৬নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ইউপি সদস্য উজ্জ্বল ঠাকুর সমর্থিত মানুষজনদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে বিগত ২০১৬ সালের ১৬ আগষ্ট উজ্জ্বল ঠাকুর সমর্থিত লোকজনদের আক্রমনে ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম মৃধা ও যুবলীগ নেতা ইকবাল মৃধা খুন হয়। জোড়া খুনের রেশ ধরে হেমায়েত হোসেন হিমু সমর্থিত লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর করে লুটপাট করে গ্রাম ছাড়া করে। এরপর ২০১৮ বছরের ২১ এপ্রিল পূর্ব বিরোধের জের ধরে হেমায়েত হোসেন হিমু সমর্থিত লোকজনদের আক্রমনে উজ্জ্বল ঠাকুর সমর্থিত টিউবওয়েল মিস্ত্রি খায়ের মৃধা খুন হয়।

এই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উজ্জ্বল ঠাকুরের লোকজন আসামীপক্ষ হেমায়েত হোসেন হিমু গ্রামের লোকজনের ওপর অন্যায়-অত্যাচার শুরু হয়। এ সময় হিমু পক্ষের সমর্থকদের অন্তত ২শত বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। খুলে নেয়া হয়েছে বাড়ি ঘরের জানালা, দরজা সহ মুল্যবান জিনিসপত্র।

ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের মাতুব্বার হেমায়েত হোসেন হিমু জানান, গ্রাম্য কোন্দলের জের ধরে উজ্জ্বল ঠাকুর সমর্থিত লোকজন মজিবর মৃধা, তজিবর মৃধা, নূর ইসলাম মৃধা, রাসেল মৃধা, মুক্তার মৃধা, নাইম মুসল্লী, ইকবাল মৃধা, হুমায়ুন মৃধা, কায়েম মৃধা, ওলিয়ার শেখ, খোকন মুসল্লী, তবিবর মোল্যা ১৮টি পরিবারের পাঁকা ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বাদশা মৃধা, লুৎফর মৃধা, হোমেত মৃধা, বিপ্লব শেখ, লিটু শেখ, হেমায়েত হোসেন হিমু, রাজা মৃধা, জামাল মোল্যা, এনায়েত মোল্যা, আমিনুর রহমান বাবলু, মজিবুর রহমান শেখ, নান্নু শেখ , শুকুর শেখ, সামাদ শেখ, হোসেন শেখ, টফি শেখ, সোহরাব শেখ, এরশাদ শেখ, নাজির মৃধা, পান্নু মৃধা, ইলিয়াস মৃধা, হাই শেখ, বালাম শেখ, সাহিদ কাজী, ওলিয়ার রহমান কাজী, আকরাম মুন্সী, রিজ্জাক মুন্সী, হাসান বিশ্বাস, রেজাউল বিশ্বাস, জলিল শেখ, কাফী মৃধা, মফিজ মৃধা, ইকরাম মৃধা, খোকন মুসল্লী, আব্দুল্লাহ সরদার, আকরাম সরদার, লাহু মুন্সী, আনোয়ার গাজী, দবির উদ্দিন শেখ, কামাল মোল্যা, আছলাম মোল্যা, ইউনুছ কাজী, হামিম কাজী, রাজা মিয়া, হিরু শেখ, হাসান শেখ, সুমন শেখ, রবিন শেখ, ছিকুল মোল্যা সহ অন্তত ৭টি আধা পাঁকা বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ওহিদুজ্জামান বলেন, হত্যাকান্ডের পর শিশু থেকে বৃদ্ধরা পর্যন্ত গ্রাম ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ও শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। অনেকের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে এসব পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আ’লীগ নেতা ইউপি সদস্য উজ্জ্বল ঠাকুর বলেন, ‘‘২০১৬ সালে হেমায়েত হোসেন হিমু গ্রুপের নূর ইসলাম ও ইকবাল মৃধা খুন হয়। তখন আমাদের পক্ষের বাড়িঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলো। এবার আমাদের পক্ষের খায়ের মৃধা মার্ডার হওয়ার পর আমাদের লোকজন ওদের কিছু বাড়িঘর ভাংচুর করেছে।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ওই গ্রামের বিবাদমান দুটি পক্ষকে মিলে মিশে বসবাস করার জন্য বলা হয়েছে। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খুব শীঘ্রই ওই গ্রামে শান্তি সভা আহবান করে দুপক্ষকে সহঅবস্থান করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test