E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফুলবাড়ীর শাখা যমুনা নদীটি এখন মরা খাল!

২০১৯ জানুয়ারি ১০ ১৫:১৫:৪৪
ফুলবাড়ীর শাখা যমুনা নদীটি এখন মরা খাল!

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খর স্রাতা শাখা যমুনা নদীটি কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। ময়লা আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে উঠেছে, সে কারণে বছরের বেশি ভাগ সময় এ নদীতে পানি থাকে না, নদীর পাড়ে কিছু কিছু যায়গা দখল হয়েছে, নদীর বুক চিরে পুরোদমে চলছে চাষাবাদ। অথচ এক সময় এই নদীই ছিল এই অঞ্চরের মানুষের জিবন-জীকার একমাত্র উৎস, এখন সে সব শুধুই স্মৃতি।

আমাদের এই দেশ নদী মাতৃক দেশ, এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে অনেক নদ-নদী সেই নদী গুলো আজ বিলিনের পথে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এই শাখা যমুনা নদীটি, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুিড় নামক স্থানে ইছামতি নদি থেকে উৎপত্তি হয়ে জেলার ফুলবাড়ী, উপজেলা হয়ে, জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলা দিয়ে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ত্রিমোহনী যমুনা ও আত্রই নদীতে মিলিত হয়েছে।

দিনাজপুর পানি উন্নায়ন বোর্ড জানিয়েছে, আকাঁ-বাকাঁ পথে এই নদীটির দৈর্ঘ সাড়ে তিন’শ কিলোমিটার, এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই নদীটি এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম ছিলো। এই নদীকে ঘেষে গড়ে উঠেছে শহর এবং হাজারো বসতি। এই নদীর পানি সেচ দিয়ে এক সময় চলতো এই অঞ্চলের কৃষকের চাষাবাদ ও ঘর-গৃস্থালীর কাজ। এই নদীর মাছ দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের মাছের চাহিদা পুরোন হতো, জিবীকা নির্বাহ করতো অনেক জেলে সম্প্রদয়েরা, সেই নদীটি এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। নদীটি দির্ঘ সময় সংস্কার না করায়, প্রতিবছর বন্যায় নদীর তলদেশে পলি জমে নদীটির নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে, নদীর পাড় দখল করে অনেকে গড়ে তুলেছে দালান, ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীকে করছে দূষণ ।

নদীটিতে বছরে বেশিভাগ সময় পানি থাকেনা, নদীর বুক চিরে এখন বিভিন্ন রকমের ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফসল উৎপাদন করতে নদীর পাড় কেটে জমি তৈরী করছে অনেকে, এই কারনে বন্যা আসলেই নদীতে পলির স্তর আরো বেশি করে জমে যাচ্ছে।। এক সময় কৃষকরা নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করলেও, এখন নদীতে পানি না থাকায় সেচপাম্প এর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। নদী পাড়ের বাসীন্দারা বলছেন নদীতে পানির ধারন ক্ষমতা না থাকায়, বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়ে যায়, নদীর পানি ঘর-বাড়ীতে প্রবেশ করে। বর্তমানে ফুলবাড়ী পৌর শহরে ২৫ হাজার লোকের বসবাস। শহরের পানি নিস্কাশনের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে এই নদী। নদীর শ্রোত না থাকায় ড্রেনের পানি প্রবাহিত না হওয়ায় পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। পচা দূগন্ধে আশপাশের মানুষের বসবাস করা কষ্টকর হয়েছে,স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাদের নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এদিকে উপজেলা মৎস অধিদপ্তর জানিয়েছে, নদীতে পানি না থাকায় দেশি প্রজাতির মাছের বংশ হারিয়ে যাচ্ছে, মৎস্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী সাধু পানিতে ২০১ প্রকার প্রজাতির মাছ থাকলেও, এই অঞ্চলে প্রায় ৫০ প্রকার মাছও আর দেখা যায়না।

নদীতে পানি না থাকায় সেচ পাম্প দিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে তাই নদীটি দ্রুত খনন করা প্রয়োজন এমনটাই জানিয়েছে কৃষকেরা। নদীটি সময় মতো সংস্কার করা না হলে এক সময় বিলিন হয়ে যাবে এ নদী, তাই দ্রুত সংস্কার করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন এ এলাকার সচেতন মানুষেরা।

ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মোঃ মুরতুজা সরকার মানিক বলেন,এই নদী প্রায় ২০ বছর যাবৎ অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে নদীটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এই নদী খনন করে আবার নদীর জীবন ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে ফুলবাড়ীসহ আশ পাশের অনেক উপজেলার পরিবেশ মারাক্ত ক্ষতির মুখে পড়বে। বিষটি গুরুপ্তপূর্ন ভাবে বিবেচনা করে দ্রুত উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন,নদীর পানি দিয়ে সেচ এবং নদীর মাছ সংরক্ষনে নদীর প্রবাহমান থাকা জরুরী । খাল খনন ও নদী খনন কাজ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে,এ উপজেলায় অনেক জায়গায় এই কাজ চলছে,ফুলবাড়ী উপজেলার মাঝ খান দিয়ে যে ছোট যমুনা নদী বয়ে গেছে তার অনেক নব্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো।

উপজেলার অনেক সচেতন মানুষ মনে করেন সমাজের কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যাক্তিরা নদীর দুই ধার দখল করে গড়ে তুলেছে ইমারত,ছোট যমুনা নদীর এক সময়ের প্রসস্ত নদী পথ বর্তমান সময়ে নালায় পরিনত হয়েছে, অসচেতনতার কারনে শহরের বর্জ আবর্জনা ফেলছে নদীতে ফলে শহর এলাকায় নদীর নব্যতা অনেকাংশে কমে গেছে বন্ধ হয়ে গেছে নদীর শ্রত।

(এইচআর/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test