E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খরস্রোতা সাঁইডুলি নদী এখন ফসলের মাঠ! 

২০১৯ জানুয়ারি ১৪ ১৬:২১:১২
খরস্রোতা সাঁইডুলি নদী এখন ফসলের মাঠ! 

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নাব্যতা হারিয়ে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় এক কালের খরস্রোতা সাঁইডুলি নদী এখন ভরাট হয়ে গিয়ে ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে নদীতে নেই পানি, নেই মাছ। এতে প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে বেকার হয়ে দিন যাপন করছেন।

এক কালের খরস্রোতা এই সাঁইডুলি নদীতে সারা বছরই ছোট বড় অসংখ্য নৌকা চলাচল করত। নদী পথে বানিজ্য করার জন্য সে সময়ে নৌকা দিয়ে ধান পাট সহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করে সাঁইডুলি নদীর তীরে গোগ বাজারে গড়ে ওঠেছিল বানিজ্য কেন্দ্র। আজ নদীতে নেই পানি প্রবাহ, নেই নৌ ঘাট, নেই বানিজ্যের মোকাম। অতিতের স্মৃতি এখন কালের সাক্ষী হয়ে শুধু গোগ বাজারটি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে তিন চার মাস সাঁইডুলির বুকে কিছুটা পানি প্রবাহ দেখা দেয়। তখন ছোট বড় কিছু নৌকা চলাচল করলেও সারা বছরই নদীতে যৌবন থাকেনা। ফলে একটিকে আর নদী রূপে গণ্য করা হয়না।

বর্তমানে এই নদীটি চর পরে গিয়ে ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে। নদীর সব রূপ লাবণ্য হারিয়ে হয়েছে মরা নদীতে পরিনত। পানি শূণ্য নদীতে শুকিয়ে থাকা স্থানে তৈরি করা হয়েছে ফসলের মাঠ এবং গো-চারণ ভূমি। পায়ে হেটেই নদী পার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। নদীর বুকে কোথাও কোথাও তৈরি করা হয়েছে বোরো ধানের বীজতলা, আবার কোথাও কোথাও চাষ করা হয়েছে সরিষা, ধান সহ নানা রকম ফসলের। নদীর আশে পাশের তীরবর্তী গ্রামের কৃষক জেলে পরিবার গুলোও নদীর নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের মনও শুকিয়ে গেছে।

বোরো মৌসুমে এই নদীর পানি দিয়ে দু’পাশের জমিতে সেচ দিয়ে এলাকার কৃষকরা তাদের জমি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো চাষ করতে গিয়ে অনেক দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অপর দিকে যে সব জেলে পরিবারের জীবিকার নির্বাহের একমাত্র উপায় ছিল এই সাঁইডুলি নদী, তারাও আজ মাছ ধরতে না পেরে অনেকেই পেশা বদল করে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে হয়েছেন এলাকা ছাড়া।

সাঁইডুলি নদী তীরবর্তী নওপাড়া ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, এই নদীতে মাছ ধরে এবং তা বিক্রি করে জেলেদের সংসার চলতো। এখন নদীতে পানিও নেই মাছও নেই। জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ সংসার চালাতে এলাকা ছেড়ে যে সব নদী এলাকায় পানি আছে সে সব এলাকায় চলে যাচ্ছেন।

এই গ্রামের কৃষক মুক্তুল হোসেন বলেন, নদীতে পানি না থাকায় বোরো জমিতে সেচ দেয়া খুব কষ্ট হচ্ছে। সেচের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নলকূপ বসানো হলেও তাতে খরচও অনেক বেশি।

নদী তীরবর্তি কান্দিউড়া ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ভূঞা জানান, সাইঁডুলি নদীটি এক সময় খুবই খরস্রোতা ছিল। সারা বছর ছোট বড় অনেক নৌকা চলাচল করত নদীতে। এখন নদীতে পানিও নেই, মাছ নেই, নৌকাও নেই। ফলে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীতে মানুষ তৈরি করেছেন ফসলের মাঠ ও গো-চারন ভূমি। তিনি এই নদীটি খনন করার মধ্য দিয়ে নদীতে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে এনে স্থানীয় জেলেদের কর্মসংস্থান এবং কৃষকদের জমিতে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

কান্দিউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ জানান, সাঁইডুলি নদীতে সারা বছর নৌকা চলাচল করত, নৌকা দিয়ে ধান, পাট সহ বিভিন্ন পন্য বানিজ্য কেন্দ্র গোগ বাজারে আসত, কিন্তু এখন নদীটি একেবারেই মরে গেছে। তিনি এই নদীটি খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে শত শত জেলে পরিবারের কর্মের সংস্থান, ব্যাবসায়ীদের বানিজ্য ও সেচ কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার কৃষকের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি অসীম কুমার উকিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

কেন্দুয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো: দেলোয়ার হোসাইনের সঙ্গে সাঁইডুলি নদী নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাঁইডুলি নদীটি এখন মৃত প্রায়। এই নদীতে করা হয় এখন ফসলের মাঠ। নদীটি খনন করা হলে বর্ষা মৌসুমে নদীতে ডিমওয়ালা মাছের অভয়াশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া নদীর নাব্যতা ফিরে পেলে জেলেরা পাবেন তাদের কর্মের সংস্থান এবং কৃষকের জমিতে সেচ কাজ দিতে পেরে ফুটে উঠবে হাসি। তিনিও এই নদীটি খননের প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বে সঙ্গে তুলে ধরেন।

এছাড়া জেলেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে জেলেদের নিবন্ধনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা পেলে এই জেলেদের বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

(এসবি/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test