E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মদনের ধলাই নদী এখন ফসলের মাঠ

২০১৯ জানুয়ারি ১৫ ১৫:৪৯:৫৮
মদনের ধলাই নদী এখন ফসলের মাঠ

আল মাহবোব আলম, মদন (নেত্রকোনা) : খননের অভাব ও উজান থেকে নেমে আসা পলি-বালি জমে মরে যাওয়া ধলাই নদী এখন ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে।  চৈত্র মাস আসার আগেই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরায় শুকিয়ে যায় এ নদী। নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। দখল করে চাষাবাদ করছে পাশের জমির লোকজন। 

এক সময় এ নদী পথে লঞ্চ, কাগোর্, বড়,ট্রলার যাতায়াত করলেও বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের কাছে এ গুলো এখন স্বপ্নের ব্যাপার হয়ে পড়েছে। ধলাই নদীর একটি শাখা ফতেপুর ফেরিঘাটের মগড়া নদীর মোহনা থেকে শুরু করে রামগোপালপুর,ছত্রকোনা,বিন্নী হয়ে ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আবার দড়িবিন্নী গ্রামের পাশে মগড়া নদীতে মিশেছে।অপর শাখাটি দেওয়ান পাড়ার সামনে দিয়ে আলমশ্রী, রোদ্রশ্রী, মাখনা, শিবপাশা, বাড়ৈউড়া, তিয়শ্রী, বাস্তা, চন্দ্রতলা, রাজতলা, বাঁশরী হয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কৈজানি নদীতে মিশেছে। উক্ত দুটি শাখা নদীতে পলিজমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর পাশের জমির মালিকরা দখল করে ধান উৎপাদন করছে। ফলে এ দুটি শাখা নদীর উপকার থেকে জনগণ সম্পূর্ন ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এগুলোর ওপর কর্তৃপক্ষের সুনজর না দেওয়ায় দিন দিন দখলদারদের দৌরাত্ত্ব বাড়ছে।

মঙ্গলবার সরজমিনে গেলে, নদীর কোন কোন স্থানে চর,আবার কোথাও কোথাও হাটুপানি রয়েছে। নদীর উপরের ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রোপন করার দৃশ্য চোখে পড়ে। মনে হয় নদীর কোন অস্থিত নেই।

নদী খনন করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষার দাবিতে বেসরকারি সংগঠন জনউদ্যোগ জেলা সদরে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে প্রশাসনের কাছে দাবি জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। আর জনগণ এ নদীর সুফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিয়শ্রী গ্রামের কৃষক আজিম মিয়া জানান, কৃষি কাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদীপাড়ে বসবাসকারী মানুষ। এছাড়া পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই জনগণের। এতে নদী পাড়ের গ্রামের জেলেরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, যেভাবে নদী গুলো দখল হচ্ছে, তাতে যে কোন মূহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার আশংকা রয়েছে।

তিয়শ্রী বাজারের ব্যবসায়ী আরজু মিয়া জানান, এক সময় এ নদী পথে লঞ্চ,কার্গো,ট্রলার চলাচল করত। কয়েক বছর আগেও এমন সময় বিভিন্ন উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন নদী মরে গেছে। নৌপথ বলতে আর কিছু নেই।

হাসনপুর গ্রামের জেলে বিসু বর্মণ জানান,আগে মগড়া ও ধলাই নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদী শুকিয়ে ফসলী মাঠে পরিনত হওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি।

ধলাই নদীতে বোরো ধান চাষ করা কৃষক ফতেপুর গ্রামের ইনঞ্জিল খান জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমার জমির পাশে নদীতে ধান চাষ করছি। তবে সরকারি ভাবে কোন নিষেধ আসলে আমি ধান চাষ করব না।

মদন উপজেলার সুধীজনের আশঙ্কা, জরুরী ভিত্তিতে নদী খনন করা না হলে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে এই নদী বিলীন হয়ে যাবে।

সচেতন মহল প্রাকৃতিক সম্পদ, জলজ প্রাণি রক্ষায় নদীগুলো খননের জন্য প্রশাসেনর কাছে দাবি জানাচ্ছেন।

পরিবেশবাদী ও মদন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোতাহার আলম চৌধুরী জানান, নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় মানুষের ব্যয়বার বাড়ছে। নদীর উপকারীতা থেকে লোকজন বঞ্চিত হচ্ছে। তবে নদীগুলো জরুরী ভিত্তিতে খননের জোরদাবী জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান বলেন,মদন উপজেলা দিয়ে যে মগড়া নদী প্রবাহিত হয়েছে তা খনন কাজ শুরু হয়েছে। ধলাই নদী খননের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করব।

(এএমএ/এসপি/জানুয়ারি ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test