E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

জবইবিল ও পুণর্ভবা নদীতে অতিথি পাখি শিকারীরা তৎপর

২০১৯ জানুয়ারি ১৬ ১৭:০১:৫২
জবইবিল ও পুণর্ভবা নদীতে অতিথি পাখি শিকারীরা তৎপর

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর সীমান্ত ঘেঁষা সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিল ও সীমান্তবর্তী পুণর্ভবা নদীতে প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি প্রতিনিয়ত শিকারীদের হাতে নিধন হচ্ছে। অবাধে পাখি শিকার করায় একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জবাই বিলের জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ। 

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, একদল শিকারী প্রতিদিন বিল ও নদী থেকে পাখি শিকার করে বিভিন্ন গ্রাম বাজারে, শহর-বন্দরে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। পাখি শিকার যে “আইনত দন্ডনীয় অপরাধ” তা জানা সত্বেও পাখির মাংসের স্বাদ ও টাকার লোভে এক শ্রেনীর মানুষ পাখি গুলো অবাধে শিকার করছে।

বুধবার জবইবিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, বর্ষার শেষ ভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করার কারণে বিলের জমি জেগে ওঠে। ওই জমিতে অল্প পরিমাণে পানি থাকায় দু-একটি ছোট মাছ ও শামুক, পোকা-মাকড় থাকে, যা খাওয়ার লোভে অতিথি ও দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা দল বেধেঁ বিলে ভিড় জমায়। এই সুযোগেই কিছু লোভী শিকারী বিল ও নদীর জলে ফাঁস জাল, বিশেষ ফাঁদ ও দানাদার বিষ দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে পাখি শিকার করে।

এ ছাড়াও বিলে এক শ্রেণীর মৎস্যজীবি মাছের পাশা-পাশি ভোর রাতে কারেন্ট জাল দিয়ে বালিহাস, বক, চাহাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করে। তিনি আরও জানান, এবার শীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরন দেখা গেছে। জবাই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বিল থেকে বিলুপ্ত ও হারানো প্রজাতীর পাখি পাতি সরালি (Dendrocygna javanica) আবার বিলে ফিরে আসছে। জবাই বিল ও পূণর্ভবা নদীতে এই পাখিরা দিন রাত বিচরন করছে।

জবাই বিল ও পূণর্ভবা নদীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে অতিথি পাখির বিচরন এবার নতুন রূপ দিয়েছে। দিনরাত কিচির মিচির কলতানে মুখরিত বিল ও নদী যা দেখে পাখি প্রেমিকদের মন জুড়ে যায় । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সুন্দর পাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারীর হাতে ধরা পড়ছে। রাতের আধারে শিকারীরা বিলে ও নদীর জলে জাল পেতে রেখে অবাধে ওই পাখি শিকার করছে। জবই বিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি একজন শিকারীকে হাতে নাতে ধরতে সক্ষম হয়। এ সময় শিকারীর নিকট থেকে পাখি ও জাল আটক করা হয়। পরে আটকৃত শিকারী ভুল স্বীকার করায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জীব বৈচিত্র সংরক্ষনে পরিবেশ বাদী সংগঠনের তৎপরতা ও স্থানীয় বন বিভাগসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারী ও জন সচেতনা মুলক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ে বন্যপ্রানী ও পাখি শিকার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কলমুডাঙ্গা চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন সকালে প্রতি জোড়া চাহা পাখি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, বালিহাঁস প্রতিটি ৩০০টাকা, বক ও কক পাখি ৩০০টাকা জোড়া হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। জবই বিল ও পুণর্ভবা নদী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালালেও জনসচেতনতার অভাবে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে এই বিষয়ে আইন পাশ হলেও পাখি শিকার বন্ধে ওই আইনের কোন প্রয়োগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সরকারি ভাবে পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি জন প্রতিনিধিসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

(বিএম/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test