E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলে অর্থাভাবে বিছানায় ধুঁকছে শিশু ইমরান

২০১৯ জানুয়ারি ১৭ ১৫:৩৯:৪০
নড়াইলে অর্থাভাবে বিছানায় ধুঁকছে শিশু ইমরান

নড়াইল প্রতিনিধি : শিশু ইমরান (১১) চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ছলে উঠেছিল নারকেল গাছে ডাব পাড়তে। সেখান থেকে পড়ে গিয়ে দ্বি-খন্ড হয়েছে বাম পায়ের উরুর হাড়। গত ৮ ডিসেম্বর এ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাভাবে যায়নি কোনো চিকিৎসকের কাছে। সেই থেকে এ পর্যন্ত চলছে কবিরাজি চিকিৎসা। হতদরিদ্র পরিবারে মেধাবী এই শিশু এখন নিজের বাড়িতে বিছানায় পড়ে ধুঁকছে। কিভাবে শিশু ইমরানের চিকিৎসা হবে- তা ভেবে পরিবারের লোকজন ভেঙ্গে পড়েছেন।

ইমরান নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চারকালনা গ্রামের রেজাউল শেখের ছেলে। সে পার্শ্ববর্তী টি চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইমরান বড়। ছোট বোন ফাতেমা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই ইয়ানুরের বয়স চার বছর। ভ্যানচালক রেজাউল শেখের কোনো জমিজমা নেই। ছোট্ট একটি ঝুপড়ি টিনের ঘরে তাঁদের বসবাস। ভ্যান চালিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে তাঁর সংসার।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে আছে ইমরান। নড়তে পারছে না। প্রসাব-পায়খানাসহ সবকিছু বিছানায়। ভাঙ্গা স্থানে উরুতে ঘা হয়েছে। কবিরাজের চিকিৎসায় গাছগাছড়া বাঁধা হয়েছে ভাঙ্গা স্থানে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাঁর পাশে বসে কাঁদছিলেন তাঁর মা ও দাদি। তখন চোখ ছলছল করছিল ইমরানের। অন্য আত্মীয়-স্বজনেরা এসে হাহুতাশ করছেন।

ইমরান জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হয়। গ্রামের এক বন্ধুর বাড়িতে গাছে উঠে ডাব পাড়তে। তখন ডাল ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। সেখানে ঘটে এ দুর্ঘটনা।

ইমরানের মা বাহারুন বেগম বললেন, ‘স্বামীর আয়ে তিনবেলা ভাতই জুটাতে পারি না। চিকিৎসা করাব কীভাবে ? ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতো কোনো টাকাই আমাদের নেই। গরীব মানুষ, তাই ধারও পাওয়া যায় না। উপায় না পেয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করাচ্ছি।’

গত সোমবার এক্সরে করে দেখা গেছে হাড়ের দ্বিখন্ডিত নিচের অংশ বেড়ে পাশ দিয়ে এক ইঞ্চির মতো উপর দিকে উঠে গেছে। এ ব্যাপারে কথা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) অর্থোপেডিক সার্জন সুজিৎ কুন্ডুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং ভালো চিকিৎসা দরকার। তা না হলে ওই পা ছোট ও বাঁকা হয়ে যাবে। এ থেকে হাটু ও কমরে ব্যাথা শুরু হবে। আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিবে।’

টি চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আরা বলেন, ‘ইমরান বেশ চটপটে, বিনয়ী ও মেধাবী। এই হতদিরদ্র পরিবারের শিশুটি প্রযোজনীয় চিকিৎসা না পেলে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। সরকার, বা কোনো সংস্থা বা সচ্ছল ব্যক্তিদের তাঁর পাশে দাঁড়ানো দরকার।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test