E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কুয়াশাতেও ভিজে তাদের কাঁথা!

২০১৯ জানুয়ারি ১৯ ১৫:২৬:২৯
কুয়াশাতেও ভিজে তাদের কাঁথা!

মোঃ ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : আসমানিরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার চানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড় বড় করে, তারি তলে আসমানিরা থাকে বছর ভরে। পেটটি ভরে পায়না খেতে বুকের ক’খান হাড়, সাক্ষি দেছে অনাহারে ক’দিন গেছে তার।

বাঙ্গালির প্রাণের কবি, গানের কবি এবং পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের কবিতাটির বাস্তবতার খোঁজ মেলেছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর বৈশাখী গ্রামের মোঃ ফারুক (৩২) ও আমির হোসেন (২৯) এর বাড়িতে। বৃষ্টি নয় শীতে কুয়াশায়ও ভিজে যায় তাদের কাঁথা। আমাবশ্যায় রাতের তারা আর জোৎস্না রাতে আকাশের চাঁদ দেখা যায় তাদের দু সহদর ভাইয়ের ঘর থেকে। ছাওনি বলতে কুড়িয়ে পাওয়া খড়কুড়ো আর খুজে পাওয়া পলিথিন দিয়েই কোনমতো দিন পার করছে তারা। এভাবেই কাটছে তাদের সংসার।

রোজগার বলতে ক’বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রতিবন্ধি কার্ডের মাসে ৭০০টাকা। এতেই চলে দু পরিবারের সংসার। দিনে একবেলা বা দু বেলা বা কোনদিন উপোষ করেই কাটাতে হচ্ছে তাদের। হাত পা অকেজো বলে কোন প্রকার কাজ করতে পারেনা তারা। নিজের গায়ের জামাটাও খুলে দিতে হয় অন্যকেউ। কোনক্রমে বসলে আবার দাঁড় করাতে লাগে কারো সহযোগিতা।

মোঃ ফারুকের স্ত্রী আর দু পুত্রের সংসার। বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। থাকে নানার বাড়িতে । আর ছোট ছেলেকে কাজে দিয়েছে অন্যত্র। সংসারে অভাব আর অনটনে ছেলেদের সাথে তেমন দেখা হয়না ফারুক দম্পত্তির। কি রোগ হয়েছে তাও জানেনা সে। কারণ অর্থের অভাবে আজও কোন ডাক্তার দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে সহদর ভাই আমির হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বয়স ৮ এবং বড় ছেলের বয়স ৪বছর ও ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৪মাস। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে ৫সদস্যের সংসার। একই ছকিতে একই কাঁথায় কাটছে তাদের দিনরাত। প্রতিটি পরিবারের মতো তাদের বড় কোন স্বপ্ন নেই। আছে দু বেলা খাবারের আর মাথা গোজার একটু আশ্রয়ের চাহিদা।

দু’ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সুস্থ ছিলো ,খেলতো,স্কুলে যেতো আর আট দশটা ছেলে মেয়ের মতো তারাও স্বাভাবিক ছিলো। ছোট কালে তেমন কোন রোগও হয়নি। হঠাৎ পনের বা ষোল বছর বয়স থেকে হাত পা শুকিয়ে চিকন হতে লাগলো ফারুকের। বছর দুয়েক পর তার ছোট ভাই আমিরের ও একই অবস্থা। এরপর থেকে কর্মঅক্ষম হয়ে যাচ্ছে তারা। স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা কোন প্রকার কাজও করতে পারেননা আর।

জানা গেছে তাদের বাবাও এমন রোগে আক্রান্ত ছিল। তিনি মারা গেছেন ২০০৩ সালে। এ রোগের প্রায় ১৫ বা বিশ বছর পর তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ও কোন ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি। ফলে কি রোগ হয়েছে জানা যায়নি। ফারুক এবং আমির হোসেন ছাড়াও তাদের আরোও এক বোন এ রোগে আক্রান্ত। মোটকথা তাদের ৬ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে ২ভাই ও এক বোন এ রোগে আক্রান্ত। তারা জানিয়েছে,তাদের বাবা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর নাকি তাদের এ তিন ভাই বোনের জন্ম হয়েছে।

একই বাড়িতে এদুই ভাইয়ের যেমনি মানবেতর দিন কাটছে, তেমনি বিনা চিকিৎসায় দিনদিন মৃত্যু প্রহর গুনছে তারা। এমন কোন নির্দয় পাশন্ড নেই তাদের পরিবারের এমন চিত্র স্ব-চক্ষে দেখলে চোখে পানি আসবেনা। বা কোন রুপ করুনা হবেনা। কিন্ত বাস্তব হলেও সত্য যে, এভাবেই এলাকার ধণ্যাঢ্য পরিবার ,ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা প্রতিটি রাজনৈতিক পরিবারই এদের দুয়ারে আসতে হয়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এরাই তাদের ভাগ্য বদলানোর জন্য একদিন কামলা খাটে। কিন্ত এদের ভাগ্য বদলানের কোন লোক আজো হয়নি।

সমাজ, দেশ, বিদেশ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদরে প্রতি তাদের চাহিদা জানতে চাইলে , দুমুঠো ভাত, মাথা গোজার আশ্রয় আর সুচিকিৎসাই এদের চাওয়া বলে অশ্রুশিক্ত হয়ে এমনটাই বললেন দুই সহোদও ভাই মোঃ ফারুক ও আমির হোসেন।

(আইইউএস/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test