E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে দুদক আতংকে চিকিৎসকরা!

২০১৯ জানুয়ারি ২২ ১৭:১৭:৩৩
দিনাজপুরে দুদক আতংকে চিকিৎসকরা!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ‘দুদক’ আতংকে রয়েছেন,দিনাজপুরের সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা। তারা দায়িত্ব পালনে এখন কৌশল অবলম্বন করছেন। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সোমবার হঠাৎ দুদক এর অভিযানে সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি। 

দুদক বলছে, চিকিৎসকদের ৪০ ভাগই ছিলো না হাসপাতালে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত হয়েও হেয়ালিপনায় উপস্থিতি খাতায় সই-স্বাক্ষর না করায় দুদকের কাছে অনুপস্থিতি ধোরা পড়েছে। আজ মঙ্গলবারো ছুঁটিতে থাকা ৪ জন বাদে সব চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছে বলে দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সোমবার হঠাৎ দুদক এর অভিযানে কথা স্বীকার করেছেন, দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপ-পরিচালক বেনজির আমহমেদ।

মুঠোফোনে তিনি জানান, মামলার স্বাক্ষী দেয়ার কাজে আমি রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছি। ঘটনা সঠিক। আমার অফিসের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে। চিকিৎসকদের ৪০ ভাগই ছিলো না হাসপাতালে। স্বাস্থ্য সেবা মান নিশ্চিত করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায় ডা. আহাদ আলী বলছেন, চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত হয়েও হেয়ালিপনায় উপস্থিতি খাতায় সই-স্বাক্ষর না করায় দুদকের কাছে অনুপস্থিতি ধোরা পড়ে। আজ মঙ্গলবারো ছুঁটিতে থাকা ৪ জন বাদে সব চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।

তিনি বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। তারমধ্যে ৩৩ জন চিকিৎসকের পদেই শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৫ জন কিচিৎসক কর্মরত রয়েছেন। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে রোগির আগম বেশি। এই স্বল্প সংখ্যক চিকিৎস দিয়ে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে ৫০০ থেকে ৬৫০জন রোগি এবং ইনডোরে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ জন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। গতমাসে এ হাসপাতালে ৭২জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব এবং ৪২ জন প্রসূতি’র সিজার প্রসব করানো হয়েছে। ৩৩ জন শূণ্য চিকিৎসকের মধ্যে হৃদরোগ,নাক-কান-গলা ও যৌন-চর্ম’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে এ হাসপাতালে। তার পরও চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে এ হাসপাতালে। এমনটাই দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন রোগি ও তাদের সাথে আসা স্বজনদের সাথে।

পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগি মমিনুল ইসলাম জানালেন, চিকিৎস থাকলেও ওষুধ নেই হাসপাতালে। যে সব ওষুধ লিখে দিয়েছে,তার ৮০ভাগেই হাসপাতালে পায়নি। তাই বাইরের ফার্মাসি থেকে ওষুধ কিনবেন বলে জানালেন তিনি।

একই কথা কথা জানালেন, জরুরী বিভাগে সেবা নিতে আসা মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বজন। চিকিৎস যে সব ওষুধ লিখে দিয়েছেন তার শতভাগই তাকে বাইরের ফার্মাসী থেকে হচ্ছে। কারণ ওষুধ থাকলেও হাসপাতালের ওষুধ প্রদানের ফার্মাসি বন্ধ রয়েছে।

তার সাথে আসা আরেকজন স্বজন লিয়াকত আলী জানালেন, দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে জরুরী বিভাগ ও ইনডোরে চিকিৎসা করেন,হাসপাতালের বয়,ঝারুদারেরা। কর্মরত চিকিৎসকদের পাওয়া যায়না খুঁজে। ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা যা ওষুধ বা ইনজেকশন লিখে দেয়, তার শতভাগ ক্রয় করতে হয় বাইরে থেকে। এমনকি ইনজেকশন পুশ করার জন্য চিকিৎসক বা নার্স পাওয়া যায়না। তা পুশ করে হাসপাতালের বয়, ঝারুদারেরা। দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালেরর এমনি আরো অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে সরজমিনে ঘুরে।

দিনাজপুরে অগণিত বে-সরকারি হাসপাতাল,ক্লিনিক আর ডায়গনষ্টিক সেন্টারের রাহুগ্রাসে এখন ও রোগিরা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে নিজস্ব অথবা পছন্দ মতো বে-সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়গনষ্টিক সেন্টারে রোগিদের যেতে বাধ্য করাচ্ছেন চিকিৎকেরা। সেখানে এক প্রকার রোগিদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

(এসএএস/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test