E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে বসে শ্রম কেনা-বেচার হাট!

২০১৯ জানুয়ারি ২৪ ১৯:১২:৫৮
বরিশালে বসে শ্রম কেনা-বেচার হাট!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : নগরীর চৌমাথা মহাসড়কের পাশে বসে শ্রম কেনাবেচার হাট। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভোরের নীরবতা ভেঙ্গে একদল মানুষের হাকডাক চলছে। শুধু চৌমাথা নয় নগরীর রূপাতলী, মড়ক খোলার পুলসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় একদল মানুষ। কারও হাতে কাস্তে-কোদাল, ভেলচা। কারও হাতে বাঁশের ঝুড়ি, কারও হাতে দড়ি, পানি রাখার ড্রাম আর কাঠ দিয়ে বানানো ভারি জিনিস টানার বাহন। তবে মূল যা নিয়ে তারা এখানে বসেছেন তা তাদের শরীর। কেউ লম্বা, কেউ বেটে। কেউ সুস্থ্য-সবল, কেউ রোগা-পাতলা। এটাই মূলত বিক্রি হয়।

এটা এখন নিত্যদিনের চিত্র। প্রতিদিন ভোরেই বসে এই শ্রমজীবী মানুষের হাট। যে হাটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় তাদের শ্রম। আসলে প্রতিটি মানুষই তাদের নিজেদের বিক্রি করে দরকষাকষির হাটে। নগরীর এই সব বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন ভোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকে মানুষগুলো। সামনে থাকে সরঞ্জাম। মহিলা শ্রমিকদেরও দেখা মেলে পুরুষ শ্রমিকের পাশে। ভোর গড়িয়ে সকাল হতেই ক্রেতার আনাগোণা বাড়তে থাকে এ হাটে।

‘এই তুই যাবি, কতো নিবি? তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমাকে নেব না’। “স্যার আমারে নেন, আমারে নেন, পোষাই দিমু।” এমনই চলে দরকষাকষি। আর সফল দরকষাকষিতে বিক্রি হয় শ্রম। সময় গড়িয়ে ধীরে ধীরে খালি হতে থাকে শ্রম বিক্রির হাট। কেউ কেউ কাজ পেয়ে চলে যান ঠিকাদারের সাথে। কেউ কেউ কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে যায়।

তবে অভিজ্ঞতার দরেও বিক্রি হয় কারও কারও শ্রম। এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর বড় অংশই নির্মাণ শ্রমিকের সাথে ইট-বালু, সিমেন্ট, লোহার রড টানার কাজ করেন। কেউ কেউ ভবন ভাঙার কাজে। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় এসব শ্রমজীবীদের ডাকা হয় ‘বদলা’ নামে।

পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে আসা সাইদুল ইসলাম (৪০) জানান, গত ৮ বছর ধরে এই হাটে নিজেকে তুলে শ্রম বিক্রি করছেন। নগরীর কাউনিয়া এলাকায় আরও কয়েকজন শ্রমিকের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকেন। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে থাকেন বাড়িতে। তিনি বলেন, মোগো এলাকায় কাজের সুযোগ কম। সেজন্য বরিশাল শহরে এসেছিলাম। মাসে অন্তত ১২ দিন কাজ পাই। এখন কাজের চাপ কম। মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করি। তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

বরিশালের উজিরপুর থেকে এসেছেন সিদ্দিকুর রহমান (৪৫)। তিনি কাজ করছেন ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি অবশ্য স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন বরিশালে। তিনি জানান, কোনদিন ৬০০ কোনদিন ৫০০ টাকা পাই। রাত পর্যন্ত কাজ করলে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই। তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। শায়েস্তাবাদের অপর শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঠিকাদার এককভাবে কাউকে নেন না। উনার যদি ১০ জন লাগে তাইলে বেঁছে বেঁছে ১০ জনকে নেয়। পাঁচজন লাগলে পাঁচজন নেন। দরদাম করেই তারপর মোগো কাজ দেন।

কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের কাছ থেকে তারা ভবন তৈরি করে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। নিজস্ব শ্রমিকের বাইরে সহকারী হিসেবে নেওয়া হয় এইসব হাট থেকে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঠিক কবে থেকে এই শ্রমিক কেনাবেচার হাট বসছে, তার হিসেব জানা নেই কারও কাছে। তবে কেনাবেচার হাটে দরদামে বিক্রি হওয়া এই মানুষগুলোই নগর সভ্যতার নেপথ্য কারিগর। কারণ তাদের ঘামের শ্রমেই এই শহর হয়ে উঠেছে কথিত শহুরে সভ্য নাগরিকদের আবাসস্থল।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test