E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই’র বংশ বিস্তারের সুযোগ

২০১৯ জানুয়ারি ২৭ ১৫:০৯:৪৬
বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই’র বংশ বিস্তারের সুযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : আকস্মিকভাবে  প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে দিনাজপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের। দেশে’র বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী নীলগাই বংশ বিস্তারের সুযোগ এসেছে। দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত মাদি নীলগাই এর জন্য পুরুষ নীলগাই খুঁজে পেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্ধার হওয়া মাদি নীলগাই’টি’র বংশ বিস্তারে একটি সঙ্গী খুঁজছিলো দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে কাকতালিয়ভাবে নওগাঁয়ে পাওয়া গেছে সেই কাংখিত পুরুষ নীলগাইটি। 

বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণি এই নীলগাই দু’টি’ আকস্মিকভাবে মিলে যাওয়ায় এখন এর বংশবিস্তারের সুযোগ পেয়েছে দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যানে ৪ মাস থেকে অবস্থান করিেছলো দেশের একমাত্র নীলগাই’টি’র। এই প্রাণিটি দেখতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভীড় করছে রামসাগরে। ঠাকুরগাঁও এর রানীশংকৈল সীমান্তের কুলিক নদী ধার থেকে উদ্ধার হওয়া এই বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণি নীলগাই’টি’র গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হলেও এর বংশ বিস্তারের স্বপ্ল দিখছিলো দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চ্যানেল আই’তে রিপোর্টও প্রচারিত হয়।

বিলুপ্ত প্রজাতীর নীলগাই সর্বশেষ ১৯৪০ সালে দেখা মিলেছিলো পঞ্চগড় জেলায় । এটি উদ্ধারের আগে বাংলাদেশে আর কোথাও দেখা মেলেনি এই প্রাণিটি’র। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলের কুলিক নদীর ধারে এলাকাবাসী উদ্ধার করে এই বিরল প্রজাতির এই প্রাণিটি। প্রাণি’টি জবাই করে মাংস খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো উদ্ধারকারীরা। কিন্তু খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন প্রাণিটিকে উদ্ধারের পর হস্তান্তর করে দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের। প্রাণিটির গর্ভে বাচ্চা ছিলো। ধরার সময় ধাওয়ায় প্রাণিটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাতজনিত কারণে মুখ ও শরীরের বেশকিছু স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় প্রাণিটি। এতে গর্ভের বাচ্চাটি জীবীত প্রসব হলেও কিছুক্ষণ পর মারা যায়। চিকিৎসা, সেবা-যত্ম আর প্রয়োজনীয় নিয়মিত খাবার দেয়ায় প্রাণিটি এখন সুস্থ্য স্ববল।

বিলুপ্ত প্রজাতির দেশে’র একমাত্র এই নীলগাইটি দেখতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভীড় করছে দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যানে।কর্তৃপক্ষ বলছে, বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণি নীল গাই’টি এখন প্রায় সুস্থ্য-স্ববল। বংশ বিস্তারে সক্ষম। এ জন্য তার সঙ্গী খোঁজা হচ্ছিলো। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একটি নীল ষাড় এনে এর বংশ বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছিলো, দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এমনটাই জানিয়েছিলো রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায় রোটারিয়ার এ.কে.এম.আব্দুস সালাম তুহিন।

তিনি জানান, দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণি’র বংশ বিস্তারে অনুকুল পরিবেশ রয়েছে।৬টি চিত্রা হরিণ এনে রামসাগর দীঘি জাতীয় উদ্যান প্রায় আড়াই শতাধিক চিত্রা হরিণের বংশ বিস্তার ঘটেছে। বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণি নীলগাই’টি’রও বংশ বিস্তার ঘটবে বলে তিনি ছিলেন আশাবাদী।এরই মধ্যে কাকতালিয়ভাবে দ্বিতীয়টি নীলগাইটি উদ্ধার হয় ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। এটি বিরল প্রজাতির পুরুষ নীলগাই। এটিও রামসাগর জাতীয় উদ্যানে মাদি নীলগাইটির সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।পুরুষ নীলগাইটি বর্তমানে রাজশাহী বন্যপ্রাণি ও পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।

মঙ্গলবার সকালে মান্দায় নীলগাইটি ধরা পড়ার পর রাতে এটি আনা হয় রাজশাহীতে। এরপর পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

চিকিৎসাও চলছে রাজশাহী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিনের অধীনে। ডা. ফরহাদ বলেন, উদ্ধারের সময় পায়ে, পেটে ও রানের কাছে আঘাত পেয়েছিল নীলগাইটি। এতে শরীরের ওই স্থানগুলোতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। সুস্থ হয়েও উঠছে নীলাগাইটি।

নীলগাইটি কোথায় রাখা হবে ঢাকা থেকে তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান। সিদ্ধান্ত হয়েছে নীলাগাইটি দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে পাঠানো হবে।

দিনাজপুর বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থেকে একটি মাদি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। সেটি দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়েছে। এখানেই রাখা হবে মান্দায় উদ্ধার হওয়া পুরুষ নীলগাইটি। বাংলাদেশে এই প্রানি বিরল বলে জানান আবদুর রহমান। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণি সংখ্যা বাংলাদেশে এখন দু’টিতে দাঁড়ালো। সৌভাগ্যক্রমে এবারের প্রাণিটি পুরুষ। দু’টিই প্রাাপ্তবয়স্ক। তাই তাদের একসঙ্গে রাখা হলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটবে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় এই বন্য প্রাণির সংখ্যা দেশে আবার বাড়ানো যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

(এসএএস/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test