E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইউএনও-অধ্যক্ষ রশি টানাটানি!

চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ

২০১৯ জানুয়ারি ২৮ ১৬:৫৪:৪২
চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ইউএনও-অধ্যক্ষেরে মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যক্ষের বেশ কিছু ভাইচারে আর্থিক অসঙ্গতি পেয়ে চেক বহিতে স্বাক্ষর না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, যেখানে ইউএনও বিগত প্রায় ৬মাসে কোন অর্থই বরাদ্দ দেন নাই, সেখানে অসঙ্গতি পেলেন কোথায় ? এনিয়ে ইউএনও-অধ্যক্ষের রশি টানাটানি অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, কলেজের অনার্স শাখার শিক্ষক, যারা অন্য কলেজে চাকুরি করেন এবং সেখানে এমপিওভুক্ত, অথচ ২০১২ সাল থেকে চাটমোহর সরকারি কলেজ থেকে বেতন নিচ্ছেন। একই ব্যক্তি দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন গ্রহণ করছেন অধ্যক্ষর যোগসাজসে। অধ্যক্ষ কলেজের মার্কেটের চুক্তি ও ভাড়া হালনাগাদ করেননি। ৫ বছরের ভাড়ার চুক্তি নবায়ন না করেই অধ্যক্ষ নিজের মতো করে ভাড়া তুলছেন বলে অভিযোগ। কলেজ থেকে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২/৩শ’ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ পরীক্ষার নামে অধ্যক্ষ প্রতিটি বিষয়ে ৫০ টাকা করে আদায় করেছেন। কলেজের বাগান পরিস্কারের নামে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে মর্মেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি কলেজের বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের ১শ’টি ভাইচার অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারের নিকট পাঠানো হয়। ভাইচার পাওয়ার পর ইউএনও আর্থিক ব্যয়ের বিষয়টি তদন্ত করে অসঙ্গতি পান। এরপর গত ১৭/০১/২০১৯ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর দপ্তরের স্মারক নং ০৫-৪৩.৭৬২২.০০০.৩৯.০০৩.১৯-১১৩ পত্রে ভাইচারের আর্থিক অসঙ্গতি সংশোধন করে তা পাঠানোর কথা বলেন। ইউএনও অফিসের প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েকদিন পত্র নিয়ে কলেজে গেলেও অধ্যক্ষ তা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ইউএনও ডাকযোগে সেই পত্র প্রেরণ করেন।

অধ্যক্ষ পত্র পাওয়ার পর তাঁর দপ্তরের স্মারক নং চাসক/০৬/২০১৯,তাং২৩/০১/২০১৯ ইং পত্রে চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউএনও ব্যক্তিগত আক্রোশে ও কলেজের বিরুদ্ধে বহিরাগত একটি চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকান্ড ও পত্র প্রেরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অধ্যক্ষ তাঁর পত্রে ১২ দফা ফিরিস্থি উল্লেখ করে বলেছেন যে, ইউএনও অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চাটমোহর সরকারি কলেজের উন্নয়ন কাজ করে যাবেন।

চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন,“ইউএনও মহাদয়কে সরকার যেদিন থেকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেদিন থেকে উনি একটি টাকাও কলেজকে দেন নাই। যেমন জাতীয় শোক দিবস পালন, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, বিদ্যুৎ বিল, মহান বিজয় দিবস পালনসহ অন্য কোন অনুষ্ঠানে কোন টাকা দেয় নাই। সেখানে ভাইচার অসঙ্গতি কিভাবে হলো। এখানে প্রিন্সিপালের ব্যক্তিগত একটি ভাইচারও নাই। তিনি বলেন, ফুলের বাগান পরিস্কার করেছে শ্রমিক ৪শ’ টাকা করে মজুরী। কাজ করেছে, মজুরী হলো শ্রমিকের। সেই শ্রমিককে তো টাকাই দেওয়া হয়নাই। এখানে কীভাবে অসঙ্গতি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বও সারাদেশে বিজয় ফুল প্রতিযোগিতা হয়েছে। এ বাবদ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার বা ২২শ’ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছিলো। সেই টাকা ইউএনও কোন স্কুল কলেজকে দেয় নাই। আমারটাও দেয় নাই। এই টাকা নিয়ে সে কক্সবাজার না কোথায় যেন প্লেনের টিকেট কেটে বেড়াতে গিয়েছিলেন। একটি পয়সাও যেখানে দেয় নাই, সেখানে সঙ্গতি কি আর অসঙ্গতি কী ? এ বিষয়ে তিনি আমার সাথে বসতে পারতেন। একটি ভাইচারের বিষয়েই আমার হাত নেই। ছোট খাট কোন বিষয়েই তিনি টাকা দেন নাই।

তিনি জাতীয় শোক দিবস পালনসহ অন্য দিবস পালনের টাকা কী তিনি দিবেন না ? আমি তো কোন টাকাই উত্তোলন করি নাই। এটা আমার বোধগম্য নয়। মার্কেটের বিষয়ে তাকে আমি ১০ দিন বলেছে মিটিং এর কথা । তিনি তা করেননি। মার্কেটের বিষয়টি তাকেই দেখতে হবে, যেহেতু সেটা সরকারের। আমি মার্কেটের কোন টাকা গ্রহণ করিনি। ২০১৯ সালের তো মাসই শেষ হয়নি। শিক্ষকদের অন্য কলেজে চাকুরির বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তো আমি জানিনা। কেউ যদি অন্য কলেজে ক্লাস নেন, তাহলে তো সে সম্মানী পান। সেতো বেতন নেন না। সরকারি টাকা না। ইউএনও তাঁর দায়িত্বকালে প্রায় ৬ মাস একজন টিচারকেও বেতন দেন নাই। বেতনই না, কোন টাকাই দেয় নাই। কলেজের দৈনন্দিন ব্যয় তিনি করেননি। তিনি শুধু বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ও সরকারি ব্যয় করেছেন। ইউএনও হয়তো কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এটা করছেন,অথচ অভিযোগ তুলেছেন।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার বলেন,“কলেজের অধ্যক্ষ প্রায় ৩ লাখ টাকার বিল-ভাউচার দিয়েছেন। আগে কলেজের পাশ বই, ক্যাশ বই ঠিক ছিলো না, পরে আমি ১ মাসের মধ্যে ঠিক করার কথা বলেছি। যে খাতের টাকা সেই খাতে ব্যয় করতে হবে। তারপরও দেখা যায় পরীক্ষার খাতের টাকা খরচ করেছে, সেই টাকা বিবিধ খাতেও খরচ দেখিয়েছে। আবার অনেক বানানো ভাইচার, যার কোন হদিস নাই। কলেজের বাগান পরিস্কারের নামে অনেক টাকার বিল করা হয়েছে। সেগুলোর সত্যতা মেলেনি।

এভাবে প্রায় অর্ধেকের বেশী ভাইচারে অসঙ্গতি। অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে, কোথায় কিভাবে খরচ করেছেন, তা জানান। উনি জানাননি। পরবর্তীতে আমি লিখিত চিঠি দিয়েছি, তিনি চিঠি রিসিভ করেননি। বলেছেন, আমি চিঠি নিতে পারবো না আপনার এখতিয়ার নাই। ইউএনও বলেন, সরকার যেহেতু আমাকে আর্থিক বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছে, আর্থিক বিষয়ে স্বাক্ষর করতে হলে আমাকে দেখে করতে হবে। যা দিবে, তাতো চোখ বন্ধ করে করতে পারিনা। আমার চিঠি নিয়ে প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েকদিন গেছে, তিনি চিঠি নেননি। পরবর্তীতে সরকারি নিয়ম অনুসারে ডাকযোগে দিয়েছি। আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে ৩ দিনের মধ্যে জানানোর কথা বলা হয়েছে। সঠিক থাকলে বিল পেয়ে যাবে। আমাকে প্রুফ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অধ্যক্ষ বেশ কিছু ইস্যু তৈরি করেছেন নিজের দোষ ঢাকতে।

সরকার অসীম কুমার আরো বলেন, প্রশংসাপত্র বিনামূল্যে দেওয়ার কথা, কিন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২/৩শ’ টাকা করে নিয়েছেন। সেগুলোর ডকুমেন্ট আছে। ভিডিও ফুটেজ আছে। বিশেষ পরীক্ষার নামে প্রতিটি বিষয়ে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। অনার্সের শিক্ষকদের বেতন বিল দিয়েছেন, আমি বলেছি বেতন দিবো। যাদের সঠিকভাবে নিয়োগ আছে, তারা পাবেন। অনেকে অন্য কলেজে চাকুরি করেন, অথচ ২০১২ সাল থেকে এখান থেকেও বেতন নিচ্ছেন। একজন কিভাবে দুই জায়গা থেকে বেতন নেন। এটা আর্থিক অসঙ্গতি। তারপর মার্কেটের ভাড়া বা চুক্তি হালনাগাদ করেননি। তিনি তার মতো করে ভাড়া উঠাচ্ছেন। বিষয়টি আমি এমপি মহোদয়কেও জানিয়েছি। ইউএনও বলেন, টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত কারো পকেটে যেন এই টাকা না যায়, তা দেখা হবে। সঠিক হলে বিল দেবো। আমি কোন অনিয়মের সাথে নেই। কোন অনিয়ম করিনা।”

(এসএইচএম/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test