E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্ধের পথে প্রাথমিক শিক্ষা!

বাগেরহাটে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১৬:৪৭:৪৩
বাগেরহাটে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দু’শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছে নামে মাত্র একজন। যার ফলে বিদ্যালয়টির লেখাপড়া দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসছে এই এলাকায় সরকারের সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি। 

শরণখোলার এই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই বছর ধরে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে দু’একটি ক্লাস হলেও অধিকাংশ সময়ই কোন ক্লাস হয় না। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভোলা নদীর তীওে ওই স্কুলটি স্থাপিত হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের এখন বিদ্যালয়টি কোন উপকারে আসছে না। অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার জন্য প্রতিদিন স্কুলে পাঠালেও অধিকাংশ সময় ক্লাস না করেই বাড়ী ফিরতে হচ্ছে তাদের।

শিক্ষক সংকটের কারনে নানা সমস্যার পাশাপাশি স্কুলটিতে নেই কোন শৃঙ্খলা। এক সময় স্কুলটির সুনাম থাকলেও চরম শিক্ষক সংকটের কারনে দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে ওই বিদ্যাপিঠটি। উপজেলা সদর থেকে একটু দুর্ঘম এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা দপ্তর কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারীও নেই। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকরা সদরমুখী হওয়ায় ওই স্কুলে যোগদান করতে কেউ আগ্রহী নন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা দপ্তরকে বার বার অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ৬টি শ্রেণিতে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরই অভিভাবকদের পেশা সুন্দরবনের কাঠকাটা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। তাদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের নামীদামি বিদ্যাপিঠে লেখাপড়া শেখানো অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় ওই স্কুলটিতে শিশুদের ভর্তি করলেও ফলাফল শুন্য। স্কুলটিতে মানসম্মত ভবন, ক্লাশরুম, উপবৃত্তি, টিফিন ব্যবস্থাসহ সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থাকলেও কেবলমাত্র চরম সংকট রয়েছে শিক্ষকের। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারনে সরকারি নানা উদ্যোগের সুফল ভোগ করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মো. কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বহুবার লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে সংশ্লিষ্টরা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখা গত দু’বছর যাবত এক প্রকার বন্ধ আছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে দু’একজন শিক্ষক বিদ্যালয়টি যোগদান করলেও কিছু দিন পর শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অন্য স্কুলে বদলী হয়ে যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে শুনেও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা।

সরকারী এই বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আ. আউয়াল বলেন, তার একার পক্ষে সকল শ্রেণির দু’শতাধিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পাঠদান করা অসম্ভব। এছাড়া শিক্ষা অফিসের মাসিক সভাসহ প্রশাসনিক কর্মকান্ডের জন্য সপ্তাহে ৩/৪ দিন তাকে স্কুলের বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়। যার ফলে ওই দিনগুলিতে বিদ্যালয়টি শিক্ষক শুন্য হয়ে পড়ে। স্কুলটিতে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এলাকাটি দূর্গম হওয়ার কারনে কোন শিক্ষকই এখানে বদলী হয়ে আসতে চায়না। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হবার বিষয়সহ শিক্ষক চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার মেলেনি।

শরণখোলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার দূর্গম এই স্কুলটিতে মহিলা শিক্ষক পাঠানো যাচ্ছেনা। ডেপুটেশনে স্কুলটিতে একজন পুরুষ শিক্ষক পাঠানো জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test