E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অপচিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, ধামাচাপা দিতে নাটক!

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১৮:৪০:৪৭
অপচিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, ধামাচাপা দিতে নাটক!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : শুধুমাত্র অর্থের লোভে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে অপারেশনের টেবিলেই মারা যান গৃহবধূ পলি অধিকারী (২১)। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে বরিশালের আগৈলঝাড়ার দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাটক রচনা করেন। 

ঘটনার দিন ৩১ জানুয়ারী রাতে লাশে অক্সিজেন দিয়ে পলিকে নিয়ে যাওয়া হয় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরী বিভাগে চিকিৎসক পলিকে মৃত ঘোষনা করেন। ওই রাতে দুঃস্থ হাসপাতালের ম্যানেজার সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তুম ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব এ্যম্বুলেন্সে পলির লাশ নিয়ে যান পলির মামার বাড়ি শশিকর থানার দোনারকান্দি গ্রামে। পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি মামা দধিরামের বাড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে লাশের সৎকার করা হয়। যাতে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ না জানতে পারে এবং কেউ যাতে মামলা দায়ের করতে না পারে সে জন্যই এ নাটক রচনা করা হয় বলে জানান পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক মেম্বর কালীপদ।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়ার ধারাবাশাইল গ্রামের পরিমল অধিকারীর স্ত্রী নীলা অধিকারী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে ছেলে লিটনকে নিয়ে আগৈলঝাড়ার বাহাদুরপুর গ্রামের সুভাষ গাইনের বাড়িতে ১৮ বছর আগে আশ্রয় নেয়। এই দীর্ঘ সময়ে সুভাষ গাইনের পরিবারের বোন হিসেবে আস্থাভাজন হয় নীলা। নীলার ছেলে লিটনও মায়ের মত ওই পরিবার ও এলাকায় সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। সুভাষ গাইন ও তার ভাইরা চিরকুমার থাকায় মায়ের মত লিটনও ওই পরিবারের সকল কাজকর্ম করে তাদের সংসার চালাতো। দুই বছর পূর্বে পলির সাথে লিটনের বিয়ে হয়। স্ত্রী পলিকে নিয়ে লিটন সুভাষ গাইনের পরিবারের সাথে বসবাস করছিল। পলি অন্তঃসত্তা হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক ইউপি সদস্য কালীপদ ওঝা ওরফে কালা ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চলছিল চিকিৎসা।

চিকিৎসক কালীপদ আরো জানান, ৩০ জানুয়ারি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পলিকে উপজেলার দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তি করিয়ে তার পরিচিত ডাক্তার প্রশান্ত রায়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতালের আনারী চিকিৎসক আশ্রাফুল আলম ও হাসপাতালের মাঠ কর্মী দালাল অর্পনা পান্ডে রোগীকে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে বলে জানান।
সিজারিয়ান অপারেশন না করিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের কথা জানালে অর্পনা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কালা ডাক্তারের বাক বিতন্ডা হয়। ওই রাতেই পলির সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (গাইনী) ডা. বিপুল বিশ্বাস। এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় কর্মরত ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। সন্ধ্যা ৭.১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায় পলি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতিপূর্বে দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়া নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এর জের কাটতে না কাটতে এবার সিজারিয়ান অপারেশনে মৃত্যু হলো গৃহবধূর। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ প্রাণপন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তাছাড়া ওই হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের কোন প্রশিক্ষণ নেই বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে দুঃস্থ মানবতা হাসপাতালের ম্যানেজার সুমন ফকির বলেন, পলির হার্টের সমস্যা ছিল। অপারেশনের পরে হার্টের সমস্যায় মারা যায়। হার্টের পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করিয়ে অপারেশন করানো ঠিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে এলাকার প্রতিষ্ঠান বাচিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন। হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে মোবাইল আর রিসিভ করেননি।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test