E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রেহানা হত্যা

১৫শ’ টাকায় হত্যায় সহযোগিতা করে শাকিলের বন্ধু আনারুল

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১৮:৫৭:৩৪
১৫শ’ টাকায় হত্যায় সহযোগিতা করে শাকিলের বন্ধু আনারুল

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চাঞ্চল্যকর রোমহর্ষক গৃহবধূ রেহেনা হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। মাত্র ১৫শ’ টাকা চুক্তির বিনিময়ে পাষন্ড স্বামী শাকিল বন্ধু আনারুলের সহযোগিতায় এ নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটায় বলে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। 

উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুড়িপাইকা গ্রামের এজাজুল ইসলামের ছেলে শাকিল মিয়ার সাথে প্রায় ১৩ বছর আগে একই ইউনিয়নের মদনতাইড় গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের মেয়ে রেহেনা বেগমের বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই যৌতুকের কারণে স্ত্রী রেহেনার দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো। মাঝে মধ্যেই শাকিল রেহেনার উপর নির্যাতন চালাতো। সাংসারিক জীবনে তাদের রিফাত (৯) নামের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। এরই একপর্যায়ে গত ২৪ জানুয়ারী রাতে নিখোঁজ হয় রেহেনা।

নিখোঁজের ৭ দিন পর ০১ফেব্রুয়ারী শুক্রবার দুপুরে পুলিশ মদনতাইড় ও কুড়িপাইকা গ্রামের মাঝ খানে মরা করতোয়া নদীর কচুরীপানার নিচ থেকে নিখোঁজ রেহেনার গলাকাঁটা ক্ষতবিক্ষত শরীর ও হাত বিহীন লাশ উদ্ধার করে।

এ হত্যাকান্ড ঘটনায় শাকিলের পিতা এজাজুল ইসলাম, কুড়িপাইকা গ্রামের মৃত রহিমুদ্দিনের পুত্র শাকিলের মামাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক (৪০) ও পাশর্^বর্তী বালুভরা গ্রামের হবিবর রহমানের পুত্র ফেরদৌস (২৮) কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ৩ ফ্রেব্রুয়ারি কুড়িপাইকা এলাকা হতে রেহেনার স্বামী শাকিল ও তার বন্ধু আনারুল কে পৌরশহরের মাছবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আনারুল মদনতাইড় গ্রামের আয়ুব আলীর পুত্র।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মেহেদী হাসান জানান, গ্রেফতারকৃত শাকিল ও আনারুলের স্বীকারোক্তিমতে, ১৩ বৎসর সংসার করার পর সামান্য মনমালিন্যের কারণে নিজ স্ত্রীকে বন্ধুর সহযোগিতায় গত ২৪ জানুয়ারি রাত অনুমানিক ১০টার দিকে গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের মীরকুচি মদনতাইড় মরা করতোয়া নদীর নির্জন পাড়ে ডেকে নিয়ে স্বামী শাকিল ও বন্ধু আনারুল মিলে রেহানার সম্মতিতে মেলামেশা করে। তারপর নদীতে গোসল করার সময় দুজন মিলে রেহেনাকে ডুবিয়ে হত্যা করে। এরপর রেহেনার মৃতদেহ তীরে এনে আনারুল ছুরি দিয়ে গলা ও দুই স্তন কেটে আলাদা করে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর শাকিলের সংগে থাকা কুড়াল দিয়ে আনারুলের সহায়তায় রেহানার দু’হাত কেটে শরীর হতে আলাদা করে কচুরিপানার মধ্যে নিক্ষেপ করে। এই নৃশংস হত্যাকান্ড আসামীদ্বয় ঠান্ডা মাথায় সম্পুর্ন করে দুজনে মিলে রেহানার মৃতদেহ কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রেখে দু’জন নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টার দিকে এলাকাবাসী কচুরিপানার মধ্যে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহানার মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়ে দেয়। এঘটনায় রেহানার শশুর এজাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে শাকিলই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। লাশ উদ্ধারের দু’দিন পর ৩ ফ্রেব্রুয়ারি আত্মগোপনে থাকা শাকিলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর তার দেয়া তথ্য মতে গোবিন্দগঞ্জ পৌরশহরের মাছবাজার এলাকা হতে আনারুল কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেখানো মতে ঘটনাস্থল হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা ছুরি ও আসামি শাকিলের বাড়ির হতে কুড়ালটি উদ্ধার করা হয়।

অফিসার ইনচার্জ একেএম মেহেদী হাসান আরো জানান, মঙ্গলবার আসামীদেরকে আদালতে প্রেরণ করলে আসামি শাকিল গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের নিকট স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার দুদিন আগে শাকিল ১৫শত টাকার বিনিময়ে তার বন্ধু আনারুলকে এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডটি সংগঠিত করার জন্য চুক্তি করে।

(এসআরডি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test