E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে ১৮৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৬:৪৯:৫১
টাঙ্গাইলে ১৮৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতিরই রয়েছে মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলভিত্তি ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাঙালির অহংকার নয় পুরো বিশে^র অধিকার আদায়ের পথ প্রদর্শকও। ১৯৯৯ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের বীরত্বগাথা ইতিহাস রয়েছে, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। টাঙ্গাইলের অনেক বীর সন্তান ভাষা আন্দোলনে জাতীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অগ্রভাবে থেকে এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

৫২’তে টাঙ্গাইলেও গড়ে উঠেছিল দুর্বার আন্দোলন। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদিউজ্জামান খান (প্রয়াত), সৈয়দ আবদুল মতিন (প্রয়াত), সৈয়দ নুরুল হুদা (প্রয়াত), শামসুর রহমান খান শাহজাহান (প্রয়াত), মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (প্রয়াত). আবু সাঈদ খান (প্রয়াত), হাতেম আলী তালুকদার (প্রয়াত), রমিনুজ্জামান রইজ (প্রয়াত), নারায়ন চন্দ্র বিশ^াস (প্রয়াত). ঋষিকেশ পোদ্দার (প্রয়াত), হাবিবুর রহমান (প্রয়াত), বুলবুল খান মাহবুব ও হাসিনা হক, নাজমি আরা রুবি (প্রয়াত), আলী আকবর খান খোকা (প্রয়াত), হেকমত আলী মিয়া (প্রয়াত), রোকেয়া রহমান (প্রয়াত) প্রমুখ।

১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে তৎকালীন রমেশ হলের সামনে (বর্তমানে সাধারণ গ্রন্থাগারের পশ্চিম পাশে) তারা টাঙ্গাইলে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ৩য় সংস্করণের রূপ। শুধু টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয় উপজেলা সদরের শহীদ মিনারগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনে টাঙ্গাইলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও জেলার ২৫৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৮২টিতেই নেই শহীদ মিনার। এতে দেশপ্রেম ও বাঙালির চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন ভাষা সৈনিকসহ অনেকেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মোট ১৬২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩২৯টিতেই শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে ঘাটাইলের ১৭৩টির মধ্যে ১৪টিতে, সখীপুরে ১৪৭টির মধ্যে ৭৬টিতে, গোপালপুরে ১৫৯টির মধ্যে ৮টিতে, বাসাইলে ৭৯টির মধ্যে ৮টিতে, টাঙ্গাইল সদরের ১৬৪টির মধ্যে ১৭টিতে, দেলদুয়ারের ১শ’টির মধ্যে ৮টিতে, মির্জাপুরে ১৭০টির মধ্যে ৪৫টিতে, কালিহাতীর ১৭০টির মধ্যে ৩০ টিতে, মধুপুরে ১১০টির মধ্যে ২৮টিতে, নাগরপুরে ১৫৬টির মধ্যে ১৫টিতে, ভূঞাপুরে ১১০টির মধ্যে ২১টিতে এবং ধনবাড়ীর ৮৫টির মধ্যে ২৪টিতে মোট ২৯৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকে না। তবুও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা জেলায় ১৬১টি বিদ্যালয়ে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সখীপুর উপজেলায়ই ৭০টি নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।’

এদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অধীনে ৯৩৮টি হাইস্কুল, কলেজ, কারিগরি, এব্তেদায়ী ও মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৩টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরের ১০৪টির মধ্যে ১৭টিতে, বাসাইলের ৪২ টির মধ্যে ১৫টিতে, কালিহাতীর ৮৭টির মধ্যে ৫২টিতে, সখীপুরের ১০১টির মধ্যে ২৭টিতে, ঘাটাইলের ১১৫টির মধ্যে ৩৮টিতে, গোপালপুরের ৮৪টির মধ্যে ৪৩টিতে, মধুপুরের ৭৭টির মধ্যে ৩২টিতে, ধনবাড়ীর ৬৬টির মধ্যে ২৬টিতে, মির্জাপুরের ৭৬টির মধ্যে ৫০টিতে, দেলদুয়ারের ৩৮টির মধ্যে ২৩টিতে, নাগরপুরের ৭৭টির মধ্যে ৩৭টিতে ও ভূঞাপুরের ৭১টির মধ্যে ২৫টিতে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনারের প্রয়োজন। শুভ দিক হলো মাদ্রাসাগুলোতেও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ৬টি উপজেলায় ১২টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে।

এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান ডা. মির্জা মাজহারুল ইসলাম (৯৩) বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ দেশের অন্যতম জেলা টাঙ্গাইল। জেলার এতোগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কেন নেই? এটা অত্যন্ত লজ্জা ও হতাশাজনক। এতে আমাদের দেশপ্রেম ও বাঙালির চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ। আইন করে হলেও মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ মিনার আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাঙালির চেতনার অংশ। কোমলমতি শিশুসহ শিক্ষার্থীদের মনে মাতৃভাষার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাদ্রাসাসহ প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা উচিত। জেলায় এতোগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। শহীদ মিনার নির্মাণে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করবো। প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে।’

(আরকেপি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test