E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সেচ সংকট : আগৈলঝাড়ায় ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়নি

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৬:২৬:৩৬
সেচ সংকট : আগৈলঝাড়ায় ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়নি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ার আভ্যন্তরীণ খালগুলো পুনঃখনন না হওয়ায় তীব্র সেচ সংকটে পড়ে অন্তত ৫শ হেক্টর জমিতে এবছর বোরো চাষ করতে পারেনি কৃষকেরা। উপজেলার ২৮টি প্রকল্পের আওতায় ১১০কি.মি. খাল পুনঃখনন প্রকল্প গত দুই যুগেও আলোর মুখ না দেখায় পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বোরো আবাদ কমতে থাকায় উপজেলায় উল্লেখযোগ্য খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। 

উপজেলা পষিদ থেকে কৃষি ও সেচের জন্য ১০ ভাগ বরাদ্দের টাকায়ও এখন পর্যন্ত কোন খাল পুণঃখখন করা হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, চলতি বছর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯হাজার ৬শ ৬৩হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৬হাজার ৫শ ৪৭হেক্টর ও উফসী ৩হাজার ১শ ১৬হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩শ ১৩ মে.টন চাল।

উপজেলার খালগুলো পলি পরে ভরাট হলেও দীর্ঘ দিনেও আভ্যন্তরীণ খালগুলো পুনঃ খনন না হওয়ায় খালে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পানি সেচে সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে খালগুলোতে নৌকা চলা বন্ধ হয়েছে দুই দশক আগেই।

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সেচ দিতে না পারায় গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট, বড়ইতলা, পূর্ব সুচনকাঠী এলাকার তিনটি ইরি ব্লকের অন্তত ২শ একর জমি চাষ করতে পারেনি চাষীরা। একইভাবে রাজিহার ইউনিয়নের বিশ্বব্লক খ্যাত চৌদ্দমেধা বিল, গোয়াইল, মাগুড়া, রাংতা ও বাকাল ইউনিয়নের অন্তত ৩শ একর জমিতে পানির অভাবে চাষ ব্যাহত রয়েছে। ফলে ওই সকল ব্লকের জমির মালিক ও চাষিরা তাদের পরিবারের খাদ্যের যোগান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। সেচ সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় সেখানে কিছু চাষিরা এখন রবি শষ্য আবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও জানান সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল।

সূত্র মতে, উপজেলার খালগুলো পুণঃ খননেন জন্য কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস থেকে যৌথ উদ্যোগে নিয়ে সমন্বিত প্রকল্প স্ব-স্ব বিভাগে দাখিল করা হলেও খাল পুনঃখননের জন্য সরকারের কোন বিবঅগ থেকেই গত দুই যুগেও সারা পাওয়া যায়নি।

সমন্বিত খাল পুণঃ খনন দাখিল করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল রাজিহার ইউনিয়নে ২২ কি.মি, বাকাল ইউনিয়নে ১৭ কি.মি, গৈলা ইউনিয়নে ২২কি.মি ও রত্নপুর ইউনিয়নে ২৫কি.মি. খালসহ ৬৬কি.মি ও ২০কি.মি গ্রামীন শাখা খালগুলো পুনঃখননের জন্য ২৭টি প্রকল্পের আওতায় মোট ৮৬ কি.মি.। পরে আরও একটি প্রকল্পের আওতায় ২৪কি.মি. খাল যুক্ত হয়ে মোট ১শ ১০ কি.মি খাল পুণঃখনন প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়।

২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বরিশাল বিভাগীয় তৎকালীন কমিশনার মো. গাউস আগৈলঝাড়ায় উপজেলা প্রশাসনের এক সভায় খালগুলো পুনঃ খননের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ার পরেও আজ পর্যন্ত কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখা যায়নি।

খালে পানির তীব্র সংকট থাকার পরে নতুন করে এবছর যোগ হয়েছে সড়ক বিভাগের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রধান খালে দেয়া একাধিক বাঁধ। চাষাবাদ মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার প্রধান খালে বাঁধ দেয়ায় সময় মতো চাষাবাদে নামতে পারেনি এলাকার কৃষকেরা। তবে কৃষকের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত খালের ওই সকল বাঁধের কিছু অংশ কেটে দেয়া হয়েছে।

চাষিদের দাবি, জোয়ারের সময়ও কাটা বাঁধের অংশ দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় উপজেলার উত্তর, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের খালগুলোতে পানি প্রবাহ না হওয়ায় ওই সকল খালে বসানো সেচ মেশিনের গোড়ায় পানি পাচ্ছেনা কৃষকেরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস খাল ভরাট হওয়ায় পানি সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে বলেন উন্নয়ন বাঁধের কারণে বড় ৩০ থেকে ৩৫টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্থর তালিকায় রয়েছে। চাষীদের জন্য বাঁধের বিষয়ে তিনি বরিশাল সওজ কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার, জেলা প্রশাসক ও সর্বোপরি স্থানীয় এমপি’র সহযোগিতায় সমন্বয় করে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আগামী জুলাই মাসে জেলা প্রশাসকের জেলা উন্নয়ন সন্মেলনে উত্থাপনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলার খাল পুণঃখনন প্রকল্পর তালিকা ইতোমধ্যেই প্রেরন করেছেন তিনি। খালগুলো পুণঃখনন না করতে পারলে কৃষকেরা কৃষি উৎপাদন থেকে পিছিয়ে পরবে। যা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে।

উপজেলা পরিষদ থেকে ১০ভাগ তহবিলের টাকায় খাল পুণঃখনরের ব্যাপারে তিনি বলেন, এব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অগ্রনী ভূমিকা নিলেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test