E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পূজা দিতে এসে যৌন হেনস্থা ও মারপিটের শিকার যুবতীসহ দুই নারী!

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৭:৪৩:৪১
পূজা দিতে এসে যৌন হেনস্থা ও মারপিটের শিকার যুবতীসহ দুই নারী!

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হিন্দুবাঘা ধামে পূজা-অর্চনা করতে গিয়ে যৌন হেনস্থা ও মারপিটের শিকার হয়েছেন নওগাঁ শহরের এক যুবতীসহ দুই নারী। ঘটনাস্থল থেকে যৌন হেনস্থা ও মারপিটের শিকার ওই যুবতীসহ দুই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ।

তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোন বখাটেকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বরং ঘটনার উল্টো কাহিনীর অবতারনা করে থানার ওসি এবং মেলার বীটার যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান বাবু পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার দিকে এমন ঘটনা ঘটেছে।

মেলায় আগতরা জানান, উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের (রানীপুকুর) শিকারপুর (হিন্দুবাঘা) ধামে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও পূজা দিতে আসে বিভিন্ন এলাকার ভক্তরা। ওইদিন বিকালে নওগাঁ শহরের নুনিয়া পট্টির দুটি পরিবারের লোকজন আসেন এবং হিন্দুবাঘা ধামে পূজা-অর্চনা শেষে সেখানে রান্নাবাড়ি করে খেতে বসে। এসময় ভীমপুর গ্রামের মজনুর ছেলে রিফাতসহ কয়েকজন বখাটে যুবক ওই দুটি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আসা যুবতীসহ নারীদের ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করাসহ তাদের উত্যক্ত করতে থাকে। এ সময় যুবতীর ভাই প্রতিবাদ করলে ওই যুবতীর ভাইকে চর-থাপ্পড় মারে উত্যক্তকারীরা।

এসময় ভাইকে মারতে দেখে যুবতী পার্শ্বে রান্নার কাজে রাখা খড়ির চলাদিয়ে আঘাত করলে উক্তত্যকারীদের একজনের মাথা কেটে গিয়ে সামান্য রক্ত বের হলে উত্যক্তকারীরাসহ মেলায় থাকা ভীমপুর গ্রামের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে নওগাঁ থেকে আসা ওই দুটি পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, নারীদের যৌন হেনস্থা ও এলোপাথারীভাবে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং যৌন হেনস্থা ও মারপিটের শিকার হয়ে আহত হওয়া এক যুবতীসহ দুই নারী ও তাদের লোকজনকে উদ্ধার করে মেলার বাইরে এনে নওগাঁয় পাঠিয়ে দেন।

ঘটনা জানতে পেরে নওহাটা ফাঁড়ির পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌছে আহত দুই নারীসহ তাদের সঙ্গের লোকজনকে উদ্ধার করে আহত দুই নারীকে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। এব্যাপারে হিন্দু বাঘা মেলার বীটার ও ভীমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কামরুজাম্মান বাবুর তিনি বলেন ভিন্ন কথা। তিনি ধানের জমিতে শিশু নেমে পানি ছিটানোর ঘটনার অবতারনা করেন। আর সে কারনেই নাকি মারপিটের সূত্রপাত হয়। মহাদেবপুর থানার ওসিও তার সুরে সুর মিলিয়ে ঘটনার নিখুঁত! বর্ণনা দেন। তবে পূজা কমিটির লোকজন জানান, ধানের জমিতে নেমে পানি ছিটানোর কারনেই যদি মারপিট হয়, তাহলে যার বাচ্চা পানিতে নামলো, কাদাপানি ছিটালো, মারপিট তো তাদের সঙ্গে হওয়ার কথা। সেখানে মহিলাদের মারপিট করা হলো কেন?

তবে মেলার বীটার ও ভীমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কামরুজাম্মান বাবুর বড় ভাই আব্দুল হামিদ ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিতভাবে ঘটেছে। তিনি বলেন, নওগাঁ থেকে আগত পরিবারের মেয়েরা ধামে ছিল। এসময় এক ছেলে মোবাইল ফোনে মেয়ের ছবি তুললে মেয়েটি ছেলেটিকে চলাদিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে কিছু স্থানীয় বখাটে ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে মারপিট শুরু করায় মেয়েরা মাটিতে পড়ে যায় এবং তাদের পায়ের নীচে পিষ্ট করা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠানো লাগেনি। সে আমাদের গ্রামের ছেলে বাড়িতেই আছে।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাসানুজ্জামান তরফদার স্বপন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন , আমি ও মেলায় থাকা লোকজনের মাধ্যমে ও স্থানিয় এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে যা জেনেছি তা খুবই নাক্কারজনক ঘটনা। মূলত মেলা কমিটির লোকজন মারামারিতে জড়িত নয়। আমার জানামতে মেলার গ্যারেজ দেখাশোনাকারী ছেলেরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে এবং মেয়েদের সঙ্গে অমানুষিক ও জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছে।

(বিএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test