E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবন উজাড়ের মহোৎসব

২০১৪ জুলাই ২২ ১৮:২২:০৬
ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবন উজাড়ের মহোৎসব

মংলা প্রতিনিধি : ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সুন্দরবন উজাড়ের মহোৎসব শুরু হয়েছে। বন প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই কাঠ চোরাকারবারীরা অপ্রতিরোধ্যভাবে বন থেকে সুন্দরী ও পশুরসহ মূল্যবান কাঠ কেটে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাচার করে আসছে। রমজানের শুরু থেকেই প্রায় প্রতি রাতেই ট্রলার বোঝাই করে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট নিষিদ্ধ কাঠ।

অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবনের অভ্যন্তর রুট দিয়ে চলাচলকারী জাহাজও ব্যবহার হচ্ছে কাঠ পাচারের কাজে। চোরকারবারীরা কিছু কিছু জাহাজের মাষ্টারের সাথে গোপন চুক্তির করে এ কাজটি করছে। বর্তমান সময়ে কাঠ পাচারে আধুনিক ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে জাহাজ। বনবিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তি ভাগাভাগির মাধ্যমে এই কাঠ পাচারে সহযোগীতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাম্প্রকিকালে কাঠ পাচার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলেও বনবিভাগ তা মানতে একদম নারাজ। তারা বলছে, তাদের নজদারীরর কারনে কাঠ পাচার হচ্ছেনা বললেই চলে। আর মাঝেমধ্যে কিছু কাঠ পাচারের চেষ্টা করা হলেও তা ধরা পড়ে যাচ্ছে। তবে, বনবিভাগের এই কথা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। শনিবার একদিনেই উদ্ধার হয়েছে ৩০০ ঘনফুট চোরাই সুন্দরী কাঠ। সুন্দরবন থেকে কেটে এই কাঠগুলো পাচার করা হয়েছিল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর কাঠের মোকামে। খোদ বনবিভাগের হাতেই আবার সেগুলো ধরা পড়ে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বনরক্ষীরা স্বরূপকাঠী মোকামের বিভিন্ন এলাকায় শনিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে কাঠগুলো জব্দ করে। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা হয়নি। এগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে দেখানো হয়েছে। জব্দকৃত এই ৩০০ ঘনফুট কাঠের বর্তমান বাজার মূল্য তিন লক্ষাধিক টাকা।

এছাড়া, গত ১৮ জুলাই শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ী এলাকা থেকে লক্ষাধিক টাকার এবং গাবতলা এলাকা থেকে দুটি ট্রলারসহ ৩০০ মন সুন্দরী জ্বালানী কাঠ উদ্ধার করা হয়। মাঝেমধ্যে এমন দু-একটি ছোটখাটো চালান ধরা পড়লেও বড় চালানগুলো থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেগুলো পাচারে বনবিভাগের ওইসব অসাধু ব্যক্তিরাই সগযোগীতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এসব কাঠের চালান চলে যাচ্ছে টেকেরহাট, ইন্দুরকানী, স্বরূপকাঠী, পাড়েরহাটসহ দেশের প্রষিদ্ধ চোরাইকাঠেরে মোকামগুলোতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরণখোলা রেঞ্জের বগী, আলীবান্দা, পাঙ্গাসীয়া, ভোলা, তেড়াবেকা, শাপলা, দাসেরভারানী, পানিরঘাট, ডুমুরিয়া, সুপতি, কচিখালী, তেঁতুলবাড়িয়া এবং চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর, নাংলীসহ বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন ও ক্যাম্প এলাকার বন থেকে কাঠগুলো কেটে সংশ্লিষ্ট স্টেশন ও ক্যাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে পাচারকারীরা তা নির্বিঘেœ পাচার করে আসছে। আবার বনসংলগ্ন এলাকার এক শ্রেণীর লোক বন থেকে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের নামে ছোটবড় তাজা সুন্দরী গাছ কেটে বিক্রি করছে। সেগুলো ফাড়াই করে শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার জ্বালানী কাঠের আড়তগুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।

এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বিশ্ব ঐতিহ্য ও পৃথিবীর বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে সচেতন মহল শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির (আইপ্যাক) শরণখোলার সহসভাপতি ফরিদ খান মিন্ট জানান, বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কাঠ পাচারে জড়িত রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর কাঠ পাচার কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন খলিফা জানান, বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ কর্মকর্তার সঙ্গে কাঠ পাচারীদের সখ্যতা রয়েছে। বিভিন্ন সময় কাঠ পাচারের অভিযোগ করলেও তারা গুরুত্ব দেননা। রক্ষকরাই বন ধ্বংসের জন্য দায়ী। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো: কামাল আহমেদ বনবিভাগের বিরুদ্ধে কাঠ পাচারে সহযোগীতা ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ঈদ মৌসুম এলে পাচারকারীরা একটু সক্রিয় হয়ে উঠলেও এবার সে সুযোগ তারা পাচ্ছেনা। সকল স্টেশন ও ক্যাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাঠ পাচার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(এএইচএস/এটিআর/জুলাই ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test