E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ কবিয়াল বিজয় সরকারের ১১৭তম জন্ম জয়ন্তী 

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৫:১১:৫৩
আজ কবিয়াল বিজয় সরকারের ১১৭তম জন্ম জয়ন্তী 

নড়াইল প্রতিনিধি : আজ একুশে পদক প্রাপ্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের ১১৭তম জন্ম জয়ন্তী । বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা সম্পন্ন এই আধ্যাত্মিক পুরুষ ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা  হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। 

এদিকে কবির জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে চারদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পন, নগর কির্তন, মঙ্গল প্রদিপ প্রজ্জ্বল ও পূজা, প্রসাদ রিতরণ, বিজয় গীতি পরিবেশনা, আলোচনাসভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিগান ও জারিগান অনুষ্ঠিত হবে বলে জানাগেছে। কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি।

জানা গেছে, “ এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে” “‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী, ওরে একদিন ভাবি নাই মনে, সে আমারে ভুলবে কেমনে, “প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন-‘তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা।’ বিখ্যাত এরকম হাজারো মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারন মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন।

বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছিলেন,“ মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।” দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেণী সংগ্রাম ইত্যাদি।

সূত্র আরও জানায়, বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুল জীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন।

১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজেই কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরু ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেবব্রুয়ারি কলকাতার “ভারতীয় ভাষা পরিষদ” তাকে সংবর্ধনা দেয়। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন।

তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারু শিল্পী এস.এম, সুলতান সহ অসংখ্য গুনীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন এই শিল্পী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের হাওড়ার বেলুডে পরলোকগমন করেন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভুষিত হন।

(আরএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test