E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাগলিটা মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৭:১৫:০২
পাগলিটা মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি : এই যে ফুটফুটে  নিষ্পাপ কন্যা শিশুটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মিটিমিটি হাসছে, গত বুধবার একুশের প্রথম  প্রহরের এক ঘণ্টা আগেই তার জন্ম। শিশুটি জন্ম নিয়েছে রাস্তায় ধারে এক দোকানের সামনে, তাও রুপা নামে এক পাগলির গর্ভে। রাতের আঁধারে সন্তান সম্ভবা এক পাগলী মায়ের প্রসব বেদনার গগণবিদারী চিৎকার ভারি করে তুলছিল সিরাজদিখান বাজারের জনপদ। এমন রাত্তিরে একটি নির্জন জায়গা থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে শব্দকে গন্তব্য করে ছুটে গিয়েছিল কিছু মহৎ তরুণ ও মহিলা। গিয়ে তাদের চক্ষু  হয়ে উঠে চড়কগাছ। এটা  নির্মম জীবন বাস্তবতায় এক ফুটফুটে মানবশিশুর পৃথিবীতে আসার গল্প। ফেসবুকে লিখেছেন ফারহানা সুলতানা বন্যা নামে এক সেবিকা ।

তার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসের সূত্র ধরেই জানা গেল গল্পের বিষয়বস্তু এখন সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স । গত বুধবার দিবাগত রাতে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান বাজার নিউমার্কেট উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদের শোরুমের নিকটেই আলম খানের দোকানের সমামনে রুপা বেগম (৩০) নামের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী রাস্তার উপরে এক কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন।

স্থানীয়দের মতে, রুপা বেগম প্রায় ৫-৬ দিন ধরে মানসিক অসুস্থ্য অবস্থায় সিরাজদিখান বাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। প্রসববেদনায় মানসিক প্রতিবন্ধী রুপার চিৎকার শুনে স্থানীয় কিছু নারী, যুবক তাকে নবজাতকসহ গত বুধবার রাতেই উদ্ধার করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছেন। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ্য আছেন।

সেদিন রাতের অভিজ্ঞতার কথা উপস্থিত যুবকদের বরাত দিয়ে সেবিকা ফারহানান সুলতানা বন্যা লিখেছেন, ‘হুট করে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মোঃ আলমগীর হোসেন, আলম খান, পারভীন বেগম প্রথমে সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন। মুহূর্তেই তারা সামলে নিয়ে এদিক ওদিক ফোন দিয়ে হাসপাতালে এসে জেনে নেন কী করতে হবে। শিশুটির নাড়ি তখনো কাটা হয়নি। বাজারের অদূরেই লোকালয় বেদেপট্টি থেকে কয়েকজন নারীকে ডেকে আনলেও কেউ শিশুটির নাড়ি কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না।

তাদের মধ্যে এক বেদে নারী পারভীনকে ডাকলেন, রাতের আঁধারে এ নির্জনে এক পাগলির সেবায় আসতে প্রথমে পারভীন আপত্তি জানান, পরে অবশ্য চলে আসেন। ফলাফল বাচ্চা আর পাগলি মা হাসপাতালে। সেই রাতেট যারা মানবশিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন মোঃ আলমগীর পেশায় একজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছিনা, সাহার্য্যকারীদের বীরত্বের কথা ভেবে গর্ববোধ করব, নাকি পাগলিটাকে মা বানিয়ে দেয়া পিশাচটার কথা ভেবে লজ্জিত হব। তার সঙ্গে থাকা পারভীন, আলম খানসহ অন্য যারা ছিলেন সবার প্রশংসা করেন তিনি।

এ বিষয়ে নারী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এলিজা আক্তার বলেন, মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ্য আছেন। আমরা হাসপাতালের সবাই ওদের দেখভাল করছি। ওদের শারীরিক কোন সমশ্যা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বদিউজ্জামান বলেন, হাসপাতালে আসার পরে ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দেয়ার পরপরই ভাইরাল হয়ে যায় ঘটনাটি। অনেকেই প্রশংসা করছেন যারা রুপার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার অনেকেই মানসিক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণকারীকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ শিশুটিকে দত্তক নেয়ারও আবেদন করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বদিউজ্জামান আরোও জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রায় ১৪/১৫ জনের বেশ লোক মানব শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য মৌখিক আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা চাই উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হউক।

এর মধ্যেই সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসফিকুন নাহার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিনাত ফৌজিয়া, সিরাজদিখান থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ ফরিদউদ্দিন এবং সিরাজদিখান উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সুব্রত দাস রনক নবজাতকসহ পাগলী মা রুপা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দেখে গেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির নাম রাখা হয়েছে কামরুন নাহার কথা (কথা) ।

এদিকে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কাছে শিশুটির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অবশ্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটির ভবিষ্যত নিশ্চিত করা ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দত্তক প্রদানের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহম্মেদ।

(এসডিআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test