E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাছ চাষে বাড়ছে জনদুর্ভোগ

তাড়াশে বছরে অর্ধ কোটি টাকার মুরগির বিষ্টার ব্যবসা

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৫:০৮:২৭
তাড়াশে বছরে অর্ধ কোটি টাকার মুরগির বিষ্টার ব্যবসা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : অবিশ্বাস হলেও সত্য মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রতি বছর ১৫-২০ জন ব্যবসায়ী হাত বদলের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার মুরগির বিষ্টার ব্যবসা করে থাকেন। 

মূলতঃ যথেচ্ছাভাবে মাছচাষীরা পুকুরে চাষ করার নামে মাছের বিকল্প খাদ্য হিসেবে ওই মুরগির বিষ্টা ব্যবহার হয়ে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। অথচ অভিযোগ রয়েছে মুরগির বিষ্টার মাধ্যমে চাষ করা মাছ রান্নার পরও দুঃগন্ধ ছড়ালেও দেখার কেউ নেই ।

উপজেলার আদর্শ মাছ চাষী কোহিত গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, বিগত ৫-৭ বছর ধরে তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৩ -৪ হাজার যা উপজেলার মোট পুকুরের ৫০ ভাগ মুরগির বিষ্টার মাধ্যমে অপরিকল্পিত ভাবে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে ।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান,মুরগির বিষ্টা প্রক্রিয়া করে জৈব সার তৈরি করা যায়। যা প্রায় ৪ মাস মাটিতে পুঁতে রেখে ১’শ কেজিবিষ্টা থেকে প্রায় ৫০ কেজি টিএসপির গুনাগুন সমৃদ্ধ জৈব সার পাওয়া সম্ভব। অথচ সেটা না হয়েমুরগির বিষ্টা খামার থেকে সরাসরি পুকুরে মাছচাষে ব্যবহার হয়ে আসছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায়মুরগির বিষ্টা ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা বিষাক্তমুরগির বিষ্টা পুকুরে সরবরাহ করার নামে উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন জন গুরুত্ব আঞ্চলিক সড়কের পাশে স্তুপ করে রেখে অপরিকল্পিত মাছ চাষের সাথে জনদুভোর্গ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

মুরগির বিষ্টাযথাযথ প্রক্রিয়া ব্যবহার না করে সরাসরি খামার থেকে নিয়ে পুকুরে ব্যবহার করায় এদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে সেই সাথে পুকুরের পাড়ে যত্রতত্র রেখে মাছচাষে ব্যবহারের কারণে পুকুরের পানি দূষিত হচ্ছে ও দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । আর মুরগির বিষ্টা দেয়া পুকুরের দূষিত ওই পানি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও তা মানা হচ্ছে না এমনটি জানিয়েছেন তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ শিমুল তালুকদার।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পুকুর মালিক ওবিষ্টার ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে পুকুর দুষিত করলেও জেনে শুনেই গ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষ পুকুরের পানি ব্যবহার করে আক্রান্ত হচ্ছে পানি বাহিত নানা রোগে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজন কুমার মাল বলেন, বর্তমানে তাড়াশ উপজেলার আনাচে কানাচে মুরগির বিষ্টার দুঃগন্ধে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাস্তা ঘাটে বস্তাভর্তি মুরগির বিষ্টার বিষাক্ত গন্ধে নাক চেপে হাটতে হচ্ছে।

অনুসন্ধনে জানা গেছে, উপজেলার ১৫-২০ জনবিষ্টা ব্যবসায়ী বগুড়া জেলার শেরপুর সহ মুরগির খামার বেশী আছে এমন এলাকা থেকে হাজার হাজার বস্তামুরগির বিষ্টা বস্তাপ্রতি ২০-২৫ টাকা পাইকারী দরে কিনে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাছ চাষীদের কাছে বস্তাপ্রতি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এই ব্যবসাটি রাতের অন্ধকারেই বেশী হয়ে আসছে।

আরো জানা গেছে, ছোট খাটো একটি পুকুরে ১০০-১৫০ বস্তা পর্যন্তমুরগির বিষ্টা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আরবিষ্টা ব্যবসায়ীরা যে টাকায় বিষ্ঠা কেনেন তাতে দ্বিগুন লাভ হওয়ায় এ ব্যবসা চুটিয়ে করছেন এমনই অভিযোগ করেন, উপজেলার আরেক মৎস্যচাষী সোহেল রানা (২৮)।

এদিকে মুরগির বিষ্টার অপব্যবহার বাড়লেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না থাকায় তাড়াশে মুরগির বিষ্টার ব্যবসা বছরে অর্ধ কোটি টাকায় পৌছেছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ ইউএনও ইফ্ফাত জাহান বলেন, মুরগির বিষ্টার ব্যবসায়ীদের ধরতে মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে। তবে গভীর রাতে এ ব্যবসা হওয়ায় আমরা তাদের কে ধরতে পারছি না।

(এমএসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test