E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানা হচ্ছে না জলাশয় সংরক্ষন আইন

সাতক্ষীরা পৌরসভায় একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়

২০১৯ মার্চ ০২ ১৫:২৬:৫৭
সাতক্ষীরা পৌরসভায় একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যকার পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পরও পৌর কর্তৃপক্ষ আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামিতে ভেঙে পড়বে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা।

সাতক্ষীরা নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক বিশিষ্ঠ সমাজসেবক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী শহরের বুক চিরে প্রাণসায়ের খাল কাটান। এ ছাড়াও পৌরদীঘি, পুরাতন সাতক্ষীরার মায়ের মন্দিরের পুকুরসহ কয়েকটি পুকুর খনন করেন তিনি। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে ঐতিহ্যবাহি প্রাণসায়ের এর মধ্যে আবর্জনা ও বর্জ পদার্থ ফেলার পাশাপাশি দু’তীর জবরদখল হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে ওই খালটি।

এ ছাড়া একটি স্বার্থান্বেষী চক্র পৌরসভার মধ্যকার বড় বড় পুকুর ও জলাশয় একের পর এক ভরাট করে ফেলায় সাতক্ষীরা পৌরসভার দু’ লাখের ও বেশি মানুষ প্রতি মুহুর্তে রয়েছে হুমকির সম্মুখে। অবিলম্বে প্রাণসায়ের খাল খনন ও যত্রতত্র পুকুর ও জলাশয় ভরাট বন্ধ করা না গেলে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে যে কোন সময় সাতক্ষীরা শহরটি জতুগৃগে পরিণত হতে পারে।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের উত্তর পলাশপোলে যেয়ে দেখা গেছে শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ আফতাবুজ্জামানের মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার কাছে দায়বদ্ধ থাকা জমি কৌশলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মালিকানা পরিবর্তন দেখিয়ে জমির প্লট বিক্রির বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত “মনোয়ারা হাউজিং” নামের সাইন বোর্ড টাঙানো হয়েছে। যোগাযোগ করার জন্য নীচে তিনটি মোবাইল নং লেখা রয়েছে। ওই পুকুর ভরাটের পক্ষে স্থানীয় রাজু, মাছ সাত্তার, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ভূমিকা রাখছেন। তারা রসুলপুরের সোহরাব বিশ্বাসের ছেলে খোকন বিশ্বাসের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে ট্রলি করে দূর থেকে মাটি বহন করে ওই পুকুর ভরাট কাজ অব্যহত রেখেছেন। ওই চক্রটি ক্ষতাসীন দলের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আবুল কাশেম , আব্দুস সাত্তার, রকিব, সাহেব আলীসহ কয়েকজন। পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

তারা আরো জানান, নয় মাস আগে উত্তর পলাশপোলের মোহাম্মদ আলীর সন্তান অলি আহম্মেদ ও তার ১৪জন ওয়ারেশ পৈতৃক ৭৬ শতক পুকুর একইভাবে ভরাট করে প্লট আকারে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে ওই জমিতে ঘরবাড়ি বানানোর পাশাপাশি আগামিতে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য ঘেরা ও বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তর পলাশপোল সার্বজনীন দুর্গা পুজা মন্দিরের সামনে হাজু ঘোষের প্রায় দেড় বিঘা পুকুরটি প্লট আকারে বিক্রি করে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করে তা ভরাট করা হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, জবেদ আলীসহ কয়েকজন। রসুলপুর গোরস্থানের পাশে আফতাব মাষ্টারের বড় পুকুরটি যে কোন সময় থেকে ভরাট করা হবে বলে স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে অবহিত করেন। এ ছাড়াও ২০১৬ সালের উত্তর পলাশপোলের একটি বড় পুকুরসহ জলাশয় গভীর রাতে মাটি ভরাট করে ডাঙা জমিতে পরিণত করেছেন কাটিয়ার কুখ্যাত সোনা চোরাচালানি বলে পরিচিত গোল্ড মনি।

পলাশপোল স্টেডিয়ামের পাশে মোঃ লিটনের বোনেরা ফারাজি সম্পত্তি পাওয়ার পর তাদের একাংশ জনৈক হাফিজুর রহমানের কাছে বিক্রি করার পর তিনি সম্প্রতি পুকুরের একাংশ ভরাট করে দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছেন।

এ ছাড়াও শহরের ফুড অফিসের নিকটে সালমা ম্যাডামের বাড়ির পাশের বিশাল পুকুর, ধোপা পুকুরের একাংশ ভরাট করে বিএনপি নেতা মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, ধোপাপাড়ার একটি পুকুর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনের পুকুর, মুনজিতপুর, সুলতানপুর, কাটিয়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, কুকরালি, রথখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার পুকুর, প্রাকৃতিক জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, উদ্যানসহ জনস্বার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্থান ভরাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এসব বন্ধে পৌরসভা যেমন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না তেমনি সাতক্ষীরা শহরের রেড ক্রিসেন্ট অফিসের সামনের ফুটপাত একজন শীর্ষপর্যায়ের জনপ্রতিনিধির কাছে ডিসিআর দিয়ে সেখানে পাকা ভবন নির্মানের ব্যবস্থা করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. বিবেকানন্দ রায় জানান, পৌরসভার প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর ৫ ধারায় খেলার মাঠ, উন্মুক্ত উদ্যান, প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তণ করা যাবে না। বা উক্তরুপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরুপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া , ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। শাস্তি হিসেবে ৮ ধারায় বিধান লঙ্ঘনকারিদের অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনুর্ধ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা একসাথে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

সাতক্ষীরা ফায়ার সিভিল ডিফেন্স এর কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, একের পর এক যেভাবে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে তাতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আগামিতে শহরে কোথাও আগুণ লাগলে পানির অভাবে জতুগৃহে পরিণত হবে।

এ ব্যাপারে শুক্রবার বিকেল ৬টায় জানতে চাইলে ডাঃ আফতাবুজ্জামানের ০১৭১১-৮৬০৭৭৭ নম্বর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার পারিবারিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে পলাশপোলের ওই পুকুরের মালিকানা তাদের নেই।

সাতক্ষীরা পৌরসভার পলাশপোল এলাকার কাউন্সিলর শফিক-উদ-দৌলা সাগর জানান, তার এলাকার বেশ কওেয়কটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে ও কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পৌরসভার মধ্যকার জলাশয় ভরাট সংক্রান্ত আইনটি তাদের জানা না থাকায় জনগনের অভিযোগ পেলেও তারা কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

সাতক্ষীরা পৌর মেয়র বিএনপি নেতা তাসকিন আহম্মেদ চিশতির সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তার ০১৭৬১-৭০২৭৩২ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/মার্চ ০২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test