E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেন্দুয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা, আ.লীগ নেতার প্রভাবে মামলা হয়নি

২০১৯ মার্চ ০৭ ০০:০৭:৩১
কেন্দুয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা, আ.লীগ নেতার প্রভাবে মামলা হয়নি

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের খালিজুড়া গ্রামের সংখ্যালঘু দেবল দেবনাথের ওপর হামলা ঘটনা ঘটে।বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য মাতাব্বর গনের সামনেই একই গ্রামের প্রতিবেশি সোনাফর মিয়ার ছেলে রইছ উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান গংরা দেবলের ওপর এ হামলা চালায়।

অভিযোগ ওঠেছে, হামলার ঘটনায় ওই গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আলী আহম্মদ ভূঞার প্রভাবে ১৬ দিনেও থানায় মামলা নেয়নি পুলিশ। ফলে সংখ্যালঘু ওই পরিবারের সদস্যরা সামাজিক ও আইনী বিচার না পেয়ে নানাবিধ হুমকির মুখে পরেছেন। একই গ্রামের প্রতিবেশি মৃত সোনাফর আলীর ছেলে রইছ উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান গংদের সঙ্গে বাড়ির সীমানাকে কেন্দ্র করে গত ২-৩ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে দেবলের।

গ্রামবাসী জানায়, দুই পরিবারের মধ্যে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য খালিজুড়া গ্রামের ফজলুর রহমান, উজ্জল ভূঞা, এরশাদ মিয়া ও সোহাগপুর গ্রামের তাজুল ইসলামকে স্থানীয় আমিন (সার্ভেয়ার) এনে সীমানা নির্ধারনের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই ৪ জন গ্রামের অন্যান্য মাতাব্বর গনের উপস্থিতিতে ছিলিমপুর গ্রামের মোমিন ও খালিজুড়া গ্রামের মানিক আমিনকে নিয়ে সীমানা নির্ধারন করে। দিন শেষে মাটিতে সীমানা নির্ধারনী ফিলার পুতার সময় গ্রাম্য মাতাব্বর গণের সামনেই ওই গ্রামের মৃত দীগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের ছেলে দেবল চন্দ্র দেবনাথের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন।

দেবল দেবনাথ জানান, প্রতিপক্ষের লোকেরা তার ওপর হামলা চালিয়েই থেমে থাকেনি। সন্ধ্যার পর ৭-৮ জন লোক তার বসত ঘরে ঢুকে আলমারি ও সুকেস থেকে স্বর্ণ অলঙ্কার, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায়। এসময় তারা বসত ঘরের সামনে স্থাপিত গোবিন্দ মন্দিরও ভাংচুর করে।

বুধবার বিকেলে সরেজমিন গেলে দেবল দেবনাথের মা প্রভাসীনি দেবনাথ ও স্ত্রী শিল্পী চৌধুরী ভয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, প্রতিপক্ষের লোকেরা তাদেরকে নানা ভাবে অত্যাচার উৎপীড়ন করছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রতিদিন নিত্য পূঁজা পার্বনে উলুধ্বনী দেয়া নিয়েও প্রতিপক্ষের নারী পুরুষেরা তাদেরকে নানা ভাবে তিরষ্কার করে। দেবল দেবনাথ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর ৮ জনকে বিবাদী করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসির নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন পেমই তদন্ত কেন্দ্রের এস.আই হারুন অর রশিদ।

বুধবার সংখ্যালঘু পরিবারে হামলা বিষয়ে জানতে চাইলে এস.আই হারুন অর রশিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে গ্রাম্য মাতাব্বর গণের সামনে দেবল দেবনাথকে মারপিট এবং বসতঘরে ঢুকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সাক্ষ্য প্রমানে সত্যতা মিলেছে। তবে মন্দির ভাঙ্গার ঘটনার তেমন সত্যতা মেলেনি।

আওয়ামীলীগ নেতার প্রভাবে থানায় মামলা হচ্ছেনা এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এ বিষয়টি আমার জানা নেই ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।

পাইকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য দেবলের ওপর হামলা ও বসত ঘরে ঢুকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়ার ঘটনা শুনেছি। আমি চাই তদন্তপূর্বক এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

খালিজুড়া গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আলী আহম্মদ ভূঞার সঙ্গে বুধবার বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটেছে সত্য তবে এ ঘটনাটি নিয়ে আমি কোন প্রভাব খাটাইনি, মিমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু দেবল দেবনাথ মিমাংসা করতে রাজি হয়নি। এজন্য এ বিষয়ে আমার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি। যদি মামলা করে দেবল শান্তি পায় মামলা করুক এতে আমার কোন আপত্তি নেই।

প্রতিবেশি ইউপি সদস্য কবিতা আক্তার ও তার স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, সীমানার ফিলার স্থাপনের সময় দেবলের ওপর হামলা হয়েছে এ কথা সত্য তবে বসতঘরে ঢুকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা সত্য নয়। তারা দুজনেই চান এ ঘটনার সামাজিক মীমাংসা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমারত হোসেন গাজী বলেন, দেবল দেবনাথের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি আওয়ামীলগ নেতা আলী আহম্মদের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা ব্যার্থ হওয়ায় এ বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসবি/এসপি/মার্চ ০৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test