E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রশাসন পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৪ মাসেও খোঁজ নেই 

‘আমার ছেলের লাশ হলেও ফেরত চাই’

২০১৯ মার্চ ০৭ ১৬:০৩:২১
‘আমার ছেলের লাশ হলেও ফেরত চাই’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর হতে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তুলে নেওয়া মো. জাহিদ হাছান (১৮) এর ৪ মাসেও সন্ধান মেলেনি।

প্রতিদিন ছেলে ফিরে আসার আশায় ঘরের দরজা খুলে রাখেন মা। কিন্তু রাত্রি শেষ হয় কিন্তু আদরের ছেলে জাহিদ ফেরার সময় শেষ হয়না।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটের সময় প্রশাসন পরিচয়ে ইছানগরের খালার বাড়ি থেকে তাকে ধরে কালো মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের লোকেরা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

এ ঘটনার ২দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের বড় ভাই মো. মেহেদী হাসান বিপ্লব প্রকাশ জনি বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী (যার নং-৭২০) করেন।

কর্ণফুলী থানার জিডি সুত্রে নিখোঁজ ব্যক্তির পরিচয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের উত্তর চরলক্ষ্যা গ্রামের হোসনে আরা বেগমের স্বামী মৃত মো. ইয়াছিনের পুত্র (নিখোঁজ) মো. জাহিদ হাছান ছিলেন একজন ড্রাইভার। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় শহরে এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেট কার চালাতেন তিনি।

অপরদিকে নিখোঁজের মা হোসনে আরা বেগম ও বড় ভাই মো. মেহেদী হাসান বিপ্লব জানান, গত ১৪ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটের দুইটি কালো ও সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে ৮ থেকে ১০ জন লোক তাদের খালার বাড়িতে গিয়ে জাহিদকে ডেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দেয়। যাদের সবাই গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল। কোমরে অস্ত্র ও ছিলো। কারো কোন মুখোঁশ পরা ছিলনা।

তাঁরা আরও জানান, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে বারবার পরিচয় জানতে চাওয়া হয় কিন্তু প্রশাসনের লোক বলে হুমকি দমকি ছাড়া ওই সময় তাঁরা আর কিছু জানায়নি বলে তথ্য দেন।

গাড়ি দুটি যার মধ্যে একটি সাদা ও একটি কালো পাজেরো। সে সময় দ্রুত গতিতে তাঁরা মো. জাহিদ হাছান (১৮) ও খালাতো ভাই মো. ফয়সাল কে গাড়িতে তোলে চলে যায়।

তবে যাওয়ার সময় নিখোঁজের বড় ভাই মো. মেহেদী হাসান বিপ্লব গাড়ির নাম্বারের দিকে নজর দিয়ে একটি নাম্বার মুখস্ত করে নেন বলে জানায়। চট্ট মেট্টো ও ঢাকা মেট্টো কিনা তা জানাতে না পারলেও সে জানায়, যারা প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে এসেছিলো তাদের একটি গাড়ির নাম্বার সে জানায়।

পরে জানতে পারেন তুলে নেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর অপর খালাতো ভাই ফয়সাল কে শহরের আসগর দীঘির পাড় আন্দরকিল্লায় নামিয়ে দিয়ে যায় এবং হাতে ২০ টাকা ধরিয়ে দেয়। কিন্তু তাঁরা জাহিদ কে ফেরত দেয়নি বলে জানায়।

জাহিদের খালা গুলনাহার বেগম জানান, সেদিন গভীর রাতে তাদের বাড়িতে ৫ থেকে ৬ জন লোক ঢুকে পড়ে, যাদের মধ্যে কারো মুঁখোশ পরা ছিলনা। তাঁরা জাহিদকে ডেকে তুলে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনের লোক পরিচয় দেয়। তাঁরা কালো মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।

এর পরের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশকে জানিয়ে খবর চাইলেও আজ পর্যন্ত প্রায় ৪ মাসেও কোন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জাহিদের খোঁজ দিতে পারেনি। পরিবারের লোকেরা এর সন্ধান চেয়ে র‌্যাবের কাছে ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ওই এলাকা থেকে কাউকে আটক করেনি বলে জানানো হয় তাঁদের।

জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার ফজলে রাব্বি কায়সার বলেন, কারা তাদের ধরে নিয়ে গেছে, সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ ব্যাপারে জাহিদের ভাই মো. মেহেদী হাসান বিপ্লব থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যদিও ডায়েরীতে উল্লেখ করেন, বিগত বছরের ১৪ অক্টোবর রাত ৩টা ৩০ মিনিটের সময় ইছানগর ৯নং ওয়ার্ডের খালার বাড়ি হতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি নিখোঁজ ব্যক্তি মো. জাহিদ হাছান।

যার গায়ের রং হালকা পাতলা ফর্সা ৫ফুট ৫ ইঞ্চি। সে সময় পরিহিত ছিল কালো হাত কাটা গেঞ্জি।

জানা যায়, জিডি করার ১৪ দিন পর ২৮শে অক্টোবর কোন উপায়ন্তর না দেখে সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে নিখোঁজ ছেলের মা হোসনে আরা বেগম চট্টগ্রাম উত্তর পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এতে কর্ণফুলীর উত্তর চরলক্ষ্যা শাহ ছুফি আজিজ নগর কবিরা বাপের বাড়ি হোসনে আরা বেগম র‌্যাবের কাছে ৭২৪ নং অভিযোগ পত্রে জানায়, ছেলে মো. জাহিদ হাছান বিগত ১১ অক্টোবর মুরাদপুর র‌্যাব-৭ এর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত মাদক ব্যবসায়ি অসীম কুমার রায়ের ড্রাইভার ছিলেন। র‌্যাবের সাথে মাদক ব্যবসায়ির বন্দুক যুদ্ধের ও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি।

সে সময়ে চট্টগ্রাম মুরাদপুরের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ হতে ডিএডি মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯(খ) ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার পাচঁলাইশ থানা মামলা নং-০৮। অপর দুই মামলায় উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশী পিস্তল ২টি ম্যাগজিন এর ভেতর ১৮ রাউন্ড তাজা গুলি, বিদেশী পিস্তল ৫ রাউন্ড গুলি, ৯টি গুলির খোসা, ১২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

পরে সে চাকরি ছেড়ে নিজ বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার দুদিন পর ১৪ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটের সময় প্রশাসন পরিচয়ে মো. জাহিদ হাছান’কে জোর পুর্বক তুলে নিয়ে যায় বলে দাবি পরিবারের।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে দিনে শত শত অভিযোগ পড়ে। কর্ণফুলী এলাকার এ ধরনের কোন নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। কারণ অনেক ধরনের অভিযোগ আসে। না দেখে এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছিনা।’

(জেজে/এসপি/মার্চ ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test