E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিহাতীতে শিক্ষকদের মারপিট করলেন অধ্যক্ষ! 

২০১৯ মার্চ ০৭ ১৭:৪৬:৪৮
কালিহাতীতে শিক্ষকদের মারপিট করলেন অধ্যক্ষ! 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ (বৃহস্পতিবার) উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে সকালে নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা এবং পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিক্ষকদের পিটিয়েছেন। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিষ্ঠানটি ছুটির ঘোষণা করা হলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন শুধু মাইক বাজিয়ে দায়সারাভাবে পালনের উদ্যোগ নেন অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা। এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম দিবসটি প্রতি বছরের ন্যায় যথাযথ মর্যাদায় বড় আকারে পালনের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে অধ্যক্ষ রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষ ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের মাঝে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে নাকে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে এবং উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম ছাড়াতে গেলে তাকেও অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা কিলঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়।

এ সংবাদ পেয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে শিক্ষকদের গালমন্দ করতে থাকে এবং সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম ও নাজমুস সাকিবকে কিলঘুষি মেরে আহত করে। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত হয়ে ওই অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে।

এক পর্যায়ে তারা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং শিক্ষকদের মারপিটের বিচার চায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ তড়িৎ গতিতে স্কুল ছুটি ঘোষণা করে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা একত্রিত হয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের বাড়িতে যায়। তাকে না পেয়ে তারা তার সহধর্মিনী রেখা আক্তারের কাছে বিচার প্রার্থনা করে এবং অবিলম্বে অধ্যক্ষের বহিষ্কার এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মামুদের বিচার দাবি করে।

এ ব্যাপারে আহত সহকারি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, “অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) নির্বাচনী এলাকার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলীর ছোট ভাই বিএনপি ও জামায়াতের দোসর। প্রতি বছর বড় আকারে ৭ই মার্চ পালিত হলেও এবার তিনি দায়সারাভাবে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন, এর বিরোধিতা করায় তিনি আমাকে মারপিট করেন।”
এ বিষয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মামুদের হাতে মারপিট খাওয়া সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিমের সাথে।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, “ অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা যখন নজরুল স্যারকে মারতেছিলেন তখন আমি ছাড়াতে যাই। এসময় অধ্যক্ষ স্যার আমাকে কিলঘুষি মারে। পরে অধ্যক্ষ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শুকুর মামুদকে ডেকে আনলে তিনি এসেই কোন কিছু বোঝার আগেই আমাকে এবং সহকারি শিক্ষক সাকিবকে মারপিট করেন। আমরা শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে গিয়েছিলাম। তাকে না পেয়ে তার সহধর্মিনীর কাছে বিচার দিয়ে এসেছি। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

মারামারিতে অংশগ্রহণকারী পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মামুদের মুঠো ফোনে চেষ্ঠা করলে তার সহধর্মিনী ফোনটি রিসিভ করে পরে ফোন দিতে বলে।”

আহত সহকারি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং জনপ্রিয় ইংরেজি শিক্ষক।

অপরদিকে অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) নির্বাচনী এলাকার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতিকের প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলীর ছোট ভাই ও বিএনপি ও জামায়াতমনা পরিবারের সন্তান।

৭ই মার্চকে কম গুরুত্ব দেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আমি জেনেছি। ঘটনাটি যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সে জন্য আমি ব্যবস্থা নেব।”

(আরকেপি/এসপি/মার্চ ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test