E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উপজেলা নির্বাচন

লোহাগড়ায় জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

২০১৯ মার্চ ০৭ ১৮:২১:৫২
লোহাগড়ায় জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা গঠিত। নবগঙ্গা ও মধুমতি নদী বিধৌত লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।

ইতোমধ্যে প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের সাথে কুশল, শুভেচ্ছা ও সালাম বিনিময়ের পাশাপাশি ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনী মাঠ তেমন জমে ওঠে নাই। তাই, অনেকটা নিরুত্তাপ পরিবেশেই চলছে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এ বছর চেয়ারম্যান পদে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন জমজমাট হতে পারে বলে সচেতন ভোটারদের ধারণা।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত মো.রাশিদুল বাশার ডলার, উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু (বিদ্রোহী), উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু (বিদ্রোহী) ও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও নলদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মোল্যা (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী মনোনয়নপত্র দাখিল করে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালে লাহুড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্রলীগের সদস্য ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৫ বছর লাহুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১২ বছর উপজেলা আওয়ামীগের সাধারন সম্পাদক এবং প্রায় পাঁচ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তিনি দলীয় নেতা,কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে পরিচ্ছন্ন ইমেজ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি ভোটের মাঠে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। এক আলাপচরিতায় উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু জানিয়েছেন,অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন।

অপরদিকে সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু নোয়াগ্রাম প্রাইমারী স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে স্থানীয় ছত্রহাজারী হাইস্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। তিনি খুলনা দৌলতপুর কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স করেন। তিনি ১৯৯১ সালে নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এবং দু’বার নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০৪ সাল থেকে দশ বছর উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০১৪ সালে আ’লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি ভোটের মাঠে একজন ‘ক্যারিশম্যাটিক’ প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের নজর কেড়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও পাঁচুড়িয়া গ্রামের সন্তান রাশিদুল বাশার ডলার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে এমএ পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান তিনি আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি এবং নড়াইল জেলা আ’লীগের সদস্য হিসেবে দলীয় দায়িত্ব পালন করছেন। রাশিদুল বাশার ডলার এলাকার রাজনীতিতে তেমন অবস্থান নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বিলবোর্ড ও ফেসটুনে তার সরব উপস্থিতি। অধিকাংশ ভোটারের কাছে তিনি নতুন মুখ, তথাপিও তিনি ভোটের মাঠে বেশ আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন। যেহেতু তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন,সেহেতু তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মোল্যা ওরফে জামান আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী তার সাথে রয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি নলদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ কারনে আসাদুজ্জামান দীর্ঘ কারাভোগ করেছেন। নলদী ইউপির পর পর দু’বার চেয়ারম্যান হিসেবে আসাদুজ্জামান নির্বাচিত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাধারন সম্পাদকও ছিলেন তিনি। দারিদ্র বিমোচন, সমাজ সেবা ও শান্তিতে স্বর্ণসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হয়েছেন আসাদুজ্জামান। উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৪ মার্চ লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর উপজেলায় এক লক্ষ উননব্বই হাজার ভোটার রয়েছে।

(আরএম/এসপি/মার্চ ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test