E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চোখের সামনেই অবৈধ বিলবোর্ড, প্রশাসন নিশ্চুপ!

২০১৯ মার্চ ১১ ১৪:২৯:২৮
চোখের সামনেই অবৈধ বিলবোর্ড, প্রশাসন নিশ্চুপ!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : কর্ণফুলীতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও নানা স্থাপনায় অবৈধ বিলবোর্ড-ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। এসব বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহরের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলী উপজেলার মহাসড়ক।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন যেন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। এ ধরনের বড় বড় অবৈধ বিলবোর্ড ও ফেস্টুনের আলোকউজ্জ্বল প্রতিবিম্বে মহাসড়কে যানবাহন চালকেরাও অতিষ্ট। অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দূর্ঘটনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রধান সড়ক গুলোতে সাঁটানো বিলবোর্ড ও ফেস্টুনগুলোর মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন-সংবলিত প্রচারমূলক বিলবোর্ড বেশি দেখা গেছে।

প্রতিটি বিলবোর্ডের মূল্য বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়। সে হিসেবে শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর দক্ষিণ পাড় হতে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ১৫টির ও অধিক বিলবোর্ডের মূল্য দাঁড়ায় আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৭ লাখ টাকা। আর এসব টাকা যাচ্ছে কার পকেটে! কারাই বা জড়িত এসব ব্যবসায় তার বিস্তারিত এখনো অন্দরমহলে।

জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজের) জায়গায় এসব বিলবোর্ড বসানো হইলেও ইহার নিয়ন্ত্রক কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ও সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা। ভাড়া হইতে যে টাকা আসে, তাহার বড় অংশ ঐ সমস্ত নেতারই পকেটে যায় বলে একটি সুত্র তথ্য দেন। তবে সওজের কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সহযোগী হিসাবে কিছু ভাগ পেতে পারেন।

কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই এই অবৈধ বাণিজ্য করে অনেকে আখের গুছাতে ব্যস্ত। তবে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর নির্দেশে সওজের জায়গায় বিলবোর্ডের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই এবং নূতন করে বিলবোর্ড নীতিমালা প্রণয়ণেরও কাজ চলছে বলে জানা যায়।

বৈধভাবে বিলবোর্ডের অনুমতি নেওয়া হইলেও মেয়াদ বাড়ানোর সময় নানা প্রকারে অসাধুতা অবলম্বন করা হয়। একদিকে অনুমতির তোয়াক্কা না করা ও অন্যদিকে মেয়াদ বাড়ানোর সময় অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া। এই উভয় প্রকার দুর্নীতির কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একইভাবে এসব সংস্থা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ উপজেলা পরিষদে তাদের অর্থের সংকট প্রকট। অর্থের অভাবে অনেক প্রকল্প ও কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছে না কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন। বিলবোর্ড হতে যথাযথভাবে অর্থ আদায় করতে পারলে স্থানীয় সরকারের এসব সংস্থা কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হতে পারে। কেননা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বারবার নিজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে বিলবোর্ডগুলি দেখা শোনার জন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা দুইটি কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এক. অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্যের সহিত তারা নিজেরাও কোন না কোনভাবে জড়িত। দুই. তারা অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনাকারী তথা দলীয় নেতা-কর্মীদের ভয় পাচ্ছেন। অথচ তারা যখন সরকারি বেতন-ভাতা নিচ্ছে, তখন এসব দেখভালের দায়িত্বও তাদের উপরই বর্তায়।

তবে এসব বিষয়ে কোন সুত্র না পেলেও মইজ্জ্যারটেক মোড়ে টুল প্লাজার বিপরীতে খালি বড় বিলবোর্ডে একটি জিপি নাম্বার পাওয়া যায়। টু-লেইট কিংবা বিজ্ঞাপনে আগ্রহীরা যোগাযোগ বলে নাম্বারটি দেয়া। গ্রাহক সেঁজে ওই নাম্বারে যোগাযোগ করলে তারা আগ্রাবাদ যোগাযোগ করতে বলেন। প্রতি উত্তরে আগ্রাবাদ কোথায় যোগাযোগ করবো সেটা জানতে চাইলে তারা জানায়, যারা বিজ্ঞাপন দেয় তারা জানে কিভাবে কোথায় আসতে হয় বলে লাইন কেটে দেন। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, এসব অবৈধ বিলবোর্ডের কাজকর্ম কিংবা ব্যবসাও অনেকটা ভিন্ন।

শিকলবাহার করিম ও মোস্তাক মুন্না বলেন, এভাবে ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে উপজেলার সৌন্দর্য নষ্ট করা ঠিক নয়। অনেক বিলবোর্ড বিদ্যুৎ এর খুটির উপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

কর্ণফুলীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুজুকি, বিএসআরএম, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, কেওয়াই স্টিল, সজিব কর্পোরেশন এর মেক্স স্টপ ফায়ার, এসআলম সিমেন্ট, ডায়মন্ট সিমেন্ট, ইএসআরএম, কেএসআরমের সৌজন্য কিছু ট্রাফিক পুলিশের ব্যানার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে রয়েছে। পুরা কর্ণফুলীর মহাসড়কে কতটা বিলবোর্ড রয়েছে তার তথ্য উপজেলায় ও পাওয়া যায়নি।

দেখা যায়, প্রতিটি সড়কের ডিভাইডার, মোড়, বাসার ছাদ, দেয়াল ও গাছ সহ বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এর কোনোটি স্টিলের ঝালাই করা বড় বোর্ডে লাগানো আবার কোনোটি কাঠ দিয়ে তৈরি। এসবের বেশির ভাগই অনুমতি ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে বলে উপজেলা সুত্রে জানা যায়।

চরপাথরঘাটা মাদ্রাসা পাড়ার শিক্ষক আলমগীর বলেন, অনুমতি না নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে এসব বিলবোর্ড কারা বসাচ্ছেন। প্রশাসনের অবশ্যই তা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘এটি আমাদের নজরে এসেছে। এসব অবৈধ বিলবোর্ড, ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টার অপসারণে ইউএনও সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’

প্রচলিত আইন হলো, যেকোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি জায়গায় বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ড অথবা সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কতৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এরপর স্থাপিত বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ডের বিপরীতে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্ধারিত হারে কর দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইন মানছেনা বলে বৈধ বিলবোর্ডের চেয়ে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা বেশি। বছরের পর বছর ধরে এসব অবৈধ বিলবোর্ড বৈধ কাঠামোর আওতায় না আসার কারণে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা মতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের অংশ হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে এসব অবৈধ বিলবোর্ড-ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করা হবে।’

বলাবাহুল্য, বিলবোর্ড রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। তবে অনেক সময় অপরিকল্পিতভাবে বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে ঝড়-বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পথচারীদের জন্য জীবন-মরণেরও প্রশ্ন হয়ে ওঠে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test