E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিগঞ্জে চুরির অভিযোগে মামা-ভাগ্নেকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা

২০১৯ মার্চ ১৩ ১৫:৩৪:৫২
কালিগঞ্জে চুরির অভিযোগে মামা-ভাগ্নেকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ক্রিকেটের বল দেয়ালে লেগে প্লাস্তার ভেঙে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় সীমানার বেড়া ভেঙে ফেলে একই পরিবারের তিনজনকে মারপিট করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনার পর রাত সাড়ে সাতটার দিকে পরে আবুল খায়ের ও তার ভাগ্নে আরিফুলকে চোর সাজিয়ে নলতা রওজা মোড় থেকে ধরে নিয়ে গণধোলাই দিয়ে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

কালিগঞ্জ উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের আয়েশা খাতুন জানান, তারা শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের কলবাড়ি গ্রামে বসবাস করতো। তার স্বামী আবুল খায়ের বাবুকে এক বছর আগে কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রউফের কাছ থেকে ১৪ শতক জমি কিনে দিয়ে তাতে একতলা বাড়ি বানিয়ে দেন শ্বশুর জবেদ আলী। বর্তমানে তাদের বাড়িতে গ্রীল লাগানোর কাজ চলছে। কিছুদিন আগে প্রতিবেশী বাবর আলী গাজীর ছেলে রুহুল আমিন তাকে কু’প্রস্তাব দিলে তিনি রাজী না হওয়ায় তাকে ও তার স্বামীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় রুহুল আমিন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ায় রুহুল আমিন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

আয়েশা খাতুন জানান, সোমবার দুপুরে তাদের বাড়ির পাশে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছিল। খেলা চলাকালিন ক্রিকেটের বল তাদের বাড়ির দেয়ালে লেগে প্লাস্টার খসে পড়ে। প্রতিবাদ করায় তাদের সঙ্গেহ বচসা হয় ছেলেদের। তবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলেও বিকেল চারটার দিকে রুহুল আমিনসহ কয়েকজন পূর্বের সূত্র ধরে তাদের বাড়িতে এসে ঘেরা বেড়া তুলে দিয়ে তাকে, তার স্বামী ও বেড়াতে আসা খালা শ্বাশুড়িকে মারপিট করে। চলে যাওয়ার আগে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়ে যায় রুহুল আমিন।

শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি গ্রামের ও যাদবপুর ছিদ্বিদকীয়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র আরিফুল ইসলাম (১৬) জানান, চৌবাড়িয়াতে ওয়াজ মাহফিল শুনতে সে সোমবার সকালে মামা আবুল খায়েরের বাড়িতে আসে। বাড়িতে গ্রীল বসানোর জন্য মিস্ত্রীদের কথামত সোমবার সন্ধ্যার পর তারা দু’জনে নলতা বাজারে সেলাই রেঞ্জ কিনতে যান। রাত সাড়ে সাতটার দিকে রেঞ্জ কিনে রওজা মোড়ে এলে নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ইউসুফ আলীসহ কয়েকজন তাদেরকে ধরে নিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে কলেজের পাশে একটি ঘরে নিয়ে বেধড়ক পেটায়।

পরবর্তীতে অহীদ মীর ও অদুদ মীর তাদেরকে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করলে তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রাত ১১টার দিকে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক তৌহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে তাদের অবস্থা দেখে হাসপাতালে ভর্তি না করেই থানায় ফিরে যান। স্থানীয়রা তাদেরকে প্রথমে নলতা হাসপাতালে ও পরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তাকে (আরিফুল) ছেড়ে দিলেও মামা খায়েরকে তিনটি চুরির মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

আয়েশা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী আবুল খায়ের ওরফে বাবু বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান। ধর্মান্তরিত করিয়ে তাকে বিয়ে করায় বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে খায়েরকে চৌবাড়িয়াতে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। তার স্বামী বর্তমানে ব্যাটারী চালিত ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ক্রিকেট খেলার বল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মারপিটের পর তাদেরকে এলাকা ছাড়া করতে তার স্বামী খায়েরকে চোর আখ্যায়িত করে রুহুল আমিন ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ, অহীদ মীর ও অদুদ মীরকে দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে ম্যানেজ করে মিথ্যা চুরির মামলায় জেলে পাঠিয়েছে।

তবে থানা লক আপে থাকা আবুল খায়ের জানান, তার বিরুদ্ধে দেশের কোন থানায় মামলা নেই। পুলিশ নির্যাতনকারিদের দারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে চালান দিচ্ছে।

চৌবাড়িয়া গ্রামের রুহুল আমিন জানান, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে আবুল খায়েরের সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছিল। পরবর্তী কোন মারপিটের বিষয়টি তার জানা নেই।

নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডনেসিয়াল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ইউসুফ আলীর সঙ্গে মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তবে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মনির হোসেন বলেন, সোমবার রাত ১১টার দিকে খবর পেয়ে তিনি ও উপপরিদর্শক তৌহিদসহ কয়েকজন পুলিশ নলতায় জান। ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ, অহীদ মীর ও অদুদ মীরসহ কয়েকজন আবুল খায়ের ও তার ভাগ্নেকে চোর সন্দেহে অমানুষিক নির্যাতনের পর মুমুর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখার বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করে চলে আসেন। তবে সেখানে তারা চুরি করেছে এমন কোন সত্যতা মেলেনি।

তবে তার বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় একটি ধর্ষণ, একটি চুরি, সদর থানার একটি চুরি ও ঢাকার ধামরাইল থানায় একটি চুরির মামলা আছে দাাবি করে তিনি বলেন, শ্যামনগরের চারজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ মার্চ পিটিশনের ভিত্তিতে এক বছর আগে সাংসদ জগলুল হায়দার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেন। এরপর সে কালিগঞ্জের চৌবাড়িয়ায় চলে আসে।

সাংসদ জগলুল হায়দার মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি কালিগঞ্জ থানাকে অবহিত করার পর ভাগ্নে আরিফুলকে ছেলে দিয়ে আবুল খায়েরকে বিচারাধীন তিনটি চুরির মামলা দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test